
ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা চ্যালেঞ্জ করার গাইডলাইন
নিজের প্রতি নির্দয় হওয়া চলবে না, সদয় হতে হবে। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য এটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। কিছু অর্জিত হলে নিজেকে বাহবা দিতে হবে, পুরস্কৃত করতে হবে। অন্যরা পুরস্কৃত করবে, বাহবা দেবে- এ আশায় বসে না থেকে দায়িত্ব নিজের হাতে নিতে হবে।
বিভিন্ন সময় আমরা ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো চ্যালেঞ্জ করার কথা বলেছি। কিভাবে চ্যালেঞ্জ করব ত্রুটিপূর্ণ চিন্তাগুলো? কিছু গাইডলাইন তুলে ধরা হলো-
এনে উদ্বেগ তৈরি হলে, উদ্বেগের অন্তর্গত বিশ্বাসটি প্রথমে ধরতে হবে, আলাদা করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। বিশ্বাসটি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। নিচের উদাহরণটির প্রতি নজর দেয়া যেতে পারে-
মনে হতে পারে ‘অন্যের সামনে কোনো বোকামো কাজ করলে আর কখনো অন্যকে মোকাবেলা করতে পারব না। এটি হবে কষ্টদায়ক অবস্থা, সইতে পারব না আমি।’ নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, বিষয়টি কি সমস্যাসঙ্কুল, ভয়াবহ? যেমনটি ভাবছি, তেমনি ভয়াবহ?
সবাই তো ভুল করে। কেবল আমার ভুলের জন্যই কি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে? এমনটি ঘটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, এটি খুব অস্বস্তিকর। মনে উত্তর আসবে প্রায় এভাবে। সাথে সাথে এই উত্তরও মনে আসতে পারে, এমন কিছু ঘটলে বড় বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা খুব কম। ‘বড় কিছু ঘটবে এ ব্যাপারে আমি কি নিশ্চিত?
এটুকু ভাবনার পর বড় করে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। এরপর যৌক্তিক চিন্তার দিকে মনের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করতে হবে। চর্চা ও প্রচেষ্টা ইতিবাচক মূল্যায়নের জন্য শাণিত করবে।
এক সময় বোঝা সহজ হবে, নিজের উদ্বেগের দায়দায়িত্ব নিজের হাতে নেয়া যাবে। উদ্বেগ তখন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নিজের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসবে। প্রথমে সব কিছু মেনে নেয়া কঠিন মনে হতে পারে।
একটি কারণ হলো, চার পাশে যা ঘটুক না কেন আমরা সাধারণত অন্যকে দোষ দিই, নিজের সমস্যার জন্যও অন্যকে দোষারোপ করি। যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এমন দুর্ভাগ্যও যখন আমরা বরণ করে নিই, প্রায়ই দেখা যায় সমস্যা মোকাবেলার জন্য, সহজ করার জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে যায়। দুর্ভাগ্য বরণ করে নিজের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর চেয়ে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের নাটাই নিজের হাতে নেয়াই উত্তম।
উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের নাটাই নিজের হাতে নেয়ার ক্ষমতা অর্জিত হলে, অর্থপূর্ণ চিন্তাগুলো চ্যালেঞ্জ করা হবে প্রধান উদ্দেশ্য। কোনো কিছু বাদ রাখা যাবে না, সমস্যার পুরোটুকু দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে, সমাধানের জন্য সব শক্তি নিয়োগ করতে হবে। মন বদলে যাওয়ার কোনো সুযোগই দেয়া যাবে না।
মনকে বোঝাতে হবে- উদ্বেগের কারণগুলো নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ভয়টি যৌক্তিক নয় যখন বোঝা সহজ হবে নিজেকে ইতিবাচক পথ টেনে নিতে হবে। পরিস্থিতি তখন মোকাবেলা করতে হবে।
যতক্ষণ মনে ভয় থাকবে, ততক্ষণে যৌক্তিক চিন্তাটি খুঁজে দেখতে হবে, ঘটনার বাস্তব সত্যটুকু বের করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ‘কেউ আমাকে দেখছে না।’ ‘আমি ধসে যাবো না।’ এরপর বারবার চর্চা চালাতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততক্ষেণে practice করে যেতে হবে। এটি অর্জিত হলে, নিজেকে অনেক বেশি আত্মনিয়ন্ত্রিত মনে হবে। এই নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত উদ্বেগ একই তালে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে যাবে, ভোগাবে।
ঊারবার উদ্বেগের চিন্তায় ডুবে থাকলে নিজের কর্মচঞ্চলতা বা সক্রিয় কর্মকা- দমিয়ে রাখতে হবে। ‘স্টপ’ বলে নিজেকে থামাতে হবে। এই ফাঁকে ইতিবাচক যৌক্তিক চিন্তাগুলো খুঁজে দেখতে হবে। এমনটি কম করা গেলেও মোটামুটি স্বস্তিদায়ক।
প্রাথমিক অবস্থায় কেন উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন, ভাবার দরকার নেই। কারণটি হয়তো কখনো জানা হবে না। কোনো সমস্যা নেই। বর্তমান উদ্বেগ কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে- সেটি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
পাঁচ মিনিটে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যাবে- এমন ভাবনা ত্যাগ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর শ্রম ও চর্চা। নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করা হবে- অতিরিক্ত সীমা নিজের মাঝে হতাশা জাগাতে পারে, হতাশ হওয়ার কারণে ভেতরগত উদ্যোগের মৃত্যু ঘটতে পারে। দুর্ভাগ্যের চাকায় এভাবে সেঁটে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিছু দিন বা দীর্ঘ দিন হয়তো আমরা উদ্বেগ ভোগ কিেছ, জয় করতেও সময় লাগবে। সহজে সব কিছু অর্জিত হবে, হাতের মুঠোয় চলে আসবে সব নিয়ন্তণ, এমন আশা করা কি ঠিক হবে? না।
নিজের প্রতি নির্দয় হওয়া চলবে না, সদয় হতে হবে। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য এটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। কিছু অর্জিত হলে নিজেকে বাহবা দিতে হবে, পুরস্কৃত করতে হবে। অন্যরা পুরস্কৃত করবে, বাহবা দেবে- এ আশায় বসে না থেকে দায়িত্ব নিজের হাতে নিতে হবে।
যদি গাইডলাইন মেনে অগ্রসর হওয়া যায় অবশ্যই মনের টেনশন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন নয়? প্রিয় পাঠক, আপনারা কী বলেন?