মেডিকেলবিডি ডেস্ক: কেস-১: রোগী এবং তার হাসবেন্ড এসে জানালো তাদের নরমাল ডেলিভারি করানোর প্রস্তুতির কথা। এর মধ্যে আছে হোমিও প্যাথিক ওষুধ, বেশি বেশি ভিটামিন ওষুধ না খাওয়া (কারণ বাচ্চা বড় হয়ে যাবে) এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া (ডেলিভারি সহজ হবে) ইত্যাদি। শুনে কিছুটা হতাশ হলেও অপেক্ষা করলাম ডেলিভারি পেইন ওঠার। শেষ পর্যন্ত যখন ব্যথা উঠল রোগী এবং তার আত্মীয় স্বজনের রিকোয়েস্টে সিজার করা হলো।
কেস-২: বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হিসেবে এই রোগীটি ছিল অনেক আহ্লাদী। সাধারণত দেখা যায় এমন মেয়েরা সিজারিয়ান এর ব্যাপারে আগ্রহী হয়। তবে সে জানালো নরমালে বাচ্চা নিতে ইচ্ছুক, তাই প্রতিদিন ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ভিডিও দেখে পরামর্শ নিচ্ছে এবং এক্সারসাইজ করে যাচ্ছে। পরবর্তীতে দেখা গেল তার গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা জরায়ুর নিচে অবস্থিত তাই সিজারিয়ানের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বাচ্চা ডেলিভারি করতে হলো।
উপরের দুটি সিনারিও আমার দুইজন প্রেসেন্টের, যারা সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে এসেছিলেন। এরা দুজনেই নরমাল ডেলিভারি এক্সপেক্ট করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছিল। আসলে নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে অস্বাভাবিক পন্থায চেষ্টা-চরিত্র চালানোর কোনো প্রয়োজন নাই। তবে ইদানিং দেখা যায় মায়েরা অত্যাধিকভাবে সচেতন হওয়ার কারণে কুসংস্কারগুলো ফলো করতে থাকে এবং স্বাভাবিক/ সিম্পল পথ থেকে দূরে সরে যায়। তাই কিভাবে স্বাভাবিক ডেলিভারির জন্য হবু মায়েরা প্রস্তুত হতে পারেন তার কিছু গাইডলাইন দেয়া হলো:
প্রথমত: একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেইনন্টেন করতে হবে- যাতে শরীরের ওজন (BMI) স্বাভাবিক থাকে। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা কমে যায় এবং ডেলিভারির সময় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে।
যাদের প্রেগনেন্সির পূর্ব থেকেই বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সমস্যা যেমন প্রেসারবা ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে, যাতে প্রেগনেন্সি কালীন সময় এ সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যাদের একবার সিজার হয়েছে তারাও পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এটি ডিপেন্ড করবে পূর্ববর্তী সিজার কি কারণে হয়েছিল এবং আরো কিছু ফ্যাক্টর এর উপর। বাংলাদেশের কিছু কিছু কর্পোরেট হসপিটালে এই ডেলিভারি প্র্যাকটিস করা হয়।
প্রেগনেন্সির প্রথম থেকেই মায়েদের উচিত নরমাল এক্টিভিটি চালিয়ে যাওয়া। কিছু কিছু প্রেগন্যান্ট মায়েরা (প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, প্রিটার্ম ডেলিভারির হিস্ট্রি ইত্যাদি) ছাড়া অন্য সবাই এসময় হালকা থেকে মাঝারি মানের ব্যায়াম এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারবেন। অনেকে প্রেগনেন্ট হলেই ভাবেন এখন তাকে রেস্টে থাকতে হবে, যার ফলে ডায়াবেটিস, প্রেসারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিজঅর্ডার হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা কমে যায়।
মানসিক প্রস্তুতি এখানে একটি বড় ভূমিকা রাখে। সব মায়েদেরই মনে রাখতে হবে নরমাল ডেলিভারি একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া হলেও মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই এর সুফল রয়েছে। আর ডেলিভারি পেইন সহ্য করার মত মানসিক প্রস্তুতি শুধু মাকে নিলেই চলবে না, পরিবারের অন্যান্যদের উৎসাহ এবং সাপোর্ট এক্ষেত্রে অতি জরুরী।
ডেলিভারি পেইন উঠানোর জন্য কোনো ধরণের ওষুধ বা খাবারের দরকার হয় না, এটি একটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রক্রিয়া যা স্বাভাবিক নিয়মে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পরও না হলে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ইন্ডাকশন এর মাধ্যমে ডেলিভারি পেইন উঠানো সম্ভব। এজন্য অধিক টেনশন বা দুশ্চিন্তা না করে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শে থাকবেন।
সবশেষে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সব রকম মানসিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে যখন নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করলে মা ও বাচ্চা উভয়ের ক্ষতিহতে পারে, এ সময় সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি না করাই ভালো। সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহর উপর ভরসা করে একটি সুস্থ বাচ্চা আশা করা উচিত। ডা: নুসরাত জাহান, এসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি), মেডিকেলবিডি/এএনবি/ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