
গরমে লেবুর শরবত পানের উপকারিতা
লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিস এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, পেকটিন প্রভৃতি, যা ওজন কমায় ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, লেবুর সরবতের গুণাগুণে রোগ প্রতিরোধ করে, সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করতে অব্যর্থ, স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফুসফুস পরিষ্কার করে হাঁপানি সমস্যার উপশম করে।
রোগ প্রতিরোধক
লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আয়রন, যা ঠাণ্ডা-জ্বর জাতীয় রোগের বিরুদ্ধে বের কার্যকর। লেবুর রসে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও, লেবুর রসে থাকা এ্যাসকরবিক এসিড পেট জ্বালাপুড়া দূর করে; এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট দূরীকরণে সহায়ক। লেবুর শরবত কফ কমাতেও সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক
শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে লেবু পানি। ফলে ইউরিনেশন ভাল হয়। লিভার ভাল থাকে।
ত্বক দাগ মুক্ত রাখে
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়া রুখে অ্যাকনে সমস্যার সমাধান করে। রক্ত পরিষ্কার রেখে ত্বকের দাগ ছোপ দূরে রাখে।
এনার্জি বাড়িয়ে মুড ভাল রাখে
লেবু খেলে শরীরে পজিটিভ এনার্জি বাড়ে। উত্কণ্ঠা ও অবসাদ দূরে রেখে মুড ভাল রাখতে সাহায্য করে লেবু।
পিএইচ ব্যালান্স
লেবু শরীরের পিএইচ ব্যালান্স সঠিক রাখতে সাহায্য করে। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড মেটাবলিজমের পর ক্ষার হিসেবে কাজ করে। ফলে রক্তের পিএইচ ব্যালান্স বজায় থাকে।
লিম্ফ সিস্টেম
গরম পানিতে লেবু দিয়ে খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। শরীরে ফ্লুইডের সঠিক মাত্রা বজায় রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি, রক্তচাপজনিত সমস্যা দূরে রাখে। ঘুম ভাল হয়।
লিভারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত লেবু পানি খেলে লিভারে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে লিভারের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
লেবু পানির ভেতরে যে কেবল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে, তা নয়, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেল ঠিক থাকে
ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু পানি খেলে দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
টিবি রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে, টিবি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে লেবুর মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যদি খাওয়া যায়, তাহলে ওষুধের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগের প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন লেবু পানি খাওয়া শুরু করলে দেহের বেতরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এত মাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে
হাজারো বিউটি প্রডাক্ট যা করে উঠতে পারেনি, তা লেবু পানি নিমেষে করে ফেলতে পারে। আসলে এই পানীয়তে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান ত্বকের হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে। সেইসঙ্গে ত্বকের বয়স কমানোর পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস এবং বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, গরমকালে ত্বককে ঠাণ্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে লেবুর পানি দিয়ে বারে বারে মুখটা ধুতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।
এনার্জির ঘাটতি দূর হয়
ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি না খেয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস করে লেবুর পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে দেখবেন শরীর চনমনে হয়ে উটতে সময়ই লাগবে না। আসলে লেবুর ভেতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে সকাল সকাল শরীর এবং মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে উঠতে একেবারেই সময় লাগে না।
শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা কমে
যারা অ্যাস্থেমা বা কোনও ধরনের রেসপিরেটরি প্রবলেমে ভুগছেন তারা যত শীঘ্র সম্ভব রোজের ডায়েটে লেবুর পানিকে অন্তর্ভুক্ত করুন। দেখবেন কেমন ফল পান! আসলে এই পানীয়টি শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত একাধির জটিলতাকে কমিয়ে ফেলতে দারুন কাজে আসে।
স্ট্রেস এবং অবসাদের থেকে মুক্তি মেলে
একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত লেবুর পানি খেলে স্ট্রেস একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে অবসাদের প্রকোপও কমে। আসলে লেবু পানিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে এমন সব সমস্যা নিমেষে কমে যেতে শুরু করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
লেবু পানিতে থাকে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এমন রোগে যারা বহু দিন ধরে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকাল-বিকাল লেবু পানি খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন দারুন ফল পাবেন। তবে এমনটা করার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন।
মুখ গহ্বরের নানা রোগ নিমেষে সেরে যায়
মুখ থেকে খুব দুর্গন্ধ বেরয়? এদিকে নানা কিছু করেও সুরাহা মিলছে না? তাহলে আজ থেকেই লেবু পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন বদ গন্ধ একেবারে কমে যাবে। শুধু তাই নয়, মাড়ি থেকে রক্ত পাত এবং দাঁতে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা হলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
সংক্রমণের প্রকোপ কমে
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ। তাই তো লেবু পানি যে কোনও ধরনের সংক্রমণ, বিশেষত গলার সংক্রমণ কমাতে দারুনভাবে সাহায্য় করে থাকে। এক্ষেত্রে লেবু পানি দিয়ে গার্গেল করলেই উপকার পাওয়া যায়।
ওজন কমায়
লেবুতে থাকা পেকটিন ফাইবার খিদে কমাতে সাহায্য করে। সকালে উঠে গরম পানি দিয়ে লেবু খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ওজন কমে।
লেবুর সরবত কিভাবে বানাবেন
পরিষ্কার কুসুম গরম পানিতে লেবুর সরবত বানান। উষ্ণ গরম পানিতে টাটকা লেবুর অর্ধেক চিপে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে ঝাঁকিয়ে নিন।
সতর্কতায় ক্ষতি নেই
লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই শরবত খাবার পরে কুলি অথবা ব্রাশ করে ফেলতে পারেন।
দিনে বার বার চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খাওয়াতে শরীরের ক্ষতির কোনো কারণ নেই। তবে অনেকের ধারণা, যাদের ব্লাড প্রেসার লো তারা লেবু খেলে ব্লাড প্রেসার আরো লো হতে পারে l দীর্ঘমেয়াদি উপকারিতা পেতে নিয়মিত লেবু পান করতে হবে। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ পানীয় পান করবেন।