শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাতৃদুগ্ধ পান

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাতৃদুগ্ধ পান

মানবসন্তান পৃথিবীতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ তাআলা দয়াপরবশ হয়ে মায়ের স্তনে দুধের ব্যবস্থা করে দেন। শিশুর যে বয়সে যে পরিমাণ ও গুণগত মানের দুধ প্রয়োজন, সৃষ্টিকর্তা সেভাবেই তা মাতৃদুগ্ধে দিয়ে দেন। তাই মায়ের দুধই শিশুর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ খাদ্য ও পানীয়। শিশু ভূমিষ্ঠের আধা ঘণ্টার মধ্যে তাকে মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হয়। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে স্তন্যদান করানো উচিত। মাতৃদুগ্ধ শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সেরা খাবারই শুধু নয়, বরং তা নবজাতকের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত একটি হক বা জন্মগত অধিকার। পবিত্র কোরআনে হজরত মুসা (আ.)-এর শৈশবকালীন অবস্থায় মাতৃদুগ্ধ পানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মুসা-জননীর অন্তরে আমি ইঙ্গিতে নির্দেশ করলাম যে ‘তুমি শিশুটিকে স্তন্যদান করতে থাকো।’ (সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭)

Please Subscribe Us!

শিশুর শারীরিক গঠন ও শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য ও পুষ্টির মাধ্যমেই প্রতিটি শিশুর স্বাস্থ্যগঠন, বর্ধন ও বিকাশ সংগঠিত হয়, এমনকি জন্মের পরেও শিশু মায়ের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। পবিত্র কোরআনে নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায়, তার জন্য জননীরা তাঁদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাবেন। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাঁদের ভরণপোষণ করা।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৩)

Please Subscribe Us!

শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই শিশুকে পরিপূর্ণ পুষ্টি জোগায় এবং এতে দ্বিতীয় ও পরবর্তী বছরে তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হয়। জন্মের পর দুই বছর বয়স পর্যন্ত এবং প্রয়োজনে তারও বেশি সময় ধরে মায়ের বুকের দুধ শিশুর পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাতৃগর্ভে সন্তানধারণ, প্রসব-পরবর্তী মায়ের বুকের দুধপানের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৪) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সন্তানকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লাগে ৩০ মাস।’ (সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫)

শিশু জন্মের পর চিৎকার করে জানায় পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের কথা, ইসলামপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার ও প্রয়োজনের কথা এবং পাশাপাশি সর্বজনস্বীকৃত জননীও জানান মা হিসেবে তাঁর স্বভাবসুলভ আচরণের কথা। ক্ষুধা লাগলে শিশু কান্না করবে, আর শিশু যতবার ক্ষুধায় কাঁদবে, ততবারই মায়ের দুধ খাওয়ানো যায়। বুকের দুধ শিশুর মুখে তুলে দিয়ে মা যেমন পরম স্বস্তিবোধ করেন এবং তেমনি শিশুটিও মাতৃদুগ্ধ পান করে চরম তৃপ্তিবোধ করে। মা মনে করেন তিনি সন্তানের প্রতি যথার্থ নজর দিতে পারছেন। এর ফলে মা ও শিশুর রক্তের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। মায়ের বুকের দুধ শিশুর শারীরিক গঠনে বিরাট প্রভাব রাখে। যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি ভালো হয় এবং মা ও শিশুর মধ্যে এক বিশ্বস্ত ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

মাতৃদুগ্ধ শিশুর মস্তিষ্ক গঠন, যথাযথভাবে বেড়ে ওঠা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিতে সহায়তা পালন করা ছাড়াও অন্যান্য রোগ নিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রতিষেধক এবং মাতৃদুগ্ধের খাদ্য উপাদানে শিশুর বুদ্ধিদীপ্ততা ও চোখের তীক্ষ্ণতা বা জ্যোতি বাড়ায়। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে মায়ের অল্প সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ ঝুঁকি থাকে না। তাই স্তন্যদান শরিয়তসম্মত একটি প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। যে মা নবজাতককে দুধ পান করান, তাঁর জন্য মাহে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী নারী থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসাই)

প্রকৃতই শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই—এ কথাটি সমাজে বহুল প্রচারিত হলেও কর্মব্যস্ত জীবনে নিজেদের অসচেতনতার কারণে অনেক পরিবারে নবজাতক মাতৃদুগ্ধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পায় না। তাই মা ও শিশুর জন্য কয়েকটি নীতিমালা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। মায়ের দায়িত্ব তাঁর শিশুকে বুকের দুধ পান করানো এবং স্তন্যদানের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত না করা। প্রত্যেক মা তাঁর শিশু জন্মের পর থেকে দুই বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অবিরামভাবে বুকের দুধ পান করাবেন। শিশুকে দুই বছর বুকের দুধ খাওয়ানো হলে বাবা-মা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন—শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি কী খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং বিকল্প সুবিধা-অসুবিধাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। অবশ্য ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধই শিশুর আদর্শ খাদ্য। ইসলামের এ প্রাকৃতিক বিধান মেনে চললে মা ও শিশু উভয়ই নানা রকমের শারীরিক জটিলতা থেকে রক্ষা পাবে।

Please Subscribe Us!

সব গর্ভবতী মাকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বুকের দুধ দেওয়ার আগ্রহ ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মা ও শিশুর অপুষ্টি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। তাই প্রসব-পরবর্তী মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সুনিশ্চিত করতে হবে, যেন তাঁর শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ মাতৃদুগ্ধ পায়। এ জন্য মায়েদের মানসিকতার প্রস্তুতিও প্রয়োজন। মুসলিম পরিবার ইসলামের নির্দেশনা প্রতিপালনে মাকে সহযোগিতা করবে। মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর জন্য চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা মাকে বিশেষভাবে উৎসাহ দিতে পারেন। মা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন এবং উপভোগ করেন স্রষ্টাপ্রদত্ত পরিপূর্ণ মাতৃত্বের গৌরব!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

nine − 7 =