একজন ডায়াবেটিস রোগীর মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলাই জীবন। আর এ কারণেই একজন ডায়াবেটিস রোগী অন্য অনেকের চেয়ে সুস্থ থাকে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর তিনটি জিনিস মেনে চলতে হয়। ১: ওষুধ, ২: খাবার, ৩: নিয়মানুবর্তিতা। এই তিনটি জিনিস যে ডায়াবেটিস রোগী মেনে চলে তার কোনো সমস্যা তৈরি হয় না এবং তিনি সুস্থ থাকেন।
বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। WHO এর মতে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটায় এরকম প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। পৃথিবীতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ মারা যায় এবং প্রতি ১০ সেকেন্ডে দুইজন ডায়াবেটিস রোগী সনাক্ত করা হয়। তাই ডায়াবেটিকসের ভয়াবহতা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ পুরোপুরি বা সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায় না। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। ওষুধ, নিয়মিত ব্যায়ামসহ নানাভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে যদি আপনি খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন খাদ্য রাখতে হবে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর সেটিও হতে হবে পরিমাণমতো। চলুন জেনে নেয়া যাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এমন কিছু খাবার সম্পর্কে।
ক) সাধারণ নয়মাবলী:
- তিন বেলার খাবার ৫-৬ বার ভাগ করে খাবেন।
- মাটির নিচে হয় এমন সব্জি কম খাবেন । যেমন: কচু, ওল, আলু, মুলা, গাজর, শালগম, ওলকপি, বিটকপি, শাকআলু, মাটিআলু। মাটির উপরের সকল সব্জি খাওয়া যাবে।
- মিষ্টি কুমড়া কম খাবেন।
- কামড়ে খেতে হয় এমন ফল খাওয়া যাবে। যেমন: আপেল-নাসপাতি অর্ধেক, বরই ৫-৬ টি, ছোট কলা ১টা বড় অর্ধেক, আমড়া, পেয়ারা, কামরাঙা, জলপাই, কাচা শসা ইচ্ছে মতো।
- রসালো ফল। যেমন: কমলা, আঙ্গুর, আনার, আনারস, লিচু, আম, কাঁঠাল, তরমুজ, পাকা বেল, পেঁপে, জাম্বরা কম খাবেন।
- চিনি/গুড় দিয়ে তৈরী মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না।
- চর্বি জাতীয় খাবার যেমন: গরু/খাসীর মাংস, চিংড়ি মাছ, মগজ, কলিজা, নারকেল, ডিমের কুসুম কম খাবেন।
- প্রতিদিন ৩০ মিনিট মধ্যম গতিতে হাঁটবেন সপ্তাহে অথবা ০১ দিন ০৪ বার খালি পেটে, নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের ২ ঘন্টা পরে রক্তের সুগার পরীক্ষা করে লিখে রাখবেন এবং পরবর্তী ভিজিটে রিপোর্ট নিয়ে দেখা করবেন।
খ) খাবারের উদাহরণ:
১. সকালের নাস্তা (৮.০০-৯.০০ টা)
- হাতে বানানো রুটি ২/৩ টা
- সব্জি ইচ্ছে মত
- ডিমের সাদা অংশ ১ টা
- চিনি ছাড়া চা
২. বেলা (১০.০০-১১.০০ টা)
- ১ টা রুটি+সব্জি অথবা ১ কাপ মুড়ি অথবা ১ কাপ চিড়া ভিজানো
- মিষ্টি ছাড়া বিস্কুট ২/৩ টা
- সাথে যে কোনো ১টা ফল
৩. দুপুরের খাবার (২.০০-৩.০০ টা)
- ভাত (মাঝারী সাইজের) ২/৩ কাপ
- সব্জি ইচ্ছে মতো
- ডাল ১ কাপ
- মাছ/ মাংস ২ টুকরা
৪. বিকালের নাস্তা (৫.০০-৬.০০ টা)
- মুড়ি ১ কাপ+দুধ ১ কাপ (স্বর ছাড়া) অথবা বিস্কুট চিনি ছাড়া ৩/৪ টা
- ফল ১ টা
৫. রাতের খাবার (০৮.৩০-৯.০০ টা)
- হাতে বানানো রুটি ২/৩ টা
- সব্জি ইচ্ছে মতো
- ডাল ১ কাপ
- মাছ/মাংস ২ টুকরা
গ) যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে:
- মিষ্টি জাতিয় খাবার
- ডুবোতেলে ভাজা খাবার
- অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার
- চর্বি জাতিয় খাবার; যেমন- ডালডা, ঘি ইত্যাদি
- গরু, খাসী, হাঁস ও পাখির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে
যে খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস রোগী ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে কিংবা ব্যায়াম ও ওষুধের মাধ্যমে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন এবং অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের কাছে পাবেন প্রয়োজনীয় ক্যালরি সমৃদ্ধ ডায়েট চার্ট, সেটাই হবে আসল ‘ডায়াবেটিক খাবার’। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে রক্তের তেল-চর্বির মাত্রাও।
মেডিকেলবিডি/আরএম/ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১