বাত থেকে বাঁচতে কী কী নিয়ম পালন করতে হবে

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বাত থেকে বাঁচতে কী কী নিয়ম পালন করতে হবে

* শোওয়ার খাটটি  সবসময় শক্ত রাখবেন। নরম বিছানা চলবে না। শোবেন একটা পাতলা তোষকের ওপর, গদি থাকবে না। শোবেন একটা পাতলা তোষকের ওপর, গদি থাকবে না। সব থেকে ভালো হয় একটা তক্তপোষের ওপর পাতলা তোষক পেতে শুতে পারলে। নরম বালিশ ব্যবহার করবেন না। বালিশও যেন শক্ত এবং পাতলা হয়।

* বসার চেয়ারটি যেন শলীরের দিক দিয়ে সুবিধাজনক হয় । চেয়ার-টেবিলে কাজ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে কোনোটাই যেন বেশি উচু বা নীচু না হয়। সবসময় শারীরিক আরামের দিকটা খোয়াল রাখতে  হবে। ছোট চেয়ারে বসবেন না।

* পড়া বা লেখার সময় বেশি ঝুঁকে পড়বেন না। অনেকক্ষণ ধরে ঝুঁকে পড়াশোনা চলবে না। অনেক সময় বাচ্চাদের দেখা যায় মেঝেতে বসে ঘাড় ঝুঁকিয়ে পড়াশোনা করতে। এটা কিন্তু ভীষণ মারাত্মক। বাচ্চাটির বাত না থাকলেও ঘাড়ের বাত (স্পন্ডিলোসিস) হতে বেশি সময় লাগবে না।

* লেখাপাড়ার সময় চেয়ার-টেবিলে বসে পড়া জরুরি। পিঠ সোজা রেখে পড়া দরকার। বড়রাও বসার সময় পিঠ টান করে বসবেন। সামনের দিকে ঝুঁকে বা পাশে হেলে বসবেন না।

* কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কাজ করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী জিনিস তুলবেন না। এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে হাঁটু, কোমর, ঘাড়ে বেশি চাপ না পড়ে।

* ঠান্ডাতে বেশিক্ষণ বসে থাকা ঠিক নয়। এসি ঘরে, কম্পিউটারের সামনে অনেকক্ষণ বসে যারা কাজ করেন তাদের আজকাল বেশি করে বাতে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।  তাই এসি ঘরেও বেশিক্ষণ ধরে থাকা ঠিক হবে না। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক পরিবেশ, স্বাভাবিক উষ্ণতায় থাকার অভ্যাস করা ভালো।

* প্রতিদিন দেহ সয় এমন ব্যায়াম বা কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হেব। অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম যেমন চলবে না, তেমনই একেবারে অলস জীবনযাপন করাও ঠিক হবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোওয়ার পর থেকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দেহ নিতে পারছে এমন পরিশ্রম বা কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। হালকা ব্যায়ামও চলতে পারে।

* খেলোয়াড়দের উচিত খেলাধুলোর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা। আগে থেকে সাবধান হওয়া। শরীর নেয় এমন খেলাধুলোই তাদের করা উচিত। এ তো গেল খোলোয়াড় জীবন পর্ব। খেলোয়াড়োত্তর জীবনেও প্রতিদিন হালকা ধরনের ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। বডি কনট্যাক্ট গেম (ফুটবল, ক্রিকেট,হকির মতো খেলা) যারা খেলেন তাদের কিন্তু আজীবন শরীর ওয়ার্মিং আপ করার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।

* যখন তখন খাওয়াটাও কিন্তু কোনো সু-অভ্যাস নয়। সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। আজকে লাঞ্চ-ডিনার যাই বলুন না কেন সময়মতো ঘড়ি ধরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। পেটে সয় এমন খাবারই খাদ্যতালিকায়  রাখতে হবে।

