ডিপিআরসি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব লিঃ এর পথ চলা
রিহেব-ফিজিও থেরাপি বলতে আমরা বুঝি,“সকল বয়সের মানুষের সুস্বাস্থ বজায় রাখা, রোগীদের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করা”। এটি এমন একটি পেশা যা একজন রোগীকে তার রোগ পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে উৎসাহিত করে, যাতে সে স্বাভাবিক কর্মক্ষম থাকতে পারে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে রিহেব-ফিজিও চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় ৯৯% রোগী বিনা অপারেশনে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। কিছুদিন আগেও এই প্রকার চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের বিত্তশালীরা দেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা গ্রহণ করতে যেত। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার এই খাতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক রিহেব-ফিজিও ও পূনর্বাসন চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশের মানুষের মধ্যে এই প্রকার চিকিৎসা সেবার জন্য দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
এশিয়ার বৃহত্তম, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শ্যামলী ক্লাব মাঠ, সমবায় বাজারের ঠিক বিপরীতে নিজস্ব ভবনে (১২/১ রিং রোড, শ্যামলী)এ অবস্থিত ডিপিআরসি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক ল্যাব: লি:। সময়টা ২০০৪ সাল আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতায় অবিচল এই স্লোগানকে ধারণ করে ডা. মো: সাফিউল্যাহ্ প্রধানের হাত ধরে এই ডিপিআরসি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যন্ত্রপাতি, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল দ্বারা পরিচালিত , রিহেব-ফিজিও ও পূনর্বাসন চিকিৎসায় স্বনামধন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে অপারেশন বিহীন হাঁটু, কোমর, ঘাড়, মেরুদন্ড ব্যাথার চিকিৎসা সহ নানাবিধ চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস, স্পান্ডালিসিস, অস্ট্রিওআর্থ্রাটিস, হাড় ও কোমর জোড়ার ক্ষয়, স্ট্রোকজনিত প্যারালিলিস ও স্ট্রোক-পরবর্তী চিকিৎসা অপারেশনের পর হাত-পা শুকিয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
পেইন প্যারালিলিস ও রিহ্যাব-ফিজিও চিকিৎসায় বিশেষায়িত অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া ডিপিআরসি হাসপাতালের মূল বৈশিষ্ট্য। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পেইন প্যারালিসিস রিহেব-ফিজিও কেন্দ্র যেখানে বিশেষায়িতভাবে অত্যাধুনিক কাপিং থেরাপী দেওয়া হয়। এছাড়াও লেজার, ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, ড্রাই নিডলিং, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আলট্রাসাউন্ড, অতি লোহিত রশ্মি, রোবোটিক গেট ট্রেইনার, আকুপাংচার ও বিভিন্ন ধরণের ব্যায়ামের মাধ্যমে সু-চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য পুরুষ এবং নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ফিজিওথেরাপিষ্ট ও টেকনিশিয়ান । বিভিন্ন বিভাগে সেবাসমূহের মধ্যে ডিপিআরসি হাসপাতালে রয়েছে পেইন ক্লিনিক, প্যারালিসিস রিহ্যাব সেন্টার, আর্থ্রাইটিস সেন্টার, রিহেব-ফিজিও সেন্টার, বাতজ্বর ও বাতরোগ সেন্টার ইত্যাদি।
এ ছাড়া রিহ্যাব-ফিজিও, নিউরো মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হৃদরোগ, মানসিক রোগ, জেনারেল প্রাকট্রিশনার, গাইনোকোলজি, মেডিসিন, আলট্রাসাউন্ড, চর্ম ও যৌন রোগ, ইএনটি, জেনারেল মেডিসিন, শিশু ও কিশোর রোগ, ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি, রিজেনারেটিভ মেডিসিন ইত্যাদি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখেন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোর দুই ধরণের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে ২০ টি বেড ও ২০ টি কেবিন রয়েছে। বেড ভাড়া ও খাবার সহ দৈনিক ১৫০০/-, সাধারণ কেবিন ভাড়া ২,০০০/-, ভি.আই.পি কেবিন ভাড়া ৩-৪ হাজার টাকা। রোগীদের আর্থিক-সামর্থের দিক মাথায় রেখে সু-চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৩০% পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে ২৪ ঘন্টা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও ২৪ ঘন্টা ইনডোর ফার্মেসী।
