
অতি ক্রিয়াশীল মূত্রাশয় কি?
ওভার এক্টিভ ব্লাডার বা অতি ক্রিয়াশীল মূত্রাশয় একটি বিব্রতকর সমস্যা। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। রোগের তীব্রতা কিছুদিন বেড়ে যায়, আবার কিছুদিন একটু সহনীয় পর্যায়ে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে এশীয় মহিলাদের ১৬-৫৩ শতাংশ স্থান বা দেশভেদে ওভার এক্টিভ ব্লাডারের সমস্যায় ভুগছেন।
স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মূত্রাশয়ে কিডনি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আসা মূত্র এসে জমা হতে থাকে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমা হলে আমাদের প্রস্রাবের বেগ হয় এবং যথাযথ সুযোগ ও স্থান না পেলে বেশ কিছু সময় পর্যন্ত প্রস্রাব ধরে রাখা যায়। কিন্তু অতি ক্রিয়াশীল মূত্রাশয় রোগে মূত্রথলিতে সামান্য প্রস্রাব জমলেই মূত্র ত্যাগের প্রবল তাড়া অনুভূত হত। যা দমন করা কষ্টকর। ফলে রোগী এ তাড়া বা আর্জেন্সি থেকে মুক্তি পেতে ঘন ঘন প্রস্রাব করে। এ সমস্যা রোগীর জীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রথম প্রথম বাইরে বের হলেই কাছাকাছি টয়লেট খুঁজে রাখে। ধীরে ধীরে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বাইরে বের হওয়াই কমে যায়।
চিকিৎসা :
চিকিৎসার শুরুতেই যথাযথ রোগ মূল্যায়নের জন্যে রোগীকে তিন থেকে পাঁচ দিনের ব্লাডার ডায়েরি বা পানীয় গ্রহণ এবং মূত্র নিঃসরণের তালিকা তৈরি করতে দেওয়া হয়। এ রোগের চিকিৎসায় এ চার্ট অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। রোগী আগে থেকে যেসব ওষুধ খান, তাও ভালোভাবে নিরীক্ষা করতে হয়। রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষার পর এবং ব্লাডার ডায়েরি বিশ্লেষণ করে ও প্রস্রাব পরীক্ষা করেই চিকিৎসক এ রোগের অন্য কোনো কারণ থাকলে তা বের করতে পারেন। প্রয়োজনে আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহায়তা নিতে হয়।
অন্য কোনো কারণ না পাওয়া গেলে ওভার এক্টিভ ব্লাডারের চিকিৎসা শুরু করা হয়। প্রথমত রোগীর জীবনাচরণ ও অভ্যেসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে। যেমনঃ
১. ধূমপান পরিহার করা।
২. অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা।
৩. পায়খানা পরিষ্কার রাখা।
৪. প্রস্রাবের পরিমাণ ও আবহাওয়ার উষ্ণতার উপর নির্ভর করে পরিমিত পানি পান (কখনোই অতিরিক্ত নয়)
৫. যেসব পানীয়তে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়, যেমন : চা, কফি, কিছু ফলের রস, বিভিন্ন কোমল পানীয় ইত্যাদি পান করা কমিয়ে দিতে হবে।
৬. ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
৭. রোগীকে তার মূত্রদ্বার, যোনিপথ ও মলদ্বারের চারপাশের মাংসপেশিগুলোকে (পেরিনিয়াল মাংসপেশি) নিয়মিত বিরতিতে সংকোচন ও প্রসারণের ব্যায়াম শিখতে ও করতে হবে।