ইগো: আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু!!

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ইগো: আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু!!

“ইগো” শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। শব্দটি মূলত ইংরেজী হলেও বাংলায় মোটামুটি প্রচলিত হয়ে গেছে। কেউ যদি জীবনের যে কোন কাজে কারও তুলনায় এগিয়ে যায়,  সেটা হতে পারে ক্লাসে প্রথম হওয়া; হতে পারে ব্যবসায় বা চাকরীতে তুলনামূলক বেশি সফলতা পাওয়া। এসব ব্যাপারে যদি কারও মনে বিন্দুমাত্র হিংসা জন্ম নেয় তাহলে সাধারন ভাবে ধরে নেয়া হয় তার “ইগো প্রবলেম আছে।”

তবে এই সমস্যাকে ইগো’র চেয়ে ঈর্ষা বা হিংসা বলা ভাল। ঈর্ষা ইগোর একটি অংশ হলেও ইগোর ব্যপ্তি আরও বড়।এটা আপনার সম্ভাবনাময় জীবন ও ক্যারিয়ারকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে। তাই ইগো কি, তা ভাল করে জানা, আর তা থেকে বের হয়ে আসাটা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের জন্য খুবই জরুরী।

তাই আজ চলুন বেস্ট সেলার লেখক রায়ান হলিডে’র বিখ্যাত বই Ego is the Enemy” এর আলোকে জেনে নেয়া যাক কেন ইগো আপনার উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শত্রু আর কিভাবেই বা এর থেকে বাঁচা যায়।

লেখকের কথা:

রায়ান হলিডে একাধারে একজন লেখক, মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ এবং সফল উদ্যোক্তা। তিনি Forbes, Huffington Post, The Guardian সহ অনেক বিখ্যাত পত্রিকার নিয়মিত কলামিস্ট। Ego is the Enemy ছাড়াও তাঁর আরও কয়েকটি বই The obstacle is the way”, “Growth hacker marketing and trust me”, “I am lying” – বেশ কয়েকটি টপ চার্টে বেস্ট সেলিং।

ইগো আসলে কি?

ইগোর অনেকগুলো প্রচলিত সংজ্ঞা আছে, তবে রায়ান হলিডের মতে ইগো হচ্ছে “নিজের বড়ত্বের প্রতি একটি অস্বাভাবিক বিশ্বাস। যার সাথে মিশে থাকে অতি অহঙ্কার এবং আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্খা।”

লেখকের মতে, আমরা সবাই জানি ইগো একটি খারাপ জিনিস, এবং এটা আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে। আর সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও আমাদের। ইগো কিভাবে আপনার জীবনকে খারাপ বা ভালো দিকে নিয়ে যেতে পারে, বইয়ে লেখক তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

নিজের প্রতি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব উঁচু ধারনা একজন মানুষের সাফল্যের যাত্রাকে পুরোপুরি থামিয়ে দিতে পারে। ইগো আসলে মানুষের মাঝে বাস করা ছোট্ট শয়তানের মত যে একজন মানুষ আসলে যতটা বড়, তাকে তারচেয়েও অনেক বড় হিসেবে ভাবতে শেখায়।

আপনার মাঝে বড় হবার সম্ভাবনা আছে, এবং কাজ করলে আপনি আসলেই অনেক বড় হতে পারবেন – এটা আত্মবিশ্বাস। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী মানুষ এটাও জানে যে তার বর্তমান অবস্থা কি। সে যতটা বড় হতে চায়, ততটা বড় হতে হলে তাকে আরও কতটা কাজ করতে হবে সেটা সে খুব ভালকরে জানে।

যার মাঝে ইগো আছে, সে সত্যিকার বড় হওয়ার আগেই নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করে। তার এই ভাবনা তাকে সত্যিকার বড় হওয়ার পথে এগুতে বাধা দেয়। কারনটা খুব স্বাভাবিক, আপনি যদি আগেই ভেবে বসে থাকেন আপনি ইতোমধ্যেই অনেক বড় কিছু করে ফেলেছেন, তবে আর সত্যিকার বড় কিছু করার জন্য কষ্ট করার দরকার মনে করবেন না।