ডায়াগনষ্টিক ও ইমেজিং সার্ভিসিং এ অত্যাধুনিক অটোমেটেড মেশিনারিজের মাধ্যমে অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট দ্বারা বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করা হয়। এখানে রয়েছেন হরমোন, আর্থ্রাইটিস, ইনফারর্টিলিটি, প্যারালিসিস পরীক্ষাসহ সব ধরণের মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষার সুবিধা। এছাড়া ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার মার্কার, যক্ষা, বাত-ব্যাথাসহ সবধরণের হেমাটোলজি, সেরোলজি, ইমোনোলজি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, হিস্টোপ্যাথলজি, সাইটোলজি এবং সব ধরনের বায়োকেমিস্ট্রি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্ভুল রিপোর্ট দেওয়া হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান প্রভৃতি পরীক্ষা নিরীক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এই পর্যায়ে আমরা কথা বলছি, বাংলাদেশের স্বনামধন্য বাতব্যাথা, প্যারালিসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডিপিআরসিএ-র চেয়ারম্যান ডা. মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান – এর সাথে।
মেডিকেল বিডি: প্রশ্ন-১:
ডিপিআরসি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পিছনে আপনি কিভাবে নিজেকে নিয়োজিত করলেন?
(ডা. মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান) উত্তর:
আমি চিকিৎসা পেশার প্রথমে, ২০০৪ সালে চাকুরীর মাধ্যমে শুরু করি। আমি মূলতঃ ব্যাচলর অব ফিজিওথেরাপীর উপর ডিগ্রী নিয়েছি জাতীয় অর্থোপেডিক ও পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে, যা বর্তমানে জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল নামেই পরিচিত। এটি একটি ইন্সটিটিউট যেখানে সরকার মেডিক্যাল সাইন্স ও অর্থোপেডিকের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রী ও পোস্ট গ্রাজুয়েটসহ বিভিন্ন ডিগ্রী দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে পরবর্তীতে এদেরকে পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে এই কোর্সটি চালু করেন । এখানে ০৪ বছরের কোর্স ও ০১ বছরের ইন্টার্নি দেওয়া হয়। যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির আওতাধীন।
যার ৪র্থ ব্যাচের ছাত্র আমি এবং সেখান থেকে পাস করার পর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে লেকচারার অব ফিজিওথেরাপী উপর কর্মজীবন শুরু করি এবং তখন থেকেই আমার ভিতর বাসনা জাগে স্পেশাল ফিজিওথেরাপীর উপর একটি হাসপাতাল ও রিহ্যাবিলেটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার। কাজের পাশাপাশি তখন ডিপিআরসি নামক একটি ছোট্ট প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করি। এর মূল কারণ আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবায় সরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রাইভেট সেক্টরে ফিজিওথেরাপীর উপর তেমন কোন ভাল প্রতিষ্ঠান ছিল না, যেখান থেকে মানুষ ভাল সেবা পাবে। বর্তমানে ডিপিআরসি একটি প্রাইভেট লিঃ প্রতিষ্ঠান। আমাদের মূল উদ্দেশ্য প্রাইভেট সেক্টরে মানুষ যেন খুব ভাল সেবা পায়। বর্তমানে দেশের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ শারীরিক অক্ষমতায় ও বিভিন্ন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত এবং এই সকল শারীরিক অক্ষমতার মূল চিকিৎসাই হচ্ছে রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা।
