বয়স হলে স্মৃতি কি হারিয়ে যায়?

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

বয়স হলে স্মৃতি কি হারিয়ে যায়?

প্রবীন বয়সের অধিকাংশ মানুষদের স্মৃতিশক্তির নিম্নগতির অন্যতম নির্দিষ্ট কারণ হলে তারা তাঁদের বুদ্ধি-বিশ্লেষণ এবং কল্পনা-দৃশ্যণ-ভিত্তিক মগজের ক্ষমতাগুলোকে খুব বেশি কাজে লাগান না। কারণ, তাদের মধ্যে অনেকেই কর্মজীবন থেকে অবসরপ্রাপ্ত এবং তারা সহজ- সরল উত্তেজনাপূর্ণ ঘঁনাবিহীন জীবনযাপন করেন তাঁদের মগজাস্ত্রের ওই ধারালো ক্ষমতাগুলোকে কাজে লাগাবার বিশেষ প্রয়োজন হয় না।

ঘটনাচক্রে ‘স্মৃতি’ কথাটা একটু বিদঘুটে ধরনের। ওই প্রসঙ্গটা উঠলেই মনে হয় আমরা যে কোনও একটা মানসিক ক্ষমতার কথা ভাবছি। গত পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময়ব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে স্মৃতি নানান রুপে দেখা দেয়। স্মৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য আবিষ্কার করে কোনও কোনও বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছেন।

যেমন, একটা উদাহরণ হল- স্বপ্লকালীণ (short-time) এবং দীর্ঘকালীন (long-term) স্মৃতি। আপনার স্বপ্লকালীন স্মৃতি হল যেটা আপনাকে কিছুমাত্র সময়ের জন্য মনে রাখতে হবে। যেমন একটা ল্যান্ড ফোন বা সেল ফোনের নম্বর, অথবা একটা ইমেইল এড্রেস। আপনি ফোন করার সময় বা ইমেইল পাঠানোর সময় যেটা স্মৃতি প্রকোষ্ঠ থেকে চট করে বেরিয়ে আসবে, কোনও অসুবিধা হবে না। বিশেষজ্ঞরা স্বল্পকালীন স্মৃতির সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন মাত্র ১ মিনিটে। ওই শ্রেণীভুক্ত হবে সেইসব তথ্য। যেগুলো ১ মিনিটের বেশি মনে রাখার প্রয়োজন হবে না।

স্বপ্লকালীণ স্মৃতির ক্ষমতাটাকে বজায় রাখতে গেলে ওই একটা মিনিট সম্পূর্ণভাবে ওই তথ্যটার ওপরে মন:সংযোগ করতে হবে।

মনটাকে অন্য সব রকমের তথ্য থেকে মুক্ত রাখতে হবে। স্মৃতি গঠনে এই পদ্ধতিটা বয়সে ছোট, মাঝারি কি প্রবীণ- সবার ক্ষেত্রেই খাটে।

দীর্ঘকালীন স্মৃতি হল সেই স্মৃতির বিভাগ যেটাতে ১ মিনিটের বেশি সময়ব্যাপী যেসব তথ্য মনে রাখার প্রয়োজন সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। অর্থ্যাৎ ১ মিনিট অতিক্রান্ত হযে যাবার পরেও যেসব তথ্য স্মৃতির প্রকোষ্টে জমা থাকবে, সেই শ্রেণীর স্মৃতি। এছাড়া রয়েছে কার্যকরী স্মৃতির টুকরোগুলোকেই আমরা আলাদা আলাদা করে বা একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে, যুক্ত করে নানান কাজে লাগাচ্ছি দৈনন্দিন জীবন কাটাতে।

দীর্ঘকালীন স্মৃতি বা (long term memory) যে শ্রেণী, তার মধ্যে যে যে পৃথক বিভাগের অবস্থান, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া ভিত্তিক স্মৃতি (procedural memory)। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়: সাইকেল বা গাড়ি চালানোর ক্ষমতা, সেতার বোনার ক্ষমতা, কম্পিউটারে কাজ করার ক্ষমতা বা বাঁশি বাজানোর ক্ষমতা। এই ক্ষমতাগুলোর পিছনে যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া-সংশ্লিষ্ট স্মৃতি রয়েছে সেগুলো। কোনও এক সময়ে আপনি যে কাজটা শিখেছিলেন, আর আজ এখন সেই কাজটা করতে গিয়ে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচালনায় সাহায্য করছে আপনার ওই পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ামূলক স্মৃতি। ওই স্মৃতিগুলো ঢোকানো রয়েছে আপনার মগজের অচেনতন স্তরের গভীরে।

এবং অভ্যাস বা practice এর গুণে ওগুলো automatic এর পর্যায়ে চলে গেছে। আপনার মনের অচেতন স্তরের প্রক্রিয়াগুলো সবল-সতেজ-সক্রিয়া থাকার ব্যাপারটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যাস ছেঢ়ে দিলে ওগুলোতে মরচে পড়ে যাবার সম্ভাবনা। যেমন ১৯৯৫ সাল থেকে আমি মোটরগাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়েছি। বিশ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। আমার ওই কাজটার কোন অভ্যাসই নেই। এখন তাই নতুন করে গাড়ি চালাতে হলে আবার চালিয়ে চালিয়ে অভ্যস্ত হতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ব্রেন ক্যানসারের সেই আতঙ্ক এখন আর নেই।

গণ সচেতনতায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

three × 3 =