ছেলেদের বীর্যপাতের সমস্যা (অবশ্যই পড়ুন)

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ছেলেদের বীর্যপাতের সমস্যা

বীর্যপাতের সমস্যা তিন ধরনের হতে পারেঃ

-দ্রুত বীর্যপাত (premature ejaculation)

-দেরিতে বীর্যপাত (delayed ejaculation)

-উল্টো দিকে বীর্যপাত (retrograde ejaculation)

#দ্রুত বীর্যপাত (Premature ejaculation)

দ্রুত বা কাঙ্খিত সময়ের আগে বীর্যপাত হওয়াটা বীর্যপাতের সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ। এমনটি হলে সঙ্গমের সময় ছেলেদের দ্রুত বীর্যপাত ঘটে। অনেক পুরুষই “স্বাভাবিকভাবে” বীর্যপাতের আগে কতক্ষন সঙ্গমে লিপ্ত থাকা যায় সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন। ৫ টি দেশের ৫০০ জুটির উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সঙ্গিনীর যোনিতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করানো থেকে বীর্যপাত হওয়া পর্যন্ত সময়ের গড় সাড়ে পাঁচ মিনিট। যাই হোক, বীর্যপাত হতে যে সময় লাগছে তা সন্তোষজনক কিনা, তা নির্ভর করে একজন ব্যক্তি ও তার সঙ্গিনীর উপর। সঙ্গমের স্থায়িত্বকাল কতক্ষণ হওয়া উচিত তার নির্ধারিত কোন মান নেই। মাঝে মধ্যে অসময়ে বীর্যপাত ঘটাটা স্বাভাবিক ব্যাপার, এবং এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, তবে আপনি যতবার সঙ্গমে লিপ্ত হন তার প্রায় অর্ধেক সময়ই যদি অসময়ে বীর্যপাত ঘটে থাকে তাহলে, চিকিৎসা নিলে উপকার পেতে পারেন। যাদের এই সমস্যাটি হয়, তাদের চিরকালই সমস্যাটি ছিল এমন নয়; দেখা যায় যে আগে তাদের সাভবিক বীর্যপাত ঘটত। এটিকে সেকেন্ডারি প্রিম্যাচিওর ইজ্যাকুলেশন (secondary premature ejaculation) বলে। কারও যৌন জীবন শুরু হওয়ার সময় থেকেই অসময়ে বীর্যপাত ঘটার সমস্যাটি সাধারণত দেখা যায় না।

এমন হলে তাকে প্রাইমারি বা আজীবনের প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন বলে (primary or lifelong premature ejaculation)। এমন হলে প্রায় সবসময়ই বীর্যধারনে ব্যর্থ হওয়ার কারনে লজ্জা বা হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং এর কারনে জীবনযাত্রার মানের উপর প্রভাব পড়ে, যার ফলে ওই ব্যক্তি কারও সাথে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়া এড়িয়ে চলেন।

#দেরিতে বীর্যপাত (Delayed ejaculation)

দেরিতে বীর্যপাত (male orgasmic disorder)-কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

– বীর্যপাত হতে অত্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগা

– মোটেও বীর্যপাত না ঘটা, এমনকি পুরুষটি চাইলেও এবং তার পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তায় কোন সমস্যা না থাকলেও বীর্যপাত হতে কতটা সময় লাগলে সেটিকে “অত্যন্ত দীর্ঘ সময়” বলা যাবে তার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে যদি প্রায়ই এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত হতে ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মত সময় লাগে তবে সেটিকে দেরিতে বীর্যপাতের সমস্যা বলা যেতে পারে। আবার অর্ধেকের কাছাকাছি সময় যদি আপনার মোটেও বীর্যপাত না ঘটে তাহলে সেটিকেও দেরিতে বীর্যপাতের সমস্যা বলা যায়।

দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যার মত দেরিতে বীর্যপাতের সমস্যাটিও সবসময়ই থাকতে পারে আবার হঠাত শুরু হতে পারে। এই সমস্যাটি সাধারনত কারও যৌন জীবনের শুরু থেকেই থাকেনা, এবং ১০০০ জনে একজনের মধ্যে এটি দেখা যায়। সবধরনের পরিস্থিতিতেই সমস্যাটি হতে পারে; যেমন, হস্তমৈথুনের সময় হয়ত আপনার বীর্যপাত ঘটে, কিন্তু কারও সাথে সঙ্গমের সময় দেখা যায় যে আপনার বীর্যপাত ঘটে না। কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে বীর্যপাত না ঘটলে বা ঘটতে দেরি হলে সেটি সাধারণত মানসিক সমস্যার কারনে হয়।

#উল্টো দিকে বীর্যপাত (Retrograde ejaculation)

