আপগার স্কোর কি?
জন্মের পর পরই নবজাতকের সার্বিক অবস্থা অনুধাবনের জন্য যে পর্যবেক্ষন করা হয় তার সংখাবাচক প্রকাশই হলো আপগার স্কোর (APGAR score)। যে সকল শিশু জন্মের পরপরই শ্বাস কষ্ট নিয়ে জন্মায় তাদের জন্মের সাথে সাথে এবং ৫ মিনিট পর আপগার স্কোর করে দেখা হয়। অন্য সকল স্বাভাবিক শিশুকেও আপগার স্কোর করে দেখা হয়।
ইংরেজি ৫টি অক্ষর ‘এ’ ‘পি’ ‘জি’ ‘এ’ ‘আর’ এর সমন্বয়ে APGAR শব্দটি গঠিত। A দিয়ে এপিয়ারেন্স(Appearance) বা বাহ্যিক দর্শন, গায়ের বর্ণ (নিল না স্বাভাবিক) P দিয়ে পালস(Pulse) বা নাড়ীর গতি(হৃদ স্পন্দন) G দিয়ে গ্রিমেস(Grimace) – ব্যথা বা খোচা লাগার পর বাচ্চার কান্নাকরা/মুখভঙ্গী A দিয়ে একটিভিটি(Activity) বা হাত-পা নাড়ার ক্ষমতা, R দিয়ে রেসপিরেশন(Respiration) বা শ্বাস প্রশ্বাসের অবস্থা নির্দেশ করা হয়। এই ৫টি বিষয়ের প্রতিটিকে আবার ০,১,২ এভাবে ভাগ করে নিরুপন(assess) করা হয়। ২ পেলে বাচ্চা ভালো আছে আর শুন্য পেলে খারাপ। এভাবে মোট আপগার স্কোর ১০ এর মধ্যে কেউ যদি ৮-১০ পায় ধরে নেয়া হয় সে খুবই সুস্থ্য আছে আর ৪-৭ পেলে মোটামূটি ভালো। কোনো বাচ্চার আপগার স্কোর ০-৩ থাকলে পরিস্থিতি আশংকাজনক বলে ধরে নেয়া হয়।
আমাদের দেশে এখন শতভাগ ডেলিভারি হাসপাতালে করা সম্ভব হয়নি। তাই বাসায় শিশু জন্মগ্রহণ করলে আপগার স্কোর দেখা কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতাল কিংবা বাসায় যেখানেই শিশু জন্মগ্রহণ করুক নবজাতকের কিছু বিষয় খুব মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুন প্রয়োজনে ভবিষ্যতের জন্য সেগুলো একটা খাতায় লিপিবদ্ধ করুন। যেমন নবজাতক জন্মের পর তার পায়খানা প্রসাবের রাস্তা আছে কিনা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করুন, থাকলে সেগুলো শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করুন।
জন্মের কতঘণ্টা পর নবজাতক পায়খানা এবং প্র্রসাব করেছে সেটা লিপিবদ্ধ করুন। পায়খানার রং কেমন সেটাও লিপিবদ্ধ করুন। নবজাতক দৈনিক কতবার পায়খানা প্রসাব করে এবং পায়খানা প্রসাব করতে নবজাতকের কষ্ট হয় কিনা সেগুলো লিপিবদ্ধ করুন। জন্মের পর শিশুর ওজন কত ছিল সেটা যত্নসহকারে খাতায় তুলে রাখুন। জন্মের কত সময় পর বাচ্চা কেঁদেছে সেই সময় এবং মায়ের ব্যথা ওঠার কতক্ষণ পর ডেলিভারি হয়েছে সময়গুলো খুব সুন্দর করে খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখুন। ছেলে নবজাতক হলে তার অন্ডকোষ আছে কিনা খেয়াল করুন এবং পরিষ্কার হাত দিয়ে চেক করে দেখেন অন্ডকোষ খালি না এতে টেসটিস(Testis) আছে কিনা। এই সকল বিষয়ে কোনো ত্রুটি পেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। কোনো ত্রুটি না পেলে লিপিবদ্ধ করা তথ্যগুলো খুব যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন। কারণ নবজাতকের অনেক রোগ জন্মের পর বোঝা না গেলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। তখন এই সকল তথ্যগুলো চিকিৎসকেরা পিতা-মাতাদের কাছ থেকে জানতে চান। কিন্তু বেশিরভাগ পিতা-মাতাই এই সকল তথ্যগুলো সঠিকভাবে চিকিৎসকের কাছে দিতে পারেন না। যার ফলে চিকিৎসকের রোগ নির্ণয় করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং শিশুর ভোগান্তি বাড়ে। মনে রাখবেন, এই সকল সঠিক তথ্যের জন্য আপনার শিশুর ভোগান্তি বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
গণ সচেতনতায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড