
হোম কোয়ারেন্টাইন ও বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য করণীয়
যারা করোনা ভাইরাস সংক্রমিত দেশ থেকে বাংলাদেশে আসছেন তারা নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলুন
• আপনাকে দেয়া স্বাস্থ্য তথ্যের কার্ডটি যথাযথভাবে পূরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিন।
• আপনি যদি যাত্রাকালীন সময়ে বা অবতরণের পর অসুস্থ বোধ করেন (জ্বর ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি বা কাশি বা গলা ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট) তাহলে কাশি শিষ্টাচার (টিস্যু বা কনুইভাজ দিয়ে নাক মুখ ঢেকে) মেনে কেবিন ক্রু বা এয়ারপোর্ট হেলথ ডেস্কে সাথে সাথে জানান। আপনাকে এম্বুলেন্সের মাধ্যমে নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে।
• আপনি যদি সুস্থ হন তাহলে বাড়ি ফেরার জন্য সম্ভবপর ক্ষেত্রে গণপরিবহন এড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স বা নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করুন এবং যাত্রা পথে গাড়ির জানালা খোলা রাখুন ও মাস্ক ব্যবহার করুন। বাড়ি ফেরার পর ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকুন এবং এসময়ে নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন-
– চিকিৎসাসেবা নেবার জন্য হাসপাতালে যাওয়া ব্যতীত সর্বক্ষণ বাসায় থাকুন।
– বাড়ির বাইরে কাজে, স্কুল, কলেজ অথবা জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
– আলো বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন। সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন এবং ঘুমানোর জন্য আলাদা বিছানা ব্যবহার করুন।
– সম্ভবপর ক্ষেত্রে আলাদা গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে অন্যদের সাথে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান ও ঐ স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
– বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা বুকের দুধ খাওয়াবেন। শিশুর কাছে যাবার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
– অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করুন, কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন, সাবান পানি দিয়ে বার বার হাত ধুয়ে নিন এবং গণ পরিবহন এড়িয়ে নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করুন উপরে উল্লেখিত নিয়মে।
– বাসায় থাকাকালীন সময়েও বারবার সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড) এবং ব্যবহৃত বিভিন্ন স্থান (যেমন টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, মেঝে ইত্যাদি) দিনে কয়েকবার এলকোহল যুক্ত জীবাণুনাশক বা সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
– অপরিষ্কার হাতে নাক, মুখ, চোখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
– এই সময়ে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা দিলে আইইডিসিআর হটলাইন +8801944333222, +8801937000011, +8801937110011, +8801927711784, +8801927711785, +8801550064901-05 অথবা 16263 বা 333 নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন সময়ে যা করতে পারেনঃ
– কোভিড-১৯ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানার জন্য এই পেইজে এবং WHO, CDC ও IEDCR ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।
– পরিবার/বন্ধুবান্ধবের সাথে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটে যোগাযোগ রাখুন। শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝান, খেলার সামগ্রী দিন, খেলনা বারবার জীবাণুমুক্ত করুন ।
– নিয়মিত খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি বজায় রাখুন।
– সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করুন।
– মনকে শান্ত করে এমন কাজ করুন। এই সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাধারণত যা করার অবসর হয়না যেমন বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, অথবা উপর্যুক্ত নিয়মগুলোর পরিপন্থী নয় এমন বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির পরিচর্যাকারী নিজে মাস্ক ব্যবহার করুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, কোয়ারেন্টাইনকৃত ব্যক্তির ১ মিটার (৩ ফুট) দূরত্বে থাকুন এবং তাকে নিয়মানুসারে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে উৎসাহিত করুন।
মনে রাখবেন উপযুক্ত কোনো ব্যক্তির উপর কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা অমান্য করা এবং তথ্য গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর আওতায় কারাদণ্ড ও অর্থদন্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। তথ্যসূত্র: আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আমার মতে করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক হতে প্রতিরোধ করাই উত্তম। যেভাবে করোনা ভাইরাস হতে প্রতিরোধ পাওয়া যাবে-
১। মাস্ক ব্যবহার করা;
২। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা;
৩। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা;
৪। হাঁচি, কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করা;
৫। সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা অথবা Hand Sanitizar যেমন- Hexsal ব্যবহার করা;
৬। মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া;
৭। কাঁচা মাংস বা আগুনে ঝলসানো মাংস (বার-বি-কিউ) এড়িয়ে যাওয়া;
৮। সর্বোপরি পার্সোনাল হাইজিন মেনে চলা।
উপরোক্ত উপদেশসমূহ মেনে চললে করোনা ভাইরাসসহ যেকোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুখ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। মনে রাখবেন প্রতিষেধক থেকে প্রতিরোধক সবসময় উত্তম।
ডা: মো: রহমতউল্যাহ (শুভ)
এম,বি,বি,এস (চায়না)
ইন্টার্ণ চিকিৎসক নোয়াখালী সদর, হাসপাতাল।
মেডিকেলবিডি/এএনবি/ ১৬ মার্চ, ২০২০