রিহেব-ফিজিও বা অঙ্গসংবাহন এমন এক পদ্ধতি যা মানুষের শারীরিক বা মানসিকভাবে সুস্থ সবল কর্মক্ষম অবস্থায় বাঁচতে, ক্রীড়াক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনে এবং অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই অসুস্থতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
রিহেব-ফিজিও কী?
বিভিন্ন রোগ, আঘাত অথবা শারীরিক বিকৃতির চিকিৎসা, যা শারীরিক এবং পুনর্বাসন পদ্ধতি।
ক্রায়ো-ফিজিও:
এই পদ্ধতিতে ব্যথা এবং ফোলো কমানো হয়। আবার গভীর ব্যথায় কিছু দিয়ে মালিশ (DKM-Deep) মালিশ করার পর এই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। বরফ ২০ মিনিট একনাগাড়ে দেওয়া যেতে পারে, দিনে অনেকবার দেওয়া যেতে পারে।
ইলেকট্রো-ফিজিও:
আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে দ্রুত সারিয়ে তোলা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া মাংসপেশি শিথিল করতে বা ব্যথা কমাতে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই চিকিৎসা আবার অনেকভাবে প্রয়োগ করা হয় যেমন: হট প্যাড, প্যারাফিন বাথ, ইনফ্রারেড উত্তপ, এইচ এফ এস, ডায়াথার্মি, ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন, এসডিজেড ইত্যাদি। ইলেকট্রিক্যাল নার্ভ স্টিমুলেশন ব্যবহৃত হয় মাংশপেশি শুকিয়ে যাওয়া বিশেষত প্যারালিসিসে কিংবা হাঁটু অপারেশন পর। এক্ষেত্রে মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ করা হয়ে থাকে যন্ত্রের মাধ্যমে।
রেঞ্জ অফ মোশন (ROM)
এই ব্যায়াম মূলত দুই ধরনের। অ্যাক্টিভ (সক্রিয়) এবং প্যাসিভ (নিস্ক্রিয়)। এই পদ্ধতিকে রিহেব-ফিজিওর ভাষায় ROM (Range of motion Exercise) বলা হয়। আঘাতপ্রাপ্ত অংশে অথবা অপারেশনের পরে কিংবা অসুখে ক্ষতিগ্রস্থ পেশির দুর্বলতা রোধ করতে অথবা পেশিশক্তি বাড়ানোর জন্য এবং অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে গেলে তা নিরাময়ে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। মূলত চার ধরনের রম এক্সারসাইজ আছে- অ্যাক্টিভ রম: সক্রিয় ব্যায়াম, যেখানে রোগী নিজে থেকেই এই ধরনের ব্যায়াম করতে সক্ষম। অ্যাক্টিভ অ্যাসিসটেড রম: যেখানে রোগী নিজেই, অন্যের বা ফিজিওর সাহায্যে ব্যায়াম করে থাকেন।
প্যাসিভ রম: যেখানে রোগী নিজে ব্যায়াম করতে অক্ষম তখন অন্যের সাহায্য বা ফিজিওর সাহায্য প্রয়োজন হয়।
রেজিসটেড রম: রোগী নিজেই সক্ষম এবং অন্য কেউ সেই অঙ্গ সঞ্চালনে বল প্রয়োগে বাধা দিয়ে থাকে আর বাধার বিপরীতে রোগী ব্যায়াম করে থাকেন।
সক্রিয় রম এর উদাহরণ হলো রোগী বিছানা থেকে বা বসে থাকা অবস্থা থেকে নিজেই উঠে দাঁড়াবেন। ফিজিও পাশে থেকে সাহায্য করবেন যাতে রোগী পড়ে গিয়ে আঘাত না পান। নিস্ক্রিয় রম করা হয় মূলত পক্ষাঘাতে অবশ হয়ে যাওয়া অংশে সঞ্চালনের মাধ্যমে ডিপ ভেন হ্রম্বোসিস রোধে অর্থাৎ শিরার মধ্যে জমাট রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছে যেন হৃদপিন্ড, মস্তিষ্ক বা ফুসফুসের শিরাকে বন্ধ করে ক্ষতিসাধন না করতে পারে। এছাড়া মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া (অ্যাট্রাপি) থেকে বাঁচতে নিস্ক্রিয় রম এর ব্যবহার।
রেজিস্টেড রম হলো মাংসপেশি ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী ব্যায়াম। মাংসপেশি ক্ষমতা ঠিকঠাক না থাকলে রোগীর প্রাত্যহিক কাজকর্ম করা সম্ভব নয়। এই ধরনের ব্যায়াম ওজন বাড়িয়ে-কমিয়ে, ওজন বহন করে, ওজনের বিরুদ্ধে ব্যায়াম করে অথবা পুশ-আপ, সিট-আপ বা চিন-আপ, স্টিক-আপ বা চিন আপ করে করা হয়ে থাকে।
ড্রাইনিডেলিং: সর্বাধুনিক সফট টিস্যু পেইন কমানোর চিকিৎসা। যাতে মাংসপেশী, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল বায়োমেকানিকেলি ঠিক করা হয়।
জয়েণ্ট মোবিলাইজেশন টেকনিক (সন্ধিস্থল পদ্ধতি):
অস্থি মাংসপেশির বিকলাঙ্গ অসুখে এই পদ্ধতি কার্যকারী। ফিজিও হাত দিয়ে এই ব্যায়াম করিয়ে থাকেন। সন্ধিস্থল ঠিকমতো নড়াচড়া করানোই মূল উদ্দেশ্য। এই ধরনের ব্যায়াম বেশ কিছু ক্ষেত্রে করা যায় না। যেমন প্রচ- রকমের অস্ট্রিও আর্থ্রাইটিস এবং অস্ট্রিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়) হলে, অসুস্থ অঙ্গে টিউমার বা ক্যান্সার হয়ে থাকলে, মাথার পিছনে ঘাড়ের অংশে রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধে থাকলে, সন্ধিস্থলে ক্ষয়ে যেতে থাকলে।
আমাদের জানা প্রয়োজন দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গি ঠিক কেমন হওয়া উচিত।
দাঁড়ানোর সঠিক ভঙ্গি: সোজা দাঁড়াতে হবে। কাঁধ দুটো চওড়া করে থুতনি সোজা রেখে বুক চিতিয়ে পেট ঢুকিয়ে। যেখানে আপনি একটা সোজা লাইন টানতে পারবেন যা আপনার কানের লতি থেকে কাঁধ, নিতম্ব, হাঁটু হয়ে গোড়ালির গাঁটের মাঝখান দিয়ে চলে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমাদের মেরুদন্ডে স্বাভাবিক বক্রতা ডাবল C বা S curves.
