অনেকেরই হাতের তালু বা পায়ের তলা ঘামার সমস্যা আছে। যেমন লেখার সময় কাগজ ভিজে যায় তার ওপর মাঝে মাঝে কলমটিও পিছলে পরে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় কারো সঙ্গে হাত মেলাতে গেলে, টাইপ করার সময় বা বিভিন্ন কাজের সময় হাতের ভিজা ভাব অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। । তো জেনে নিন হাতের তালু ঘামা বা পায়ের তালু ঘামার প্রতিকার বিস্তারিত।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হাত ও পায়ের তালু ঘামা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম কার্যকর ঘরোয়া সমাধান দেয় । এর প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট উপাদান ত্বকের লোমকূপ টানটান করে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং শরীরের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে।
আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন
বেকিং সোডা অথবা বেবি পাউডার
হাতের তালুতে ঘাম হওয়া কমাতে বেকিং সোডা অথবা বেবি পাউডার বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে ১০ মিনিট হাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। বেকিং সোডার ক্ষারীয় উপাদান তালুর ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে হাত শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে।
পানি
শরীর ঠাণ্ডা করতে এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পানি একটি চমৎকার উপাদান, বিশেষ করে যাদের শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাদের জন্য। হাত-পায়ের তালু ঘামা কমিয়ে আনতে সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে করে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে এবং ঘাম প্রতিরোধ করবে।
টমেটোর ব্যবহার
টমেটোর রস ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে আর ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একবার টমেটোর রস পান করলে দেখবেন এর ফলাফল। এক সপ্তাহ পর খেয়াল করবেন তালুতে ঘাম হওয়া কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। সাধারণত খনিজ বা ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে ঘাম বেশি হয়। আর টমেটোতে আছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনিসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান।
গোলাপজলের ব্যবহার
হাত-পায়ের তালু ঘামা প্রতিরোধে গোলাপজল বেশ কার্যকর। সব জায়গাতেই দোকানে গোলাপজল কিনতে পাওয়া যায় অথবা ঘরে নিজেও এই গোলাপজল তৈরি করতে পারেন। কিছু তাজা গোলাপের পাপড়ি এক কাপ পানিতে ১৫ মিনিটের মতো ফুটিয়ে নিন। এবার ছাঁকনিতে পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে একটি এয়ার টাইট বোতলে সংরক্ষণ করে তুলার সাহায্যে এই পানি হাত-পায়ের তালুতে ব্যবহার করুন, উপকার পাবেন।
জিঙ্ক
জিঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে থাকে। তাছাড়া ঘাম এবং দুর্গন্ধ রোধ করতে জিঙ্ক বেশ কার্যকার। এক্ষেত্রে সহায়ক খাবার হিসেবে দিনে ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম জিঙ্ক ট্যাবলেট খেতে পারেন। অথবা প্রতিদিন সকালে জিঙ্ক অক্সাইড পাউডার হাতের তালু ঘষলেও উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি কপার সমৃদ্ধ খাবার খেতে ভুললে চলবে না কারণ জিঙ্ক শরীরে কপারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
ভুট্টার আটার ব্যবহার
ভুট্টার আটা হাত ও পায়ের তালুতে লাগালে বা ঘষলে- এটি অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার শুষে নিয়ে হাত-পায়ের তালু শুষ্ক রাখে। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন হাতের বা পায়ের তালুতে ভূট্টার আটা ঘষার। এই ভুট্টার আটা ব্যবহারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বলেই হাত-পায়ের তালু ঘামা সমস্যার ঘরোয়া উপাদান হিসেবে এটি অন্যতম।
- চার চা চামচ ভুট্টার মিহি আটা নিন
- হাত ও পায়ের তালুতে এই মিহি আটা ঘষুন
- সকালে ও রাতে একবার করে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন
রোজমেরি
এটি ভেষজ উপাদান যা স্নায়ুতন্ত্রের উপর কার্যকরভাবে প্রভাব ফেলে। আর স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে থাকলে ঘামের পরিমাণও কম হয়। তাছাড়া রোজমেরি হালকা সেডাটিভ হিসেবেও পরিচিত। সাধারণত উত্তেজিত হলেই ঘাম বেশি হয়। তাই ঘামের সমস্যা কমাতে শান্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
লেবুর রস
লেবুর রস আরেকটি কার্যকরী ঘরোয়া উপাদান ও সহজ পদ্ধতি । লেবুর রস ব্যবহার করার আরও একটি উপকারিতা হচ্ছে এর দারুণ সুগন্ধ প্রাকৃতিক ডিওডরেন্টের কাজ করে। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস হাত-পায়ের তালুতে লাগিয়ে নিন। যদি ত্বক সেনসিটিভ হয় সেক্ষেত্রে লেবুর রসের সাথে সামান্য কিছু পানি মিশিয়ে নিবেন। লেবুর রসের সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে হাত-পায়ের তালুতে ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না এটি শুকিয়ে যায় এভাবে কিছুদিন করলে দেখবেন ঘামের সমস্যা জাদুর মত দূর হবে।
অন্যান্য কিছু টিপস
- চেষ্টা করতে হবে সব সময় ঢিলেঢালা ও নরম ধরনের পোশাক পড়তে, সুতির পোশাক সবচেয়ে বেশী উপযোগী
- জুতা-মোজা সব সময় পরিস্কার রাখতে হবে এবং ব্যায়াম বা যেকোনো শারীরিক পরিশ্রমের পর মোজা বদলে নিতে হবে
- যাদের হাত ঘামার সমস্যা রয়েছে, তারা সব সময় সাথে একটা রুমাল রাখুন, ঘামভাব হলেই হাত মুছে ফেলুন
- সবুজ শাকসবজি বেশি বেশি খেতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না
- ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
- জুতা পায়ে পরার আগে পায়ে সামান্য পাউডার লাগিয়ে নিন
- হাত ও পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন না