নবজাতক বা শিশুদের ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশন (নাড়িতে খাদ্য সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া) একটি মারাত্নক রোগ। তবে সময়মতো যদি এই রোগের চিকিৎসা করা হয় একটি শিশুকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরানো সম্ভব। তো চলুন আমরা জেনে নিই কিভাবে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে।
০১। ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশন কী?
শিশুদের ইনটিসটাইনাল অবসট্রাকশন হচ্ছে পেটের ভেতর নাড়িতে খাদ্য সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত আমরা যে খাবার খাই তা নাড়ির চলাচলের মাধ্যমে ওপর থেকে নিচে নামে এবং হজম হয়। যদি কোনো কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটাকে অবসট্রাকশন বলা হয়। নানাবিধ কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
মল অত্যন্ত আঠালো হয়,
মলদ্বার যদি শক্ত হয়ে যায়,
জন্মের পর যদি নাড়ি ঠিকমতো বৃদ্ধি না পায়,
অনেক সময় নাড়ি জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস থাকে,
আবার দেখা যায় জন্মের পর হয় তো শিশুটির মলদ্বারই তৈরি হয়নি ইত্যাদি। সাধারণত নাড়ি যে জিনিসের সঙ্গে আটকানো বা লাগানো থাকে, তাকে বলা হয় ‘মেজেনটি’। যদি এতে কোনো ধরণের ছিদ্র থাকে তাহলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যদি জন্মগতভাবে হার্নিয়া থাকে, পেটের পেশিতে যদি কোনো ছিদ্র থাকে- তখন দেখা যায় নাড়ি হয়তো এতে আটকে গেছে তখনো এই সমস্যা হয়ে থাকে। নাড়ির কোনো অংশ যদি প্যাঁচ লেগে যায়, তখন তাকে আমরা বলি ভলভোলাস। আর এই ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে যদি নাড়ির একটি অংশ আরেকটির মধ্যে ঢুকে যায় তাহলেও এই সমস্যা দেখা যায়।এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা বমি করলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়। আর তখন নাড়ি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে শরীরে বেশি ইনফেকশন হলেও এই সমস্যা হতে পারে।
০২। রোগের লক্ষণগুলো কি কি?
সাধারণত এই রোগের একটি মূল উপসর্গ হচ্ছে পেটে ব্যথা হবে। যেসকল শিশুরা কথা বলতে পারে না, তারা সাধারণত এই ব্যথায় বিরক্তি বোধ করে। শিশুর বমি হয়, আর এ ক্ষেত্রে সবুজ রঙের বমি হয়ে থাকে। সাধারণত শিশুর পেট অনেক ফুলে যায়। পায়খানাও বন্ধ হয়ে যায়।
০৩। কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত?
শিশুর জন্মের পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি বোঝা যায় যে শিশুটির মলদ্বার নেই, সবুজ বমি হচ্ছে অথবা পেট ফুলে যাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে অবশ্যই নিতে হবে।
০৪। প্রতিকার কি?
প্রথমেই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ সময় চিকিৎসকরা শিশুটির মুখ দিয়ে খাবার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। কারণ মুখ দিয়ে খাবার দিলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। স্যালাইন দিতে হবে। আর নাকে নল দিয়ে খাবার বের করতে হবে। পেটের নাড়িকে বিশ্রাম দিতে হবে। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে যে কী কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ এক্স-রে, আলট্রাসোনোগ্রাম করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। শিশুর কী সমস্যা তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে ও বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। তবে ইন্টারসাজেশন থাকলে পেট কাটতে হবে, পেট কেটে পেট দিয়ে মলদ্বার তৈরি করে দেওয়া হয়, আর যদি নাড়ির কোনো অংশ পচে যায় তখন সেই পচা অংশ কেটে ফেলে দিতে হয়। অন্যদিকে যদি নাড়ি জোড়া লেগে থাকে তাহলে ম্যানুয়ালি গরম মব দিয়ে পেটে উপর কমপ্রেশন দিলে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয় ।
০৫। জন্মগতভাবে হাসফান ডিজিজ
অনেক সময় জন্মগত ত্রুটির ফলে হাসফান ডিজিজ বা পায়খানার রাস্তা যদি তৈরি না হয় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।সাধারণত এসব সমস্যায় জন্মের পর পরই পেট দিয়ে মলদ্বার বানিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শিশুটি যখন একটু বড় হয় তখন অপারেশন এর মাধ্যমে মলদ্বারের নির্দিষ্ট স্থানেই মলদ্বার তৈরি করে দেওয়া হয়। আর পেটে তৈরি করা আগের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাসফান ডিজিজ এর চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে সফলভাবে করা হচ্ছে।