বসার সঠিক ভঙ্গি:
ঘাড় সোজা, কাঁধ সোজা এবং চওড়া, মাথা সোজা থাকবে। পিঠ ঠেকে থাকা উচিত অফিস চেয়ারের পশ্চাৎ অংশের সঙ্গে। প্রয়োজনে কোমরের অংশে ছোট্ট একটা বালিশ রাখা যেতে পারে। পা দুটো মাটিতে ঠেকে থাকা উচিত। নতুবা একটা ছোট টুলে পা রাখতে হবে। টেবিলের ওপর হাত কাজের জন্য মোটামোটি ৭৫ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে রাখা উচিত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর উঠে দাঁড়ানো, শরীরটাকে প্রাসারিত করা, কিছুটা হেঁটে নেওয়া অথবা সামান্য ব্যায়াম করে নেওয়া দরকার।
আমাদের খেয়াল রাখা উচিত হেঁট হয়ে নিচে থেকে সামান্য ভারি কিছু জিনিস তুলতে গেলে কোমর ভাঁজ না করে হাঁটু ভাজ করা দরকার। আসল কথা হলো ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ এমন একটি উপায় যেখানে প্রাত্যহিক কাজকর্মের বাইরেও আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহজভাবে নড়াচড়া, শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মাংসপেশিকে প্রসারিত করে অস্বস্থিতে চাপ কমানো, পিঠ, পেট এবং কোমরের মাংসপেশির শক্তিবৃদ্ধি, ওয়াটার, অ্যারোবিক্স ব্যায়াম পদ্ধতিতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো এবং হৃদযন্ত্র ফুসফুস সবল করার জন্য জলের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ম্যানুয়েল থেরাপি বা হস্থ সঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসা; এই পদ্ধতি শরীর এবং মনের আরাম দেওয়া, ব্যথা কমানো, সন্ধিস্থলের সহজ নড়াচড়ায় সাহায্য করে। এর ফলে মাংসপেশি শিথিল হয় এবং মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মোবিলাইজেশন বা চলমান করা যেখানে ধীর, পরিমিত নড়াচড়ার মাধ্যমে বাঁকিয়ে, টেনে অথবা ঠেলে অস্থি এবং অস্থিসন্ধিকে সঞ্চালণ করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অস্থিসন্ধিস্থলের মাংসপেশিকে শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নরম এবং নমনীয় করে তোলা হয়।
ম্যানিপুলেশন কৌশলে হস্তচালনা করা:
অস্থি সন্ধিস্থলে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে (হাত) দিয়ে বা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সপ্তপর্ণে, পরিমিত শক্তি প্রয়োগে মৃদু থেকে শক্তিশালী বল প্রয়োগ করে ধীরলয় থেকে দ্রুততার সঙ্গে এই ধরণের ফিজিও করা হয়ে থাকে।
একজন রিহেব-ফিজিওর কাজ হলো স্বাভাবিক বা অসুস্থ মানুষকে সঠিকভাবে হাতেনাতে শিক্ষিত করা। যাতে সে তার প্রাত্যহিক কাজকর্ম সুচারুভাবে করতে সমর্থ হয় এবং আঘাত থেকে বাঁচতে পারে।
বোবাথ, কেবাত, মিলস মেনিউভার, সফট টিস্যু স্ট্রেচিং ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যথার ঔষধ বিহীন চিকিৎসা।
রিহেব ফিজিও বিশেষজ্ঞগণ উক্ত বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে ব্যক্তি হতে পরিবার, পরিবার হতে সমাজ, সমাজ হতে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র হতে আন্তর্জাতিকভাবে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিরোধ, প্রতিকার, প্রতিবন্ধকতা সুনিশ্চিতভাবে নিরূপণ করে থাকেন। ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক ইমপেয়ারমেন্ট/ ডিসএবিলিটি/ পঙ্গুত্ব দূর করে চিকিৎসা ও সামাজিকভাবে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট পথ সুক্ষ ও দৃঢ়ভাবে চিন্তা করে ব্যবস্থা গ্রহণ রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞের কাজ।
পেইন প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ
যোগাযোগ:- ডিপিআরসি হাসপাতাল লি: (১২/১ রিং-রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭)
শ্যামলী ক্লাব মাঠ সমবায় বাজারের উল্টো দিকে
সিরিয়ালের জন্য ফোন: ০১৯৯-৭৭০২০০১-২ অথবা ০৯ ৬৬৬ ৭৭ ৪৪ ১১