বিশ্বে এই রিহেব-ফিজিও চিকিৎসার চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলছে। সেক্ষেত্রে ডিপিআরসি বর্তমানে স্পেশাল ফিজিওথেরাপী ও পূনর্বাসন চিকিৎসায় দেশের পাশাপাশি বিদেশে রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, সাধারণত দেশের উচ্চবিত্তরা উন্নত রিহে-ফিজিও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেমন: ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর- সহ বিভিন্ন দেশে চলে যেতেন। যার ফলে স্বাস্থ্যখাতে আমাদের দেশের টাকা বিদেশে চলে যেত। কিন্তু বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে ১৯ সালে এর প্রবণতা অনেক কমেছে। যারফলে স্বাস্থ্যখাতে দেশের মুদ্রা দেশেই থাকছে। ডিপিআরসি হাসপাতাল বর্তমানে দেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর- সহ বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসকদের মাধ্যমে রোগীর রেফার পেয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বসবাসরত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সুচিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে আমরা তাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। যা কিনা চিকিৎসার গুণগতমান ও চিকিৎসা ব্যয় সংকোচনের জন্য অর্জন করা সক্ষম হয়েছে।
মেডিকেল বিডি: প্রশ্ন-২:
ডিপিআরসি হাসপাতাল এবং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
(ডা. মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান) উত্তর:
যেহেতু বর্তমানে ডিপিআরসি হাসপাতাল একটি প্রাইভেট লিঃ প্রতিষ্ঠান, ২০০৪ সালে ডিপিআসি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয় থেকে আমরা সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের অনুমোদন নিয়েছি (ডিজি হেল্থ) কর্তৃক এবং আমাদের নিজস্ব ফার্মেসী আছে যা (ডিজি ড্রাগস)- এর অনুমোদিত। এর পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক ল্যাব রয়েছে। যেখানে আর্ন্তজাতিক মান সম্মতভাবে সব রোগের পরীক্ষা করা হয়। মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের দেশের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক ল্যাব এরমাধ্যমে বিভিন্ন টেষ্ট অনেক কম খরচে করা যায়, বিধায় বর্তমানে বিশেষ করে মধ্যপাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের কর্মরত শ্রমিক ও ব্যাক্তিগণ
আমাদের নিকটে আসেন এবং অনেক কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা পায় বলে আমারা তাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। উদাহরণে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণত একটি এমআরআই করতে ৪০ – ৭০ হাজার টাকা ব্যায় হয়, যা আমাদের দেশে করতে ব্যায় হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এছাড়া আমাদের জেনারেল চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে যারা ২৪ ঘন্টা ইনডোর ও আউটডোর সেবায় নিয়েজিত আছেন। এখানে যে কেউ মাত্র ৫০ টাকায় একজন রেজিষ্টার্ড ডাক্তার দেখাতে পারেন।
আমরাই বাংলাদেশে একটি স্পেশাল সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছি যা কিনা, প্রতি শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্রী রোগী দেখা হয় এবং এতে রোগীর যদি কোন পরীক্ষা করতে হয় তাতে ৩০% থেকে ৫০% ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। এই ফ্রী মেডিকেল সেবা গত ১ বছর যাবত চালু আছে। আমরা সরকারি যে কোন প্রোগ্রাম, হেল্থ ক্যাম্প, সিম্পেজিয়াম ও সেমিনার নিয়মিত করে থাকি। অনলাইনে আমাদের হাসপাতালে নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবার উপর সচেতনতা মূলক প্রচারণা করে চলছি। আমাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা হচ্ছে – ডিপিআরসি যে মোটো বা গতি পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করেছিল অর্থাৎ (বাতব্যাথা, পেইন প্যারালিসিস এবং অক্ষমদের পূনর্বাসন চিকিৎসা করার জন্য) সেটাকে আরো গতিশীল আরো অত্যাধুনিক ও আরো বিশাল পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
যার ফলশ্রুতিতে আমারা ডিপিআরসি ইনস্টিটিউট অব হেল্থ সায়েন্স নামক একটি ইনস্টিটিউট করার পরিকল্পনা করেছি যা চলতি বছরের শুরুতেই করতে চলেছি। এখান থেকে জনগণ যেন ভাল রিহেব-ফিজিও সেবা পায় এটাই আমাদের লক্ষ্য আর সেবার ব্যাপারে কোয়ালিটিকে আমরা প্রথম প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এর পাশাপাশি আমাদের জেনারেল হাসপাতাল সেবাকে আরে বড় ও আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে সেবার মান অক্ষুণ্য রেখে রোগীদের কিভাবে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে শত ভাগ সুস্থ্য করে তোলা যায় আর এটাই আমাদের মূলমন্ত্র এবং ভবিষৎ চ্যালেঞ্জ।
মেডিকেল বিডি: প্রশ্ন-৩:
আপনাদের সেবা এবং সেবার মান সম্পর্কে বলুন?
