শুভর বয়স ১১ বছর। নিয়মিত খেলাধুলা ও পড়াশোনা করে। হঠাৎ একদিন রাতে শোয়ার সময় তার মনে হতে লাগল পায়ের নিচে কেমন যেন একটা কামড়াচ্ছে। মনে মনে ভাবল আজকে হয়তো একটু বেশি খেলাধুলা বা দৌড়াদৌড়ি করেছে। সেজন্য এমটি হচ্ছে। যা হোক পাত্তা না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে যেয়ে দেখে তার দু’টি পা যেন অবশ হয়ে গেছে এবং কেমন ঝিনঝিন করছে। পা দুটি খুব একটা নাড়াতে পারছেন না। মাকে ডাকতে লাগল। বাবা-মা কাছে এসে শুভর এই অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখনই হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন দু-চার সপ্তাহ আগে শুভর কোনো পাতলা পায়খানা, আমাশয় বা সর্দিকাশি জ্বর হয়েছিল কিনা ? মা বললেন- দু তিন সপ্তাহ আগে সামান্য একটু আমাশয় মতো পায়খানা হয়েছিল, কিন্তু ওটা এত সামান্য যে ওষুধ পর্যন্ত লাগেনি।
আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন
ডাক্তার সাহেব ছোট একটা হাতুড়ি মতো যন্ত্র্র দিয়ে হাতে ও পায়ে হালকা বাড়ি দিয়ে দেখলেন, কোন রিফলেক্স নেই। তারপর বললেন শুভর জিবিএিস হয়েছে। শুভর বাবা-মা কেনো দিন এই রোগের কথা শোননেনি। এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করাতে ডাক্তার বললেন জিবিএস এর পুরো নাম গুলেন ব্যারি সিন্ড্রোম রোগটি নার্ভে হয়। সাধারণত এই রোগ হওয়ার দু-চার সপ্তাহ আগে রোগীর ডায়রিয়া, আমাশয় বা সর্দিকাশি হয়। এ উপসর্গগুলো ভালো হয়ে যায় এবং দু-চার সপ্তাহ পর হঠাৎ করে দুই পা প্যারালাইসিস হয়। অর্থ্যাৎ ওই ডায়রিয়া, আমাশয় বা সর্দিকাশি হওয়ায় শরীরের মধ্যে যে রিঅ্যাকশন হয় সেটি নার্ভের ওপরে হয়। তার জন্য প্যারালাইসিস হয়।
নার্ভকে তুলনা করা যেতে পারে ইলেকট্রিক তারের সাথে । অর্থ্যাৎ ইলেকট্রিক তারের বাইরে যেমন প্লাস্টিক থাকে বলে মাইলিন এর ওপর রিঅ্যাকশন করে এটাকে নষ্ট করে দেয়। এটা নষ্ট হয়ে গেলেও- এটা তৈরি হয় কিন্তু তারের ভেতর যেটা ধাতু আছে, নার্ভের ভেতরও আছে তাকে এক্সজন বলে। এটা নষ্ট হলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সুতরাং রিঅ্যাকশন যদি এটার ওপর হয় তবে খুব খারাপ।
এই রোগ প্রথমে দুই পায়ের পাতার ওপর হয় তারপর ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠে অর্থ্যাৎ পায়ের পাতা উরু বুক হাত ও মুখমন্ডল। প্রথম চার সপ্তাহ ধরে এই রোগ কেবল বাড়ে। বাড়তে বাড়তে যদি বুক ধরে তবে রোগী একা একা শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না। মেশিনে শ্বাস-প্রশ্বাস না করাতে পারলে রোগীর শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চার সপ্তাহের পর রোগটি আর বাড়ে না। তখন ভালো হওয়া শুরু হয় এবং যদি তারের বাইরের প্লাস্টিকটির ওপর রিঅ্যাকশন হয়ে থাকে তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়, কিন্তু তারের ধাতুটা ধরলে পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। সবার যে প্রথম চার সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ে তা নয়।
ডায়াগনসিস
রোগের ইতিহাস শুনলেই এবং রোগীকে পরীক্ষা করলেই ডায়াগনসিস করা হয়। কনফার্ম বা সঠিক জানার জন্য দুটি পরীক্ষা করা হয়। দুটিই আমাদের দেশে হয়।
নার্ভ কনডাকশন টেস্ট এবং ইএমজি (NCS & EMG)
পিট থেকে ব্রেনের রস নিয়ে পরীক্ষা। (CSF)
চিকিৎসা
সাধারণত কোনো ওষুধ লাগে না। একাই ঠিক হয়ে যায়। হালকা ব্যায়াম ও ভিটামিন দেয়া হয়। কিন্তু প্রথম চার সপ্তাহ পর্যন্ত খুব সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। অর্থ্যাৎ যদি ওপরের উঠতে উঠতে বুক ধরে ফেলে, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখন মেশিনে শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া রোগীর হার্ট রেট ও ব্লাডপ্রেসার ঘন ঘন দেখতে হয়। যদি নার্ভের এক্সন ধরে অথবা বুক ধরে বা ধরার কাছাকাছি যায় তবে একটি দামি ঔষধ ইনট্রাভেনাস ইম্মুনোগ্লাবিন দেয়া হয়। এই ঔষধ দিতে প্রায় লাখখানেক টাকার বেশি খরচ পড়ে।
পোলিওর সাথে এই রোগের পার্থক্য
পোলিওর প্যারালাইসিস হওয়ায় সময় বেশ জ্বর থেকে। পোলিওর প্যারাইসিস হয় এক দিকে কিন্তু জিবিএসের দুই পাশে একসাথে হয়। পোলিওর প্যারাইসিস পায়ে হলে পায়ের ওপরের অংশে হয়, কিন্তু জিবিএস হলে দুই পায়ে হবে এবং পায়ের নিচের অংশে হবে।
উপদেশ
সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষার অর্থ্যাৎ আগস্ট থেকৈ অক্টোবর পর্যন্ত বেশি পেটের পীড়া হয়। তাই এই সময় বেশি জিবিএস রোগ দেখা দেয়। সেজন্য এই সময় যাতে ডায়রিয়া, আমাশয় না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বাইরের খোলা খাবার বা হাত ঠিকমতো না ধুয়ে খাওয়া মোটেই ঠিক নয়। ডায়রিয়া সামান্য হলেও জিবিএস সামান্য নয়। জিবিএস ও পোলিও দুটি রোগই ভিন্ন। পোলিও যাতে না হয়, সেজন্য নিয়মিত ভ্যাকসিন নেয়া উচিত। পোলিও হলে পুরোপুরি সুস্থ হয় না। শরীরের একটা অঙ্গ হানি করে যায়। জিবিএস ছোট-বড় সবার হতে পারে।