ইগো আমাদের সাথে এই খেলাটাই খেলে। ইগো সম্পন্ন মানুষ তার মিথ্যা অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকে, আর অন্যরা তাকে টপকে সত্যিকারের বড় হয়ে ওঠে।

আবার অনেক মানুষ কিছুটা সফলতা পেয়েই নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করে। তারা মনে করে তাদের আর প্রমান করার কিছু নেই। এই কারনে তারা সামনে চলা আর পরিশ্রম করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে এই ভুল ধারনাটি না থাকলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। অথবা বুঝলেও সেই সর্বনাশা ইগোর কারনে স্বীকার করতে চায় না।

একজন মানুষের মধ্যে যে প্রবল ইগো সমস্যা আছে তার একটি প্রধান লক্ষণ তারা ভুল করেও ভুল স্বীকার করতে চায় না। অনেক সময়ে ভুল বুঝতে পারলেও তারা তা স্বীকার করে না। সেই অস্বীকার যেমন অন্যদের কাছে করে, তেমনি তাদের নিজেদের কাছেও করে। আর ভুল স্বীকার না করলে সেই ভুল শোধরানোও অসম্ভব। একজন ইগো সম্পন্ন মানুষের যদি ইংরেজী গ্রামারে সমস্যা থাকে, এবং আপনি যদি তাকে সেটা ধরিয়ে দিতে যান, তাহলে সে আপনারই ওপর রাগ করবে। পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে সেটা হবে শিক্ষকের দোষ, কিন্তু নিজে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর কোনও চেষ্টা সে করবে না।

ইগো সম্পন্ন মানুষদের আরও একটি ব্যাপার, তারা নিজেরা যতটুকু জানে, তার তুলনায় বেশি জ্ঞানী বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। সোজা বাংলায় এরা সব সময়ে “দুই লাইন বেশি বোঝে”। আপনি যদি মনে করেন তারা শুধু অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে তারা বেশি জানে, তাহলে ভুল করবেন। এরা আসলে নিজেরাও বিশ্বাস করে যে তারা যে কোনও বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। কোনও একটি বিষয়ে অল্প একটু ঘাঁটাঘাঁটি করেই তারা ধরে নেয় তারা আসলে অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। আর এই বিশ্বাস তাদের যে কোনও ব্যাপারেই খুব বেশি জানার আগেই জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

একজন ইগো সম্পন্ন মানুষকে আপনি কখনও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন না। মানে, তারা কখনও তর্কে হার মানবে না। তারা যদি বোঝেও যে তাদের তুলনায় তাদের সামনের মানুষটির কথা বেশি যুক্তিসঙ্গত ও প্রমানিত, তারপরও তারা মানবে না।

একজন ইগোর দ্বারা অসুস্থ মানুষ ব্যর্থ হলেও সেই ব্যর্থতা থেকে না শিখে সব সময়ে পরিস্থিতি বা অন্য মানুষের ওপরে দোষ চাপাতে ভালবাসে। তারা কখনও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে না তাদের কোথায় গলদ আছে। এর কারন তারা একটি ঘোরের মাঝে থাকে। তারা ভাবে, তাদের মধ্যে কোনও খুঁত নেই এবং সেই কারনে তারা কোনওভাবেই ভুল করতে পারে না।

এই লেখার প্রথম দিকে ঈর্ষা, পরনিন্দা, হিংসা ইত্যাদিকে ইগোর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এগুলো আসলে ইগোর ফলাফল। একজন মানুষ যখন ইগোর শিকার হয় তখন সে অযথাই নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবতে শুরু করে। তারচেয়ে কেউ কোনও কিছুতে ভাল হলে সে কোনও না কোনও ভাবে তার ভুল ধরার চেষ্টা করে। যে কোনও ভাবে অন্য মানুষকে ছোট করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এর ফলে সাধারন মানুষ তো তাকে পছন্দ করেই না, কাছের মানুষগুলোও দূরে চলে যায়। ইগো আসলে একটি মানসিক প্যারালাইসিস, যা আপনাকে শোয়া অবস্থায় বিশ্বাস করায় আপনি এখন উড়ছেন।

সুতরাং বন্ধুরা আসুন আমরা ইগো নামক সামাজিক অভিশাপ থেকে দূরে থাকি, সুন্দর স্বাভাবিক সমাজ গড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

16 − 4 =