
পেসমেকার
হৎপিন্ডের রক্তনালী ব্লক কথাটির সাথে আমরা কম বেশি পরিচিত সবাই। হার্টের স্বাভাবিক পাম্পিং কাজ, অর্থ্যাৎ ছন্দোবদ্ধ সঙ্কোচন ও প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের পাশাপাশি হার্টের যথাযথ বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজটিও নির্বিঘ্নে হওয়া প্রয়োজন। হার্টের প্রকোষ্ঠ বা চেম্বারগুলোকে যদি একটি ঘরের বিভিন্ন কক্ষের সাথে তুলনা করি, তাহলে এর পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং দরজাগুলোকে যথাক্রমে হার্টের রক্ত সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ (কার্ডিয়াক ইমপালস তৈরি এবং সরবরাহ) ও ভাল্বগুলোর সাথে তুলনা করা যায়। হৃৎপিন্ডে বৈদ্যুতিক স্পন্দনা তৈরি এবং তা হৃৎপিন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছানো একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে সারা জীবন ধরে চলতে থাকে।
ফলে হৃদপিন্ডের সঙ্কোচন ও প্রসারণের কাজটি, যা দ্বারা হৃদপিন্ড তার নিজের জন্য এবং সমগ্র শরীরে নির্বিঘেœ এবং ক্রমাগতভাবে রক্ত পাম্প করে থাকে। কখনো কখনো হার্টের এই ইলেকট্রিক সাপ্লাইতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সাধারণভাবে যাকে হার্টবক বলা হয়ে থাকে (এটি হার্টের ইলেকট্রিক্যাল রক্ত, রক্তনালীর ব্লক নয়)
আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন
হার্টব্লকের কারণ
- ০১. হৃদস্পন্দের উৎপত্তিস্থল বা সাইনাস নোড কোনো কারণে স্বাভাবিক কাজ না করলে (সাইনাস নোড ডিজিজ)
- ০২. হৃদপিন্ডের রক্তনালীতে ব্লক
- ০৩. হার্ট অ্যাটাক
- ০৪. কিছু ঔষুধের কারণে (যেমন: বিটা ব্লকার, ডিগক্সিন, ভেরাপামিল, এমাইওডেরন জাতীয় ্ওষুধ )
- ০৫. কিছু ইনেফেকশনের কারণে (যেমন-লাইম ডিজিজ)
- ০৬. অন্যান্য কিছু রোগের কারণে (যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদি)
উপসর্গ
এটা ব্লকের ধরণ এবং তা কতটুকু মারাত্বক তার ওপর নির্ভর করে। হৃদস্পনন্দের গতি যখন অনেক কমে যায়, বিশেষত মিনিটে ৪০ বারের নিচে তখন নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
০১. মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা
০২. মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া বা পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হওয়া
০৩. পরিশ্রমের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া
০৪. কখনো কখনো মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের ফলে খিঁচুনি হওয়া
উল্লেখ্য যারা নিয়মিত অ্যাথলেটিক ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকেন, তাদের হৃদস্পন্দনের গতি সাধারণত স্বাভাবিকের নিচে থাকে। এটা অস্বাভাবি কিছু নয়।
হার্টব্লক নির্ণয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর ইতিহাস/উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা এবং তার সাথে ইসিজি এং হলটার মনিটরিনামক একটি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
কখন হার্টব্লকের জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। রোগীকে আশ্বস্ত করতে হয় এবং কিছু ঔষধের পুর্নবিন্যাস করতে হতে পারে।
সেকেন্ডে ডিগ্রি হার্টব্লক- দুই ধরণের: যেমন-
ক) মবিজ টাইপ-১: সাধারণত এটিরও কোনো অ্যাকটিভ চিকিৎসার দরকার হয় না।
খ) মবিজ টাইপ-২: এর জন্য আগে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলে কিংবা এটি মাঝারি বা বড় হার্ট অ্যাটাকের পরে হয়ে থাকলে রোগীর হৃদপিন্ডে পেসমেকার স্থাপন করতে হয়। অনেক সময় মবিজ টাইপ-১ ধরণের ব্লক যদি মবিজ টাইপ-২ এ রূপান্তরিত হয় তাহলেও একই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
গ) থার্ড ডিগ্রি হার্টব্লকের চিকিৎসা সেকেন্ড ডিগ্রি হার্টব্লকের মতোই। অর্থ্যাৎ পেসমেকার স্থাপন করা।
ঘ) হৃদপিন্ডের যে জায়গা থেকে হৃদস্পন্দন তৈরি হয় সাইনো-এটারিয়াল নোড, সেটি কোনো কারণে রোগাক্রান্ত হলে (সাইনাস নোড ডিজিজ), স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট তৈরি হতে পারে না। এ ক্ষেত্রেও রোগীর হৃদপিন্ডে পেসমেকার স্থাপন প্রয়োজন হয়।
ঙ) অনেক সময় ঔষুধের কারণে হার্টব্লক হলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সেই ঔষুধ বন্ধ করে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
পেসমেকার কী
এটি ম্যাচবক্সের চেয়ে কিছুটা ছোট একটি ডিভাইস বয যন্ত্র, যা রোগীর বুকের ওপরের দিকে কলার বোনের নিচে সাধারণত বাম দিকে চামড়ার নিচে বসিয়ে দেয়া হয়। যন্ত্রের এই অংশটিকে ‘জেনারেটর’ বলে। এটি হার্টের চেম্বারের সাথে সাধারণত একটি বা দুটি সরু লম্বা লিড, এর দ্বারা যুক্ত থাকে। এই পেসমেকারটি হৃদপিন্ডের নিজস্ব বৈদ্যুতিক স্পন্দনকে সেন্স করে এবং তদনুযায়ী হৃদপিন্ডকে নিয়মিত গতিতে পাম্প করানোর জন্য ক্রমাগত বৈদ্যুতিক সিগনাল প্রেরণ করে।
পেসমেকার হৃদযন্ত্রকে তার প্রয়োজনীয় গতিতে স্পন্দিত করাতে পারে। আজকাল অনেক উন্নত প্রযুক্তির পেসমেকার ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো রোগীর শারীরিক পরিশ্রমের ধরণ কিংবা মানসিক অবস্থা অনুযায়ী হার্টবিটের গতি নিজ থেকেই বাড়াতে বা কমাতে পারে, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়ে থাকে। পেসমেকার স্থাপনের পর এমআরআই নামক পরীক্ষাটিও নিরাপদে করা সম্ভব।
পেসমেকার ফলোআপ
পেসমেকার স্থাপনের পর তা কী পরিমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ওপর এর জেনারেটরটির আয়ু নির্ভর করে। ক্ষেত্রভেদে এটি ৭-৮ বছর থেকে ১৪-১৫ বছর হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত বিরতিতে (সাধারণত ছয় মাস পরপর) এর জেনারেটরটির প্রোগ্রামিং করতে হয়। এছাড়াও কয়েক মাস অন্তর রোগীকে তার চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হয়। নিয়ম মেনে চললে প্রায় সব রোগীই পেসমেকার স্থাপন করে হার্টব্লক জনিত সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকবেন।