পলিসিস্টিক ও ভারিয়ান সিনড্রম: সমস্যা ও প্রতিকার

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

পলিসিস্টিক ও ভারিয়ান সিনড্রম ( পিসিওএস) একটি পরিচিত হরমোনের সমস্যা যা প্রতি একশত জন নারীর মধ্যে আট থেকে দশ জনের থাকতে পারে।যারা এনুভুলেশনের (ডিম্ব স্ফুটনের সমস্যা) কারনে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ জনের পিসিওএস দেখা যায়।এই সমস্যার সঠিক কোন কারন জানা না গেলেও এটিকে একটি বংশগত রোগ বলা যায়।

পিসিওএস হলে কি হয়? পিসিওএস এর প্রভাবে শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর কোন সমস্যা হয় না, তবে এটি শরীরে হরমোনের ভারসম্য নষ্ট করে।এর ফলে প্রতি মাসে ও ভারি থেকে ডিম্বাণু নির্গম ন হয় না।এই অনি্সরিত ডিম্বাণুগুলো ওভারিতে পানির থলে বাসিস্ট তৈরি করে ওভারির চারপাশে মালার মত জমা হয়।হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনে মাসিক সময় মত হয় না।কখনো কখনো মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।আক্রান্ত নারীদের ঠিকমত ওভুলেশন না হওয়ায় কনসিভ করতে সমস্যা হয়।পিসিওএস আক্রান্ত ওভারি থেকে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের নি্সরন বেড়ে যায়।এর ফলে ব্রন, কালো দাগ, শরীরের ওজন বৃদ্ধি, চুলপড়া এবং শরীরে অবাঞ্চিত পশম বেড়ে যায়।

কিভাবে সনাক্ত করণ সম্ভব? পিসিওএস সনাক্তকরণ এর জন্য কোন নির্দিষ্ট টেষ্ট বা পরীক্ষা নাই।উপরোক্ত উপসর্গগুলো যদি থেকে থাকে তবে অভিজ্ঞ গাইনী বিশেষজ্ঞের তত্বাবধানে কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ওভারিতে সিস্ট আছে কি না দেখা হয়।সাধারণত ওভারিতে দশ-বারো বা এর অধিক সিস্ট থাকলে ও ইওভারি কে পলিসিস্টিক ওভারি বলে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু হরমোন পরিমাপ করা হয়।পিসিওএস আক্রান্তদের পুরুষ হররমোনের (এন্ডোজেন এবং টেস্টস্টেরন) আধিক্য দেখা যায়। FSH ও LH হরমোনের অনুপাত পরিবর্তন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দেখে এনুভুলেশন সনাক্ত করা হয়। এছাড়া রক্তে কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা দেখা যেতে পারে।

চিকিৎসা পদ্ধতি : পিসিওএস এর নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নাই।লক্ষন এবং রোগীর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। যারা বাচ্চানিতে আগ্রহী তাদেরকে ডিম্ব স্ফুটনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষুধ দেয়া হয়।কারো কারো ক্ষেত্রে অপারেশন করার দরকার হতে পারে।সাধারণত ল্যাপারোস্কপিক রেসিস্টরাপচার করা হয় (ওভারিয়ানড্রিলিং)। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ওভারি থেকে হরমোনের অস্বাভাবিক নি:সরনকে স্বাভাবিক করে ডিম্বস্ফুটনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

যারা বাচ্চা নিতে চাননা এবং অনিয়মিত মাসিকে ভুগছেন তাদেরকে মাসিক নিয়মিত করার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ এর পিল বা প্রজেস্টেরন জাতীয় ঔষুধ দেয়া হয়।এই ঔষুধগুলো একদিকে যেমন হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে মাসিক নিয়মিত করে, অন্যদিকে পুরুষ হরমোনের মাত্রা ঠিক করে ত্বকের ব্রন ও অতিরিক্ত লোম দূর করনে সাহায্য করে।

পিসিওএস এ যারা ভুগছেন তাদের কিছু দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হবার সম্ভাবনা থাকে।পিসিওএস আক্রান্তদের শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে পারে না।এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসহ বার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কোলেস্টেরলের মাত্রা, হৃদরোগ ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুকি বেড়ে যায়।তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমে জটিলতা এড়ানো যায়। পিসিওএস এর মূল নিরাময়ক হচ্ছে নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা।সঠিক ওজন শরীরে হরমোনের ভারসম্য ফিরিয়ে আনে এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হবার ঝুকি কমিয়ে দেয়।

ডাঃ নুসরাত জাহান, সহযোগী আধ্যাপক (অবস-গাইনি),
চেম্বার: ডিপিআরসি হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব,
(১২/১, রিং-রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭)
সিরিয়ালের জন্য ফোনঃ-  +8801997702001, +8801997702002,
09666774411,  029101369, 0258154875

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

two × five =