আমরা জানি, রমজান মাস মুসলিমদের জন্য এক বিশাল নিয়ামতের মাস এবং এই মাসে সিয়াম পালন করতে হয়। সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় গ্রহণসহ অনেক কিছু হতে বিরত থাকার মাধ্যমেই মূলত রমাদানের সিয়াম পালন করতে হয়। রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা অন্য মাস হতে কিছুটা ভিন্ন। চলুন জেনে নিই বিস্তারিতভাবে।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের পরিবর্তন
- খাওয়ার সময়, পরিমাণ, প্রকার পরিবর্তন হয়।
- ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ পরিবর্তন হয়।
- তারাবির নামাজের জন্য, অন্যান্য দিনের তুলনায় কায়িক শ্রম বেড়ে যায়।
রমজানের সুবিধা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
একমাসের রোজা পালনে ডায়াবেটিস রোগীরা নিম্নোক্ত শারীরিক সুফল পেয়ে থাকেন যেমন:
- প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
- রমজানে বিপাক ক্রিয়া পরিশুদ্ধ হয়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রনে আসে।
- শরীর বিপাকক্রিয়াজাত বর্জ্যমুক্ত হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজাকালীন নানাবিধ সমস্যাগুলো
সাধারণত রমজানে রোজাকালীন সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর নিম্নে উল্লেখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে যেমন:
- রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া
- ডিহাইড্রেশান বা শরীরে পানি শূন্যতা
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া
- থ্রম্বোসিস বা শরীরের রক্ত নালী বন্ধ হয়ে যাওয়া
- কিটোএসিডোসিস বা শরীরে কিটোএসিড নামক এসিড বেড়ে যাওয়া
যারা রোজা রাখতে পারবেন আর যারা পারবেন না।
নিম্নে উল্লেখিত ডায়াবেটিস রোগী ছাড়া সাধারণত অন্য ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা পালন করতে পারবেন এতে কোন সমস্যা নেই।
- যাদের ডায়াবেটিস জনিত খুব বেশী চোখের সমস্যা বা রেটিনোপ্যাথিতে আছে।
- যাদের ডায়াবেটিস জনিত খুব বেশী কিডনি সমস্যায় আছে।
- যাদের ডায়াবেটিসজনিত হৃদরোগ, স্ট্রোক রয়েছে।
- যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই যেমন- রক্তে গ্লুকোজ ৩০০ মিলিগ্রামের বেশী।
- যাদের শরীরের ভিতরকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু, যা হৃদযন্ত্র, অন্ত্র প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে তা বিকল রয়েছে।
- যারা রক্তে গ্লুকোজ কমা বুঝতে পারেন না।
- গর্ভবতী ও যেসব মহিলা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন।
- ডায়াবেটিস বেড়ে গিয়ে প্রাণঘাতী সমস্যা যেমন- কিটোএসিডোসিস বা হাইপারঅসমোলার কোমা রয়েছে গত তিন মাসের মধ্যে।
- যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য দিনে কয়েকবার ইনসুলিন নেয়া লাগে।
রমজানে রোজা পালন করতে গেলে যা জানা প্রয়োজন
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা?
- ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অন্য কোন জটিলতা আছে কিনা?
- ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারবেন কি না?
- রমজানের অন্তত এক মাস আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রমজানে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় যা যা করণীয়?
মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস রোগীর সবার চিকিৎসা এক রকম না, প্রতিটা রোগীর চিকিৎসাই আলাদা আলাদা হতে পারে।
- রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার দাবার:
- ক্যালরি গ্রহনের পরিমান একই থাকবে।
- খাওয়া ২-৩ ভাগ করতে হবে, যেমন- ইফতার, রাতের খাওয়া, সেহেরি।
- ইফতারের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার, ভাজা-পোঁড়া কম খাবেন। পানি বেশী পরিমানে পান করবেন।
- ইফতারও সেহেরিতে অন্য খাবারের সাথে সবজি, ফল ও রাখবেন।
- সেহেরির শেষ সময়ে সেহেরি খাবেন।
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক অনুশীলন
- দিনের বেলা ব্যয়াম করবেন না
- ইফতারের ১ ঘণ্টা পর বা তারাবির পর ব্যয়াম করতে পারবেন
- ব্যয়াম একটু বাড়িয়ে করবেন
- মনে রাখবেন- তারাবির নামাজেও কিছুটা ব্যয়াম হয়ে যায়
ঔষধে মাধ্যমে চিকিৎসা
ঔষধ কোনভাবেই নিজে নিজে পরিবর্তন করবেন না। আবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন, তবে জেনে রাখতে হবে বুঝার জন্য
দিনে এক বার সালফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষধ। সকালের ঔষধ ইফতারের সময় নিবেন
দিনে ২ বার সালফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষধ
সকালের ঔষধটা ইফতারে, এবং রাতেরটা অর্ধেক করে সেহেরিতে নিবেন
দিনে ৩ বার মেটফরমিন জাতীয় ঔষধ- দুইবেলারটা একসাথে ইফতারের পর, এক বেলারটা সেহেরিতে।
ইনসুলিন: সারাদিন কাজ করে এই রকম ইনসুলিন যা দিনে একবার নিতে হয়- ২০%-৩০% কমিয়ে আগের নিয়মে রাতে ব্যাবহার করবেন।
যেসব ইনসুলিন দিনে দুই বার নিতে হয়-সকালেরটা ইফতারে এবং রাতেরটা অর্ধেক করে সেহেরিতে নিবেন।
ইনসুলিন: ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা পালন অবস্থায় চামড়ার নীচে ইনসুলিন নিতে পারবেন, এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।