(ডা. মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান) উত্তর:
আমাদের রয়েছে অত্যাধুনিক রিহেব-ফিজিও হাসপাতাল এবং ল্যাব। এটি এ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। আমাদের সেবা সমূহের মধ্যে রয়েছে OPD এবং IPD সেবা সমূহ। IPD তে আমরা ভর্তি রেখে অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে রিহেব-থেরাপি দেই এবং আমাদের হসপিটালের চিকিৎসা আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমি নিজেই জটিল থেরাপি আইটেম গুলো রোগীদের দিয়ে থাকি। আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত ফিজিক্যাল থেরাপিষ্ট যারা দীর্ঘ অভিজ্ঞ ও দেশের স্বনামধন্য ইনস্টিটিউট থেকে এসেছে। আমরা ফিজিক্যাল মেডিসিন এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে থাকি।
OPD তে আমাদের দৈনিক বিশ ঊর্ধ্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চেম্বার করে থাকেন। এদের মধ্যে ডায়াবেটিস, মেডিসিন, বক্ষব্যাধি, কিডনী, ইউরোলজী, রক্তরোগ, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজি, কার্ডিয়লজি ইত্যাদি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে। আমরা দ্রুত ও শত ভাগ নির্ভূল টেস্ট রিপোর্টের নিশ্চয়তা, আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট দ্বারা অটোমেটেড মেশিনের মাধ্যমে রিপোর্ট নিশ্চিত করি।
মেডিকেল বিডি: প্রশ্ন-৪:
স্বাস্থ্যসেবা খাতে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে আপনার সফলতার পেছনে কোন প্রেরণা কাজ করছে?
(ডা. মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান) উত্তর:
আসলে সত্যিকার অর্থে আমার ব্যাক্তি জীবনে এমন কোন বিশেষ কারণ বা স্মৃতি নেই যা এর পিছনে কাজ করছে। প্রকৃত ব্যাপার বলতে গেলে আমি যখন শিক্ষকতা করি তখন কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে আমি দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলাম তখন থেকেই আমার ভিতর বাসনা জাগে স্পেশাল ফিজিওথেরাপীর উপর একটি হাসপাতাল ও রিহ্যাবিলেটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার । আমি আমার পেশাগত কাজের প্রথম পর্যায় থেকে ডেডিকেটেড ছিলাম পরবর্তিতে যখন শিক্ষকতা ছেড়ে ক্লিনিক পেশায় আসলাম তখন প্রাকট্রিক্যাল লাইফে আমি সমান ভাবে কাজের প্রতি ডেডিকেটেড ছিলাম। রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমি আমার পরিবারের সদস্যের মত যত্নের সহিত সময় দিয়ে চিকিৎসা করি যেন কোন রোগী এসে বসে না থাকে ও কোন ভোগান্তির স্বীকার না হয় এবং ফিরে না যায়। আমি মনেকরি এটাই আমার মূল সফলতা।
আরো একটি ব্যাপার হচ্ছে আমি সবসময় আপডেট থাকার চেষ্টা করি। যদি কোন সরকারি এবং প্রাইভেট কোর্স চালু হয়, নতুন কোন চিকিৎসার উদ্ভাবন হয়েছে যা সারা বিশে^ শুরু হয়েছে অথবা বিদেশী কোন ট্রেইনার এসেছে। ব্যাক্তিগত ভাবে উক্ত যায়গা গুলোতে আমি উপস্থিত থাকি। ফিজিওথেরাপির উপর বিশে^র সর্বশেষ যে কয়টি চিকিৎসা চালু আছে তার সবকয়টি আমরা ডিপিআরসি তে চালু করেছি। যথা: লেজার থেরাপি ও ড্রাইনিডিলিং অন্যতম যার জন্য বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। আরো একটি বিশেষ দিক হচ্ছে আমি যেহেতু চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত সেহেতু আমি আমার আয়ের সিংহ ভাগই ডিপিআরসি হাসপাতালের কল্যাণে ব্যায় করি। আমি আরো মনে করি দেশীয় স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগে দেশীয় উদ্যোক্তাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে।
যেটা আমি ব্যাক্তি উদ্যোগে এ কাজটি করে যাচ্ছি। আমি বলতে পারি বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা। ব্যাক্তি উদ্যোক্তা থেকে এখন একজন প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা হয়ে আমার প্রতিষ্ঠান ডিপিআসি এর মাধ্যমে দেশের জনগনেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া, বাতব্যথা ফিজিও থেরাপি ও পূনর্বাসানের উপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য টিপস্ ও জনসচেতনতা মূলক আলোচনা করে থাকি। ফলে সাধারন মানুষের মধ্যে অন্তত কোন রোগের জন্য কোন চিকিৎসা নিতে হবে এবং কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট যেতে হবে তা তারা জানতে পারে এবং সচেতন হতে পারে। এই দিক দিয়ে আমি সফল বলে মনে করি ।
আমরা ডিপিআরসি হাসপাতালে সরোজমিনে চিকিৎসাধীন দু’জন রোগীর সাথে এ পর্যায়ে কথা বলছি।
রোগী-১
রাজীব বেপারি, সিঙ্গাপুর প্রবাসী, তার বাড়ী মুন্সিগঞ্জ জেলায় , তিনি জানান সিঙ্গাপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেও কোন প্রকার সুস্থ্যতা লাভ করেননি। গত ৪ বছর ধরে তার কোমরের মেরুদন্ডে ডিক্স এ সমস্যা ও PLID রোগে ভূগছেন, অনলাইনে ফেসবুকের মধ্যমে হাসপাতালটির চিকিৎসার ভিডিও দেখে চিকিৎসা নিতে আসেন । জানা যায় গত আট দিন যাবত তিনি ডিপিআরসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে, এই ৮ দিনে অত্যান্ত ভালো থেরাপি ও চিকিৎসার মাধ্যমে আগের চেয়ে অনেক সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন, তিনি জানান এখানে ১২ থেকে ১৩ দিন থাকতে হবে এবং এ কয়দিনে তিনি পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে যাবেন। তিনি এখানকার চিকিৎসা ও থেরাপিষ্টদের সেবার উপর সন্তুষ্ট।
রোগী-২
মোঃ জহিরুল ইসলাম, তিনি দুবাই প্রবাসী শ্রমিক, তার বাড়ী কুমিল্লা জেলায়। তিনি এর আগে কোমর ব্যাথার চিকিৎসার জন্য দুবাই ও দেশের স্কায়ার হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ্য হতে পারেনি। তিনি দুবাই থেকে ইউটিউব এর মাধ্যমে ডিপিআরসি হাসপাতালের সন্ধান পান এবং এখানে এসে এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পরে তিনি কোমরে PLID এর সমস্যায় ভুগছেন, এখানে তিনি গত ৯ দিন যাবত ভর্তি আছে। এই ৯ দিনের চিকিৎসায় তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান, মোট ১২ দিন এখানে থাকতে হবে, এখানকার চিকিৎসক এবং থেরাপিষ্টরা কাজে অনেক দায়িত্বশীল ও আন্তরিক।