* রেড মিট এড়িয়ে চলাই ভালো। গাউটের সমস্যা (রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হওয়া) হলে পাঠা বা খাসির মাংস, মেটে, শিম, টমেটো, ঢ্যাড়শ, মাছের ডিম, কিংবা ইলিশ মাছ আদপেই চলবে না। মাংস খাওয়াটা একেবারেই ত্যাগ করতে হবে। বেশি তেল-ঘি-মাখন খাওয়াটাও চলবে না।

* বেশি মোটা হলে বিপদ আসতে পারে। তাই থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া দরকার শরীরে হাইপো থাইরয়েডিজম আছে কি না।

* একেবেকে না বসে ঠিকমতো আদব কায়দায় বসতে হবে। সঠিক ভাবে বসার অভ্যাস করতে হবে।

* পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। খুব বেশি স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া বা ঠান্ডা জায়গায় থাকা চলবে না। এর থেকে শরীরে বাত হতে পারে।

* কোল্ড ড্রিঙ্কস্ পুরোপুরি ত্যাগ করাই ভালো ।

* অ্যালার্জি হয় এমন কোনো ওষুধ খাওয়া চলবে না। যেসব খাবার-দাবার থেকে অ্যালার্জি হয় তা এড়িয়ে চলতে হবে।

* মনে রাখতে হবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেও বাত হতে পারে। তাই দেহের পুষ্টি যাতে ঠিকঠাক হয় তার দিকে নজর দিতে হবে। দেহে কোনো অসুখ যদি তাকে তাহলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটে। যার থেকে বাত আসতে পারে। তাই এ বিষয়েও সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে।

* কী গ্রীষ্ম কী শীতে অনেকেরই রাতে স্নান করার অভ্যাস আছে। তাও আবার ঠান্ডা জলে কিন্তু এ থেকে শরীরে বাত ধরতে পারে। তাহলে উপায় কী ? ঠান্ডা জলে স্নান করার বদলে গরম জলে গা মুছে নেওয়া যেতে পারে এর থেকে সমস্যা তেমন একটা আসে না।

* অনেকে শীতকালে  ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গরম জামাকাপড় পরেন। এর ফলে ঠান্ডা হয়তো কমে কিন্তু শরীরে প্রচুর ঘামের  সৃষ্টি হয় যা থেকেও বাতের সমস্যা আসতে পারে। আবার যারা গরম কালে বেশি গামেন এবং ওই ঘেমো জামাকাপড় দীর্ঘক্ষণ পরে থাকেন তাদেরও বাত হতে পারে। সোজা কথা হল দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বা গ্রহণযোগ্য তাপমাত্রার হেরফের হলেও কিন্তু বাত হতে পারে।

বাসের কন্টাক্টর, ট্রাফিক পুলিশ কারখানার শ্রমিক, ডেলি প্যাসেঞ্জার বা সাধারণ গৃহবধূ যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজকর্ম করেন তাদের হাঁ টুতে বা কোমরে বাত হতে দেখা যায়। আবার উল্টোটাও আছে। যেমন বাস ড্রাইভার, লরি ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর-এরা দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে বসে কাজ করেন। এদেরও বাতের প্রকোপ হতে পারে।

বাতের এতগুলো বিধিনিষেধের কথা বলার কোরণ একটাই-নিয়ম ভাঙলেই বাত, রোহই নেই করোরই। এই পালনীয় কর্তব্যগুলো যে কেবল বেতো রোগীদের সাথে সাথে সাধারণ মানুষজন যারা এখনও বাতের ঘায়ে কাবু হননি, তারাও মেনে চলবেন। কারণ আজ বাতে না ধরলেও কাল ধরতে পারে। তাই আগে থাকতে সাবধান হওয়াই  বাঞ্চনীয়।

ডা. মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান

পেইন প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ
যোগাযোগ:- ডিপিআরসি হাসপাতাল লি: (১২/১ রিং-রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭)
শ্যামলী ক্লাব মাঠ সমবায় বাজারের উল্টো দিকে
সিরিয়ালের জন্য ফোন: ০১৯৯-৭৭০২০০১-২ অথবা ০৯ ৬৬৬ ৭৭ ৪৪ ১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

two − one =