আমাদের বর্তমান জীবন যাপন ব্যবস্থা আর আগের দিনের মধ্যে অনেক ব্যবধান। তাই অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ব্যায়াম করা খুবই জরুরি বা একটু বিশেষ যত্নবান হওয়া। আমরা জানি, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি ঠিক তেমনি চোখ ভালো রাখতেও দরকার চোখের ব্যায়াম। যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখবো- আমাদের বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রার ধরণ এমনই যে সহজেই চোখ আক্রান্ত হচ্ছে নানা সমস্যায়। বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, টিভি দেখা ও মোবাইল স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকা এইসব আমাদের চোখের উপর ফেলছে স্থায়ী প্রভাব। আর ঠিক এই সমস্ত কারণেই চোখে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয় যেমন- চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, জ্বালাপোড়া, মাথা ব্যথা কিংবা চোখের পেশি চুলকানি ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য সমস্যা।
আমাদের শরীরের অতি মূল্যবান একটি অঙ্গ হচ্ছে চোখ আর এর সুস্থতার জন্য আমাদের একটু সচেতন থাকা জরুরি। যারা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ও মোবাইলে ফোন ইত্যাদির দিকে তাকিয়ে থাকেন তাদের জন্যে চোখের ব্যায়াম গুলো আরও বেশি জরুরী। তো চলুন জেনে নিই কি কি ব্যায়াম আপনি করতে পারেন।
ব্যায়াম ১- ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলা
যারা কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন বেশি মাত্রায় ব্যবহার করেন তাদের চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাদের জন্য ব্যায়াম হচ্ছে একটানা না তাকিয়ে থেকে ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলা। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় সাধারণের তুলনায় ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন। এতে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
ব্যায়াম ২- নির্দিষ্ট কোন বস্তুর দিকে তাকানো
সোজা হয়ে আরাম করে বসে মাথা স্থির রেখে একবার বাঁদিকে ও একবার ডানদিকে যত দূর সম্ভব তাকান। বাঁ দিকের কোনো বস্তুর ওপর পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এবার চোখ স্বাভাবিক করে কয়েকবার পলক ফেলুন। একই প্রক্রিয়া ডান দিকে অনুসরণ করুন। এভাবে ১০ বার করুন।
ব্যায়াম ৩- খানিকটা চোখ বন্ধ রাখা
কাজের ফাঁকে খানিকটা সময় চোখ বন্ধ করে রাখুন। হাতে হাত ঘষে হাতের তালু কিছুটা গরম করে নিয়ে বন্ধ চোখের ওপর রাখুন। হাতের তালু এমনভাবে রাখবেন যাতে ভেতরে কোনো আলো না যেতে পারে। ২ মিনিট এভাবে চোখ বন্ধ রাখুন। দিনে বেশ কয়েকবার এভাবে করুন। এতে চোখের রক্ত সরবরাহ বাড়বে এবং চোখের পেশি সক্রিয় থাকবে।
ব্যায়াম ৪- ঘড়ির কাটার মত ঘুরানো
মাথাটা স্থির রেখে চোখের মণি দুটি একবার ঘড়ির কাঁটার দিকে ১০ বার ঘোরান। এরপর একইভাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে মণি দুটি ঘোরান আরও ১০ বার। চোখের মণি ঘুরিয়ে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও অন্যান্য জ্যামিতিক আকার আঁকুন।
ব্যায়াম ৫- ফোকাস
আরাম করে বসার পর হাতের এক আঙুল মুখ থেকে ১০ ইঞ্চি দূরে রেখে তার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। এরপর দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ১০ থেকে ২০ ফুট দূরের কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার পর ফোকাসের বিষয়টি পরিবর্তন করে এ ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। ফোকাস বা দৃষ্টি দেওয়া ব্যায়ামটি চোখের অভ্যন্তরীণ মাংসপেশির।
ব্যায়াম ৬- চোখ পিটপিট করা
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর টানা দুই মিনিট চোখ পিটপিট করুন। এই ব্যায়াম আপনার চোখের রক্তসরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করবে। কিছুক্ষণ পর পরই এই ব্যায়াম করলে সুফল পাবেন।
ব্যায়াম ৭- লক্ষ্য স্থির করে তাকানো
এক হাত দূরে একটি কলম নিয়ে সোজা কলমটির দিকে তাকিয়ে থাকুন। তারপর ধীরে ধীরে কলমটিকে কাছাকাছি নিয়ে আসেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কলমটিকে ঘোলাটে দেখা যায়। এরপর আবারও কলমটিকে ধীরে ধীরে কাছে থেকে দূরে নিয়ে যান। খেয়াল রাখুন, চোখের দৃষ্টি যেন কলমের দিকে থাকে।
ব্যায়াম ৮- চোখের পাতার উপর ম্যাসাজ
চোখের অশ্রুনালির কাছে হালকা চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করলে চোখের আর্দ্রতা বাড়ে এবং চোখের প্রশান্তি দেয়। চোখের পাতার ওপর মৃদুভাবে তিন আঙুল দিয়ে চক্রাকারে ম্যাসাজ করতে পারেন। ১০ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও ১০ বার বিপরীত দিকে এ ম্যাসাজ করুন। চোখের দুই পাতার মাঝখানে তিনবার ম্যাসাজ করতে পারেন।
ব্যায়াম ৯- চোখ বন্ধ রাখা
মাথাটা স্থির রেখে চোখ দুটো বন্ধ করুন। এবার ধীরে ধীরে চোখের মণি দুটো একবার ওপরে ও একবার নিচে করুন। এভাবে করুন ১০ বার। চোখের আরামের জন্যে উপকার পাবেন।