নিয়মিত ডিম খাওয়া যাবে কি না?

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

নিয়মিত ডিম খাওয়া যাবে কি না?

মেডিকেলবিডি ডেস্ক: ডিমের মধ্যে আছে পানি, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন-এ, ই, বি-৬, বি-১২, ফলেট, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, খনিজ পদার্থ যেমন জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ইত্যাদি। বলতে গেলে ডিমে সব ভিটামিনই কমবেশি থাকে, তবে ভিটামিন-সি কিন্তু নেই।

শরীরের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোলিন, যা কেবল ডিমেই বেশি পাওয়া যায়, অন্যান্য সহজলভ্য খাদ্যে ততটা পাওয়া যায় না। খাদ্যেও এ উপাদানগুলো ডিম খেলে সহজেই পাওয়া যায় এবং দামেও সাশ্রয়ী। ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন, ভিটামিন বি-১২, রাইবোফ্ল্যাভিন, ফলেট ও ভিটামিন-ডি রয়েছে, তা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেয়।

এমনকি অনেকদিন ফ্রিজে সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়াজানত মাংস খাওয়ার চেয়ে ডিম ভালো বিকল্প খাদ্য হতে পারে। এছাড়া আমাদেও আমিষের মূল উৎস ডিম, মাছ, দুধ ডাল এবং যে কোনা মাংস যেমন হাঁস, মুরগি, গরু, ভেড়া, মহিষ, খাসি ইত্যাদি। তুলনা করলে দেখা যায়, মাংস এমনকি দুধের দামও বেশি সে হিসেবে ডিম বেশ সস্তা, প্রোটিনের অন্যতম উৎস। ডিমে সুলভমূল্যে উচ্চমাত্রার প্রোটিন পাওয়া যায়।

নিয়মিত ডিম খাওয়া যাবে কি?

প্রতিদিন বা নিয়মিত ডিম খাওয়া যাবে কি, যাবে না? এ নিয়ে ডাক্তার, রোগী এমনকি সুস্থ মানুষের মাঝেও বিভ্রান্তি বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এবং এখনো আছে। বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগী অথবা যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা অন্যান্য চর্বির পরিমাণ বেশি, তাদেরকে ডিম খেতে নিষেধ বা সম্পূর্ণ বর্জন করতে বলা হয়। অনেকেই এমনকি কিছু কিছু চিকিৎসক আবার ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটুকুই খেতে বলেন।

এর কারণ তাদের ধারণা একটাই, তা হলো ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ে, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আসলে এতদিনের এ ধারণাটা মোটেই সত্য নয়। ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ততটা বৃদ্ধি পায় না। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারেন। আর একটি ডিমে রয়েছে মাত্র ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।

তাই বিশেষজ্ঞগণ এমনকি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এখন আর তাদের খাদ্যের গাইডলাইনে ডিম খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করছেন না। যেকোনো ব্যক্তি ডিমের সাদা অংশ খেলে কোনো সমস্য তো হবেই না, এমনকি কুসুমসহ সম্পূর্ণ ডিম খেলেও উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকির আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

আরেকটি বড় গবেষণায় প্রতীয়মাণ হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ৫-৬টি ডিম খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা অন্যান্য ধরণের হৃদরাগের জটিলতা তৈরি হবে এমন কোনো ঝুঁকি নেই। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে বলা হয়, দিনে একটি ডিম হার্টের জন্য ক্ষতিকর নয়। সকালের নাশতায় বরং একটি ডিম কোলেস্টেরল প্রোফাইলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না, যতটা প্রভাব ফেলে আপনার সকালের নাশতায় মিষ্টি বা চর্বিজাতীয় খাবার খেলে।

কোন ডিম ভালো- হাঁস না মুরগি? লালচে না সাদা?

অনেকে হাঁস বা মুরগির ডিম এমনকি সাদা বা লালচে ডিম খাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আসলে সব ধরণের ডিমের পুষ্টিগুণ একই রকম। তবে হাঁসের ডিমে প্রোটিন ও চর্বিও মাত্রা সামান্য বেশি, খেতে কোনো মানা নেই। আবার কোয়েলের ডিম নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, যা আকারে ছোট। ৫টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমান। পুষ্টিগুণ কিন্তু একই রকম আবার এ কথাও সত্য, ডিম যেভাবেই রান্না হোক, এর পুষ্টিগুণ কিন্তু একইরকম।

দিনে কয়টি ডিম খাওয়া যাবে?

তরুণরা এবং যারা বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন, তারা নিয়মিত ডিম খেতে পারেন, এমনকি দিনে ২-৩টি ডিম খাওয়ার সম্পূর্ণ নিরাপদ। বয়স্করাও সপ্তাহে ৫-৬টি ডিম খেতে পারবেন। আর যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছেন, তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত। তবে কিডনি অকেজো বা রেনাল ফেইল্যুরের রোগী ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন, কারণ কিডনি ফেইল্যুরে প্রোটিন কম খাওয়া উচিত। কারো কারো বেলায় ডিম খেলে অ্যালার্জিজাতীয় সমস্যা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দেশি ডিম ও ফার্মের ডিমের মধ্যে কোনটি ভালো?

দেশি ডিম ও ফার্মের ডিমের পুষ্টিগুণে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। তবে ফার্মের ডিমের ওজন দেশি ডিমের প্রায় দ্বিগুণ। তাই ফার্মের ডিম খেলে পুষ্টির পরিমাণ বেশি পাওয়া যাবে। তবে অনেকের কাছে দেশি ডিমের স্বাদ ফার্মের ডিমের চেয়ে বেশি মনে হওয়ায় এর চাহিদা বেড়ে যায়।

যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি তারা কি ডিম খেতে পারবেন?

ডিম হাই কোয়ালিটি প্রোটিন হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন ও ক্ষতিকর চর্বি কম থাকে। তাই যাদেও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি তাদের জন্য মাংসের চেয়েও ডিম নিরাপদ।

বাচ্চাদের জন্য ডিম কতটা উপকারী?

দুধের পরে ডিম হলো সর্বোচ্চ মানের প্রোটিনের উৎস। ডিম খনিজ, ভিটামিন এবং অন্যান্য বিভিন্ন দিক থেকে বাচ্চাদের জন্য উপকারী। ডিমের কুসুমও বাচ্চাদের জন্য খাওয়া ও হজম করা সহজ। তাই প্রতিদিন বাচ্চাদের কমপক্ষে একটি করে ডিম খাওয়ানো উচিত। মেডিকেলবিডি/ এএনবি/ ২০ জানুয়ারি, ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

eighteen + three =