বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি: শুরু থেকে বিস্তার

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি: শুরু থেকে বিস্তার

পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে ‘যুদ্ধে’ নেমেছেন বাংলাদেশের এক মন্ত্রী৷ বিষয়টি সম্পর্কে ফেসবুক পাতায় উঠে এসেছে পাঠকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷

মো. রাকিব এই পদক্ষেপের জন্য মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ সাইফুল ইসলাম থান্দারও বিষয়টি পছন্দ করেছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন৷ খুশি হয়েছেন পাঠক মানিক মাহমুদও৷

তবে মো. আনিস কিন্তু এ ব্যাপারে মোটেই আশাবাদী নন৷ তিনি একটি উদাহরণ দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বুড়িগঙ্গা নদীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান এক সপ্তাহও টেকেনি, মাত্র একটি ফোনেই সব শেষ হয়ে গেছে৷”

যদিও পাঠক সৈয়দ সাইমনের মত এ বিয়য়ে একটু ভিন্ন৷ তিনিমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ তবে তরুণদের দূরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর ধারণা, তরুণরা এখন আইপি পরিবর্তন করে বা ভিপিএন দিয়ে অন্যভাবে পর্নসাইটগুলো দেখতে পারে৷

আর আদনান বায়োজিদ মন্তব্য করেছেন, ‘‘পৃথিবীতে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই পর্নসাইট বন্ধ করার জন্য মন্ত্রী রয়েছেন৷ তাঁকে নিয়ে আমরা গর্বিত৷”

এদিকে শায়ন শাহ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, ‘‘পর্নসাইট বন্ধ না করে আগে ইউসি ব্রাউজার ও বাংলা চটি সাইটগুলো বন্ধ করুন মন্ত্রী সাহেব৷ আপনার নিষিদ্ধ করা পর্নসাইট অনায়াসে ইউসি ব্রাউজার দিয়ে চালানো যাচ্ছে৷” শায়ন শাহের মতে, ‘‘ পর্নসাইটের কারণে শিশুরাকুসংসর্গে পড়ে গোল্লায় যাচ্ছে৷ শারীরিক, মানসিক ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে৷ পড়াশুনার ক্ষতি তো হচ্ছে, সেই সঙ্গে নৈতিকতা, সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে৷ চরিত্রহীন হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ৷ বাড়ছে পরকীয়া, ভেঙে যাচ্ছে সংসার৷”

দেশি চটি বই থেকে বিদেশি ‘প্লেবয়’

একটা সময় পর্যন্ত ঢাকায় তো বটেই, দেশের প্রায় সব মফঃস্বল শহরেও গোপনে বিক্রি হতো ‘চটি বই’৷ আদিরসাত্মক গল্পের সেই বইগুলো লেখা হতো ছদ্মনামে৷ চটি বইয়ের বাইরে ‘জলসা’, ‘নাট্যরাজ-’এর মতো নিরীহ নামের কিছু ‘পিনআপ’ ম্যাগাজিনও ছিল, যেগুলো প্রকাশের উদ্দেশ্যই ছিল নারীদেহ এবং যৌনকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে পাঠক মনে যৌন উদ্দীপনা জাগানো৷ এছাড়া বড় শহরগুলোয় ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনও পাওয়া যেত৷

ভিসিআরের হাত ধরে ‘ব্লু ফিল্ম’

ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, অর্থাৎ ভিসিআরের কয়েক বছর পর হয়ত কোনো চিহ্নই থাকবে না৷ গত বছরের জুনে জাপানে তৈরি হলো বিশ্বের সর্বশেষ ভিসিআর৷ মানে বিশ্বের কোথাও আর কখনো ভিসিআর তৈরি হবে না৷ বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফির বিস্তারে এই ভিসিআর একসময় খুব বড় ভূমিকা রেখেছে৷ প্রেক্ষাগৃহে না গিয়ে ঘরে বসে হিন্দি, ইংরেজি ছবি দেখা শুরু হয়েছিল ভিসিআর দিয়ে৷ একটি চক্র তখন নানা জায়গায় গোপনে ‘ব্লু ফিল্ম’-ও দেখাতে শুরু করে৷

সিনেমা হলে ‘কাটপিস’

দেশের কিছু প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের মুভি দেখানো হতো৷ এক সময় ঘোষিত মুভির ফাঁকে ফাঁকে দেখানো শুরু হয় ‘ব্লু ফিল্ম’৷ এই প্রবণতা অন্য হলগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে৷ বাংলা ছবির ফাঁকে ফাঁকে দেখানো শুরু হয় ‘কাট পিস’, অর্থাৎ পর্নো ছবির অংশ বিশেষ৷

সিডি থেকে ডিভিডি

কম্পিউটারের আগমনের পর থেকে অল্প অল্প করে কমপ্যাক্ট ডিস্ক, অর্থাৎ সিডিতেও ঢুকে পড়ে পর্নো ছবি৷ সেই ছবি পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে৷ সিডির পর এলো ডিজিটাল ভার্সেটাইল ডিস্ক, অর্থাৎ ডিভিডি৷ ভার্সেটাইল ডিস্ক দেশে জ্ঞান এবং সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে নিঃসন্দেহে ‘ভার্সেটাইল’ ভূমিকাই রাখছে, তবে পাশাপাশি যে পর্নোগ্রাফির ধারক, বাহক হিসেবেও এর একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে তা-ও অস্কীকার করা যাবে না৷

অন্তর্জালে পর্নোজাল

গত কয়েক বছরে দেশে ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিষ্ময়কর হারে বেড়েছে৷ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ দশমিক ৬৮ কোটি৷ ইন্টারনেটের অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে৷ পর্নোসাইটের দৌরাত্ম এত ভয়াবহভাবে যে, সম্প্রতি পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কন্টেন্ট প্রকাশ বন্ধের উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) পাঁচশ’রও বেশি পর্নোসাইট বন্ধ করেছে৷

মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি

দেশের ৬ দশমিক ৬৮ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৪ দশমিক ১৮ শতাংশই মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করে৷ ফলে মোবাইলই হয়ে উঠেছে পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বড় উৎস৷ হাতে হাতে মোবাইল, তাই পর্নোগ্রাফি ও আপত্তিকর কন্টেন্টও হয়ে উঠেছে সহজলভ্য৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একবার জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, ‘‘দেশে প্রতি ১২ সেকেন্ডে অন্তত একটি করে নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে৷’’ নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর উল্লেখযোগ্য একটি অংশই ‘ভুয়া’৷ এভাবে কিছু লোক ফেসবুক, টুইটারেও নানা ধরণের অপতৎপরতা চালাচ্ছে৷ এর ফলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও পর্নোগ্রাফির বিস্তার বাড়ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

two × 1 =