আপনি যৌন রোগে ভুগছেন- কিভাবে বুঝবেন? ‘লজ্জা নয় জানতে হবে‘

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

যৌন রোগ বা সমস্যা হলে পরীক্ষা করাতে কোনভাবেই লজ্জা পাওয়া উচিত। বেশিরভাগ যৌনবাহিত রোগ উপসর্গ সৃষ্টি না করলেও কিছু রোগ এমন লক্ষণ প্রকাশ করে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে রোগভেদে এসব উপসর্গ ভিন্ন হয়ে থাকে।’ যদি আপনি কোনো ধরনের আনপ্রোটেক্টেড সেক্স বা অনিরাপদ যৌনক্রিয়া করেন, তাহলে আপনার কোনো ধরনের যৌনবাহিত রোগ আছে কিনা তা নির্ণয় করতে স্ক্রিনিং করানো প্রয়োজন হবে।

যৌনবাহিত রোগের কিছু রেড ফ্ল্যাগ বা সতর্কীকরণ নির্দেশক বা উপসর্গ। ঘা, পিণ্ড ও ফোস্কা: ‘কিছু কমন যৌনবাহিত রোগ যন্ত্রণাদায়ক অথবা ব্যথাবিহীন লাম্প বা পিণ্ড, ব্লিস্টার বা ফোস্কা ও ঘা সৃষ্টি করতে পারে।’ যেমন: সিফিলিস এক বা একাধিক ব্যথাবিহীন ঘা সৃষ্টি করতে পারে, যা আলসার নামেও পরিচিত।

আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন

‘আপনি আলসার দেখতে পারেন এবং এটির ওপর আঙুল রাখলে তা অনুভব করতে পারেন।’ কিন্তু এই ঘা আপনাকে ব্যথা দেবে না, অথবা আপনি জ্বালাতন অনুভব করবেন না। অন্যদিকে, হার্পিস ছোট ফোস্কা সৃষ্টি করতে পারে এবং তা ফেটে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষতে পরিণত হতে পারে।

আপনার পায়ু, মুখ, জ্বিহ্বা, গলা, শিশ্ন, অণ্ডকোষ ও কুঁচকিতে যৌনবাহিত রোগজনিত ইনফেকশন হতে পারে। যদি আপনার জেনিটাল বা গোপনাঙ্গ বা এর আশেপাশে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখেন, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। আপনার মুখ, গলা অথবা পায়ুতে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হবে যদি আপনি সম্প্রতি আনপ্রোটেক্টেড সেক্সে লিপ্ত হয়ে থাকেন।

অস্বাভাবিক ডিসচার্জ:

যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক বা যন্ত্রণাদায়ক পেনাইল ডিসচার্জ অথবা জ্বালাপোড়াসহ ডিসচার্জ কোনো যৌনবাহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে, যেমন- গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া বা ট্রিচোমোনিয়াসেস। ‘এই ডিসচার্জ সাদা বা স্বচ্ছ বা জলীয় হতে পারে। তবে ডিসচার্জ কেমন হবে তার কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই।’ ডিসচার্জ আপনার পেনিসকে সবসময় লিকআউট প্রবণ করতে পারে। যদি আপনার পেনিস চেপে ধরেন এবং কিছু তরল বের হয়, তাহলে তা উদ্বেগের বিষয়। আপনার তখন সর্বাধিক ডিসচার্জ হতে পারে, যখন মূত্রত্যাগ করবেন না। আপনার অন্তর্বাসে দাগ লক্ষ্য করবেন, অথবা যখন মূত্রত্যাগ করতে যাবেন তখন আপনার অন্তর্বাসে কিছু দেখবেন।’

জ্বর:

অনেক মেডিক্যালীয় দশার কারণে জ্বর হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে হলেই যে সবসময় উদ্বিগ্ন হতে হবে এমনটা নয়। কিন্তু যদি আপনি সম্প্রতি রিস্কি সেক্স বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে থাকেন এবং আপনার হঠাৎ জ্বর বিকশিত হয়, তাহলে তা কোনো যৌনবাহিত ইনফেকশন নির্দেশ করতে পারে। মায়ো ক্লিনিক অনুসারে, এইচআইভি ও হেপাটাইটিসের মতো কমন যৌনবাহিত রোগের কারণে জ্বর ডেভেলপ হতে পারে।

অন্যান্য সম্ভাব্য উপসর্গ:

যৌনবাহিত রোগ আপনার অণ্ডকোষ অথবা পায়ুতে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এসব স্থানে সংবেদনশীলতা বা চুলকানি হতে পারে। আপনার কুঁচকি, পায়ু কিংবা মুখের আশেপাশে স্কিন র্যাশ ডেভেলপ হতে পারে।  সিফিলিসের দ্বিতীয় পর্যায়ে (প্রাথমিক পর্যায়ে ফোস্কা ওঠার তিন থেকে ছয় সপ্তাহ পর এই পর্যায় শুরু হতে পারে) আপনার হাতের তালু বা পায়ের পাতায় অমসৃণ, লাল বা বাদামী স্পট ডেভেলপ হতে পারে।