উল্টো দিকে বীর্যপাত হওয়ার সমস্যাটি বিরল। এই সমস্যাটি হলে বীর্য ইউরেথ্রায় (urethra; যেটি দিয়ে প্রস্রাব আসে) সামনের দিকে আসার বদলে পিছনে গিয়ে মূত্রাশয়ে পড়ে। উল্টো দিকে বীর্যপাতের সমস্যার উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে কোন বীর্য বের না হওয়া (হলেও তা সামান্য), এবং সঙ্গমের পর প্রস্রাবের সময় ঘোলাটে (বীর্য মিশে থাকার কারণে) প্রস্রাব নির্গত হওয়া। উল্টো দিকে বীর্যপাত ঘটার সমস্যাটি যাদের রয়েছে তারা অর্গাজমের অনুভূতি ঠিকই পাবেন এবং এতে স্বাস্থ্যের কোন সমস্যা হয় না। তবে এই সমস্যার কারণে বাবা হতে সমস্যা হতে পারে

বীর্যপাতের সমস্যা নির্ণয়

আপনার বীর্যপাতের সমস্যা থাকলে আপনি তা আপনার যৌন আচরণ বা আপনার সঙ্গিনীর সাথে কথা বলে জানতে পারবেন। এর পরের ধাপটি হচ্ছে ডাক্তার দেখানো।

পারিবারিক ও স্বাস্থ্যসমস্যার ইতিহাস (Family and medical history)

আপানার সমস্যার উপর ভিত্তি করে আপনার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যসমস্যার ইতিহাস এবং আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে, যেমনঃ

ডায়াবেটিস (diabetes)

হৃদরোগ (heart disease)

উচ্চ রক্তচাপ (hypertension)

আপনার যৌন স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হবে। আপনার এ বিষয়ে কথা বলতে বিব্রত লাগলেও আপনার উপসর্গগুলোর বিষয়ে কথা বলাটা কার্যকর চিকিৎসা দেয়ার জন্য জরুরি।

আপনার শ্রোণিদেশে (pelvic area) কোনধরনের আঘাত পেয়েছেন কিনা বা কোন সার্জারি হয়েছে কিনা, আপনি কী ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন, কী ধরনের জীবন যাপন করেন, মদ্যপান করেন কিনা ডাক্তার তা জানতে চাইবেন।

আরও বিভিন্ন পরীক্ষা

৫০ বছরের বেশি বয়সের লোকেদের প্রস্টেট গ্ল্যান্ড (prostate gland) বড় হয়ে গেছে কিনা তা জানতে রেক্টাল এক্সামিনেশন (rectal examination) করা হতে পারে। আপনার রক্তচাপ এবং এবং হৃদস্পন্দনের গতি মাপা হতে পারে। হরমোন ও কোলেস্ট্রলের পরিমাণ মাপার জন্য রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা হতে পারে।

বীর্যপাতের সমস্যা- চিকিৎসা

যদি স্বাস্থ্যগত কারনে বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এর বিভিন্ন রকম চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। মানসিক কারনে এই সমস্যাটি হয়ে থাকলে তার চিকিৎসা কিছুটা কঠিন হতে পারে, তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নিলে বেশিরভাব রোগীই উপকৃত হন।

১. দ্রুত বীর্যপাত (Premature ejaculation)

নিজে নিজে যত্ন নিন (Self-help)

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আগে আপনি কয়েকটি জিনিস নিজে নিজে চেষ্টা করে দেখতে পারেন, যেমনঃ

সঙ্গমের এক বা দুই ঘণ্টা আগে হস্তমৈথুন করা

মোটা ধরনের কনডম ব্যবহার করে দেখুন যাতে সংবেদনশীলতা কমে যায়

স্বল্প সময়ের জন্য ইজাকুলেটরি রিফ্লেক্স (ejaculatory reflex; শরীরের একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া যার কারনে বীর্যপাত ঘটে) বন্ধ করতে লম্বা শ্বাস নিন

আপনার সঙ্গীকে উপরে রেখে সঙ্গম করুন, এতে বীর্যপাত ঘটতে পারে মনে হলে উনি সরে যেতে পারেন

সঙ্গমের সময় ছোট ছোট বিরতি নিন এবং বিরক্তিকর কোন কিছুর কথা (যেমনঃ অফিসের কাজ) ভাবুন।

দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ-

১) সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর (Selective serotonin re-uptake inhibitors (SSRIs))

সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য তৈরি, তবে এগুলোর একটি উপকারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে বীর্যপাত ঘটতে দেরি করানো। যদিও SSRI দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয় (not licensed) তবুও, ডাক্তারেরা সমস্যাটির চিকিৎসায় এগুলো ক্রমান্বয়ে আরও বেশি ব্যবহার করছেন। এই উদ্দেশ্যে যে ধরনের SSRI-গুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছেঃ

পারোক্সেটাইন (paroxetine)

সেরট্রালিন (sertraline)

ফ্লুক্সোটিন (fluoxetine)

কোন কোন পুরুষ চিকিৎসা শুরুর সাথে সাথেই উপকার পাওয়া শুরু করেন, তবে, সাধারণত এগুলো সেবনের পূর্ণ ফলাফল পেতে এক-দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

