ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে সুস্বাস্থ্য রক্ষা

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে সুস্বাস্থ্য রক্ষা

মেডিকেলবিডি ডেস্ক: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। তাই যথাযথভাবে ইবাদত করার জন্য দরকার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা। একজন মুমিনের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া এই সুস্বাস্থ্য অন্যতম একটি আমানত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূল সা: বলেন- দু’টি নেয়ামতের বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষ অসতর্ক ও প্রতারিত হয়ে থাকে। দু’টি নেয়ামত হলো- সুস্থতা ও অবসর। (বুখারি শরিফ ৫/২৩৫৭)।

‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে সর্ব প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা প্রসঙ্গে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দেইনি?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৫৮)। ইসলামের দৃষ্টিতে ‘অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম।’

আধুনিক যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান ইসলামের সেই থিওরি স্বীকার করে ঘোষণা করে, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়। রোগাক্রান্ত হলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেয়া ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে জরুরি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতেন এবং তার অনুসারীদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন।

তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দার! তোমরা চিকিৎসা নাও, কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাহলো বার্ধক্য।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৭)।
রাসূল সা: অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে বলেছেন এবং এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন।

তিনি হালাল-হারাম প্রসঙ্গে হারাম বস্তু ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা যেমন রোগ দিয়েছেন তেমনি রোগের প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক রোগেরই চিকিৎসা রয়েছে সুতরাং তোমরা সুস্থতার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে হারাম বস্তুকে চিকিৎসায় ব্যবহার কোরো না।’

সুস্থ থাকতে ইসলামী নির্দেশনা: ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলা ও অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জরুরি ছিলো। মৌলিক কয়েকটি স্বাস্থ্য রক্ষা বিধি মেনে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব। যেমন-

  • খাদ্য ও পানীয়: মানুষের রোগ ব্যাধির অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য পথ্য ও পানীয় সংক্রান্ত। সব রোগের মূল কেন্দ্রস্থল মানুষের পেট। তাই খাদ্য গ্রহণের জন্য পরিমিত মাত্রায় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিভোজন করতে নিরুৎসাহিত করেছে। সাথে সাথে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হারাম খাদ্য নিষিদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছে, ‘তোমরা খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ: ৩১)।
  • হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসূলে করিম সা: বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য দিয়ে, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।’ (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং ৩৩৮৯)। রাসূলে করিম সা: কখনো পেটপুরে খেতেন না। পরিমিত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি।
  • খাদ্যদ্রব্য সব সময় ঢেকে রাখা ও কিছু পান করার সময় তাতে ফুঁ দেয়া নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, এতে রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। অন্য হাদিসে আছে, ‘খবরদার! তোমরা পানিতে ফুঁ দিয়ো না।’ (তিরমিজি শরিফ)। আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়টিকে জোর দিয়ে আমল করার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ চা কিংবা পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করলে তাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশে আমাদের দেহে ক্ষতিকারক জটিলতা তৈরি করার আশঙ্কা রয়েছে।
  • খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধৌত করার প্রতি ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। কারণ, হাতে বিষাক্ত জীবাণু থাকায় রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
    ক্স দৈহিক পরিশ্রম: নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। শরীর সবল ও সতেজ রাখার জন্য শরীরচর্চামূলক খেলাধুলা, ব্যায়াম ও সাঁতার কাটা প্রভৃতির প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আবার সময় হলে বিশ্রামের জন্য যথা সময়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা ও ঈমানের অঙ্গ। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সমাজে বিভিন্ন ধরণের রোগ ছড়ায়। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলে কারিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের বাড়ির আঙিনা সব দিকে পরিষ্কার রাখবে। তোমরা ইহুদিদের অনুকরণ করো না। যেমন তারা বাড়িতে আবর্জনা জমা করে রাখে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৯৯)। তাছাড়া কেউ যদি মেসওয়াক, অজু, গোসল, পোশাক-আশাক প্রভৃতির ক্ষেত্রে ইসলামী নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে সে অপরিচ্ছন্নতাজনিত রোগব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। কোনো রোগ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ।
  • দৈহিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও জরুরি। বরং মানসিক সুস্থতা দৈহিক সুস্থতার পূর্বশর্ত। কারণ, মানসিক প্রশান্তি ও উৎফুল্ল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ইসলাম মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রেখে বৈবাহিক জীবন অর্থাৎ পারিবারিক ব্যবস্থার প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের ইবাদত ব্যবস্থা ও জিকির-আজকারের দ্বারাও মানসিক প্রশান্তি ও দৈহিক শান্তি বৃদ্ধি হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জেনে রাখো! আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সূরা রাদ: ২৮)।
  • ইসলামে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করা নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, তাতে রোগব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। হাদিস শরিফে আছে, রাসূলে করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাকো, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৬)।

ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম, যেখানে মানবতার কল্যাণ ও সফলতার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সেখানে তাই করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কেউ যদি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলে তাহলে সে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। সময় একটি পবিত্র আমানত, তাই সময়ের প্রতি বাড়তি মনোযোগী হওয়া দরকার। মেডিকেলবিডি/এএনবি/ ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

2 × three =