কীভাবে যৌন রোগ প্রতিরোধ করতে হয়: এসব রোগ যাতে না হয়, সে জন্য-

  • যাদের অনেক যৌন সঙ্গী আছে তাদের সাথে সঙ্গম এড়িয়ে চলুন ।
  • সব সময় সাবান ও পানি, বিশেষ করে যৌন সঙ্গমের পর যৌনাঙ্গ ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন।
  • রোগীর যৌন সঙ্গীর চিকিৎসা নিশ্চিত করুন, যাতে এই রোগ অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়।

কনডম ব্যবহার করুন। কেউ যদি মনে করে তার যৌন রোগ আছে তাহলে দ্রুতচিকিৎসা করানো উচিত। শুরুতে যৌন রোগের চিকিৎসা করা সহজ, পরে চিকিৎসা করা কঠিন।

চিকিৎসা না হলে যা ঘটতে পারে:

সংক্রমণের চিকিৎসা যদি তাড়াতাড়ি না হয়, তাহলে তা যৌনাঙ্গের বাহির থেকে যৌনাঙ্গের ভিতর প্রবেশ করবে। মহিলাদের বেলায় এটা জরায়ু টিউব ও ডিম্ব কোষ এবং পুরুষের বেলায় অন্ডকোষ আক্রমণ করবে। এটা প্রথম দিকে সাংঘাতিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে মহিলা বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে অথবা পুনঃ পুনঃ গর্ভ নষ্ট হতে পারে অথবা মৃত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।

পুরুষেরা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিরার অন্যান্য যৌন সঙ্গীর মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়বে। গর্ভবতী মহিরার যৌন রোগের চিকিৎসা না হলে, বাচ্চা যৌনরোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।

চিকিৎসা:

  • ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
  • নিয়মিত এবং পরিমিত শারীরিক শ্রম বজায় রাখতে হবে।
  • উচ্চতা অনুসারে কাঙ্খিত দৈহিক ওজন অবশ্যই ঠিক থাকতে হবে।
  • পুরুষকে তার নিজের ও তার সঙ্গীর সাথে মধুরতর সম্পর্ক সৃষ্টি ও বজায় রাখতে হবে।

যৌন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্কতা প্রতিটি সুস্থ-স্বাভাবিক পুরুষ-নারীর জন্য জরুরি। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যেও যৌনতার প্রয়োজন। এটি জীবনের একটি অন্যতম নিয়ামক। পুরুষ-নারীর জন্যে যৌন-স্বাস্থ্যের সুস্থতা অবশ্যই জরুরি এবং প্রয়োজনীয়। ডাক্তারের কাছে বা বিশেষজ্ঞের কাছে আপনার যেকোনো প্রকার শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা, যেগুলো আপনার যৌনজীবনের সাথে সম্পৃক্ত সে ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে পরামর্শ নিন। যৌন সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুন।

যৌন রোগ ও যৌনবাহিত রোগ এক নয়

খুব স্বাভাবিকভাবে যে সব রোগ আমাদের যৌন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে সেগুলোকেই যৌন রোগ বলা হয়। যেমন এইডস, হেপাটাইটিস বি, কিছু ভাইরাস, কিছু ব্যাকটেরিয়া ও আরও কিছু জীবাণু দ্বারা। যৌন বাহিত রোগ একটা প্রকারের যৌন রোগ কিন্তু যৌন রোগ মানেই যৌনবাহিত রোগ নয়। এর কারণ, চিকিৎসা, চিকিৎসক সবই আলাদা।

লিঙ্গ শক্ত হওয়ার অসুবিধা, দ্রুত বীর্যপাত, দেরিতে বীর্যপাত, সঙ্গমের সময় ব্যথা অনুভব, মিলনে সঠিক তৃপ্তির অসুবিধা, যৌন ইচ্ছার কমতি বা বাড়তি, এলোমেলো যৌন আচরণ সহ আরও অনেক অসুবিধা আছে যেগুলো যৌন রোগ কিন্তু যৌনবাহিত রোগ নয়।

যৌনবাহিত রোগ যেমন জীবাণু দিয়ে হয় তেমনি অন্যান্য প্রকার যৌন রোগ বিভিন্ন কারণে হয়। যৌন স্বাস্থ্যকে অবহেলা না করে কোনো অসুবিধা মনে করলে অন্তত পক্ষে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই আসুন আমরা আমাদের যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য জানার চেষ্টা করি ও সেটা মেনে চলি।

ডাঃ সাঈদা শারমিনা রহমান

চর্ম ও যৌন রোগ ইউনিট। চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ

চেম্বার: ডিপিআরসি হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক ল্যাব লি:

(১২/১ রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭)

ফোনঃ ০৯৬৬৬ ৭৭ ৪৪ ১১

সক্ষাতের সময়: রাত ৮টা – রাত ৯টা

(শনি, সোম, মঙ্গল, বুধ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

5 + five =