SSRI-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

অবসাদ (fatigue)

অসুস্থ বোধ করা এবং অসুস্থ হয়ে পড়া (feeling sick and being sick)

ডায়রিয়া (diarrhoea )

অতিরিক্ত ঘাম হওয়া (excessive sweating)

তবে এগুলো হালকা ধরনের হয় এবং দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে কমে যায়।

২) ড্যাপোক্সেটিন (Dapoxetine)

দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসার জন্য ড্যাপোক্সেটিন নামক একটি SSRI বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। উপরে যে SSRI গ্রুপের ওষুধগুলোর নাম দেয়া আছে তার চাইতে ড্যাপোক্সেটিন আরও দ্রুত কাজ করে এবং এটি আপনি যখন আপনার দরকার তখন সেবন করতে পারেন। ডাক্তার আপনাকে ড্যাপোক্সেটিন খেতে দিলে সেটি আপনাকে সঙ্গমের এক থেকে তিন ঘণ্টা পুর্বে খেতে হবে, তবে কখনই দিনে একটির বেশি নয়। দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যাটি আছে এমন সবার জন্যই ড্যাপোক্সেটিন উপযুক্ত নয়। যেমন, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও লিভারের সমস্যা আছে এমন কাওকে ড্যাপোক্সেটিন সেবনের পরামর্শ দেয়া হয় না। ড্যাপোক্সেটিন বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য ওষুধের সাথে মিশে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

ড্যাপোক্সেটিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মাথা ব্যাথা করা, মাথা ঘোরা, এবং অসুস্থ বোধ করা।

৩) লোকাল অ্যানেসথেসিয়া ও কনডম (Local anaesthesia and condoms)

লিডোকাইন বা প্রিলোকাইনের মত লোকাল অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে তবে এটির কারনে সঙ্গিনীর যোনির সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে। দয়া করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করবেন না। এটি অবিবেচকের মত ব্যবহার করলে তার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। লোকাল এনেস্থেসিয়ার সাথে মিলিতভাবে কনডম ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।

২. দেরিতে বীর্যপাত (Delayed ejaculation)

এই অবস্থায় আপনি বাড়িতে যে জিনিসগুলো করে দেখতে পারেন সেগুলো হচ্ছেঃ

১) যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য সঙ্গমের আগে যৌন উত্তেজক ভিডিও বা ম্যাগাজিন দেখতে পারেন

২) সঙ্গমের প্রক্রিয়াটি আরও আরামদায়ক এবং রিল্যাক্সিং করার জন্য লুব্রিক্যান্ট ক্রিম বা জেল ব্যবহার করতে পারেন

ওষুধ পরিবর্তন (Switching medication)

SSRI জাতীয় ওষুধ সেবনের জন্য দেরিতে বীর্যপাত ঘটছে মনে করলে সেটির পরিবর্তে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছেঃ

আমান্টাডাইন (amantadine) – মুলত এটি ভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল

বুপ্রোপ্রিওন (buproprion) – এটি আসলে প্রস্তুত করা হয়েছিল ধূমপান বন্ধে মানুষকে সাহায্য করার জন্য

ইওহিম্বাইন (yohimbine) – পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হওয়ার সমস্যার চিকিৎসার জন্য এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল

SSRI-এর রাসায়নিক প্রভাবে দেরিতে বীর্যপাত ঘটছে মনে করলে সেটির প্রভাব রোধ করার জন্য এই ওষুধগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. উল্টো দিকে বীর্যপাত (Retrograde ejaculation)

বেশীরভাগ মানুষেরই উল্টো দিকে বীর্যপাতের কারনে চিকিৎসা নেয়ার দরকার হয় না কারন এই সমস্যাটি হওয়া সত্ত্বেও তাদের যৌন জীবনে বা স্বাস্থ্যের উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। কোন ওষুধ সেবনের কারনে উল্টো দিকে বীর্যপাতের সমস্যাটি ঘটলে, সেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে সমস্যাটি চলে যায়। তবে ওই ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনি যখন বাচ্চা নিতে চাইবেন তখন যদি কোন সমস্যা হয় এবং চিকিৎসা নিতে হয় তাহলে মূত্রাশয়ের মুখের দিকের পেশি শক্তিশালী করার জন্য ওষুধ দেয়া হতে পারে। ডায়াবেটিস বা সার্জারির কারনে উল্টো দিকে বীর্যপাতের সমস্যাটি হলে সিউওডোফেড্রাইন (Pseudoephedrine)-এর কার্যকারিতার প্রমান পাওয়া গেছে।

তবে নির্দিষ্ট কোন পেশি বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারনে সমস্যাটি হলে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না।

বাচ্চা নিতে চাইলে পুরুষেরা তাদের প্রস্রাব থেকে বীর্য সংগ্রহের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম নিষিক্তকরন (artificial insemination) বা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (in-vitro fertilisation (IVF)) প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ হস্তমৈথুন খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

one + two =