চোখে ছানি পড়লে করনীয়

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

চোখে ছানি পড়লে করনীয়

আমাদের চোখ ক্যামেরার লেন্স এর মত কাজ করে। বাহিরের আলো যখন আমাদের চোখের লেন্সের ভেতর দিয়ে  পেছনের রেটিনায় পড়ে তখন  দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। ক্যামেরার লেন্সের কাঁচ যেমন অস্বচ্ছ হয়ে গেলে কাঁচের ভেতর দিয়ে পরিষ্কার দেখা যায় না, তেমনি চোখের লেন্স যদি অস্বচ্ছ হয়ে যায় চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। এই দৃষ্টি লোপ পাওয়াকেই চোখের ছানি পড়া রোগ বলা হয়ে থাকে। শুনতে অবাক লাগলেও ছানি রোগ হলো আমাদের দেশের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।

জেনে নেই চোখে ছানি পড়ে কেন :

চোখে ছানি পড়ার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। যে কোন বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। তবে সাধারণত বয়স্কদের এই রোগ বেশি হয়। লেন্সের গঠনগত পরিবর্তন ছানি পড়ার প্রধান কারণ। তবে আরো অরেক কারনেই চোখে ছানি পড়তে পারে।

চোখে ছানি পড়ার কারণ :

  • চোখে আঘাত।
  • ঘন ঘন চোখে ব্যথা।
  • অপুষ্টি।
  • হরমোন থেরাপি।
  • ধূমপান এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
  • পরিবারের কারো ছানি থাকলে।
  • মায়ের গর্ভে থাকাকালীন টর্চ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে ছানি নিয়ে বাচ্চার জন্ম হতে পারে।

 যা দেখে বোঝা যাবে :

ছানির লক্ষণগুলো চোখের সাধারণ সমস্যার মতো হওয়ায় অনেক সময় তা ধরা যায় না। সেজন্য চোখের যে কোন সমস্যাকে গুরত্ব দিতে হবে। নিচের কারণগুলো দেখে বুঝতে পারবেন আপনার চোখে ছানি পড়েছে কিনা।

  • প্রাথমিক অবস্থায় দূরের জিনিস ঝাপসা দেখাবে।
  • পরে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
  • লেন্স সাদা বা বাদামী হয়ে যাবে।
  • চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হবে।
  • আলোর চারদিকে রংধনু দেখবেন।
  • আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসবে।
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে।

সচেতনতাই দেবে মুক্তি : 

চোখে ছানি পড়াকে তেমন জটিল রোগ বলে মনে করা হয়না। তবে চোখে ছানি পড়লে তা একেবারেই সহনীয় হয়না। তাই সময় থাকতেই এর প্রতিরোধ করতে হবে। তবে বয়স জনিত কারণে যে ছানি হয় তা প্রতিরোধ্য নয়, তাছাড়া চোখে ছানি পড়ার কারণগুলো আমরা খুব সহজেই এড়াতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন সামান্য সচেতনতা।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • জন্মগত ছানি প্রতিরোধে গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
  • চোখের কোন অসুখ / অসুবিধা হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
  • ছোটদের চোখের আঘাতে ছানি পড়ে বেশী তাই তাদের ধারালো খেলনা থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে।

ছানির প্রকারভেদ :

১. জন্মগত ছানি – শিশুর জন্মের পর পরই ছানি দেখা দিলে তাকে জন্মগত ছানি বলা হয়। এক তৃতীয়াংশ জন্মগত ছানি সাধারণত বংশগত হয়ে থেকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের কোন অসুখ যেমন- রুবেলা, মাম্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি বা অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে এ ধরণের ছানি হতে পারে। এক্ষেত্রে জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছানি অপারেশন করা উচিত।

২. বয়স জনিত ছানি- এ ধরণের ছানিই সবচেয়ে বেশী হয়। ৬০-৭০ বছর বয়সে ছানি পড়াটা খুব স্বাভাবিক হলেও ৫০ থেকেই এর আশঙ্কা বাড়তে থাকে।

৩. জটিল ছানি- চোখের কিছু প্রাথমিক রোগের জটিলতা থেকে এ ধরণের ছানি হয়ে থাকে এবং যে কোন বয়সে হতে পারে। । যেমন- আইরিশের প্রদাহ, রেটিনার রোগ, উচ্চ মাত্রার নিকট দৃষ্টি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আগে চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা তারপর অপারেশন করা হয়।

৪. আঘাতজনিত ছানি- চোখে কোন আঘাত লাগলে, ইলেকট্রিক শক, এক্স-রে, গামা রে, সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ইত্যাদিতেও এ  ছানি পড়তে পারে।

৫. বিপাক জনিত ছানি- ডায়াবেটিস, গ্যালাক্টোসেমিয়া ইত্যাদি বিপাক জনিত রোগে আক্রান্ত থাকাকালীন চোখে ছানি পড়তে পারে যার চিকিৎসায় বিভিন্ন জটিলতা থাকে। তাই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করে পরে ছানি অপারেশন করা হয়।

৬. ওষধজনিত ছানি- কোন কোন ঔষধ যেমন স্টেরয়েড,মাইয়োটিকস ইত্যাদি বেশী মাত্রায় বা দীর্ঘদিন ধরে সেবন করলে চোখে ছানি পড়তে পারে। তাই ছানি অপারেশনের আগে এই সব ঔষধ সেবন বন্ধ করতে হয়।

 চিকিৎসা ও জটিলতা:

ছানি চিকিৎসা সময় মতো না হলে তা থেকে দেখা দিতে পারে অন্যান্য জটিলতা। আইরিশে ব্যাথা হতে পারে, ধীরে ধীরে চোখ ট্যারা হয়ে যেতে পারে। এমনকি চোখ স্থায়ী ভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ছানি অন্ধত্বের মতো জটিল পরিণতি ডেকে আনলেও আশার কথা হচ্ছে সঠিক চিকিৎসায় এর থেকে সহজেই আমরা মুক্তি পেতে পাড়ি। আর অপারেশনই হচ্ছে ছানির একমাত্র চিকিৎসা। অপারেশন করে যে কৃত্রিম লেন্স লাগানো হয় তা দিয়ে আগের মতোই পরিষ্কার দেখা যাবে। আধুনিক চিকিৎসার প্রসারে সেলাইবিহীন পদ্ধতিতেও এখন এই অপারেশন করা যায়। যার একটি হলো  ‘স্মল ইনসিশন’ ছানি অপারেশন অন্যটি হলো ‘ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন টেকনিক’। ছানির ধরন বুঝে যে কোন পদ্ধতি বেঁছে নেয়া যায়। তবে রোগের লক্ষণ অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসককে দেখাতে হবে, কারণ একবার ছানির জটিলতা বেড়ে গেলে তখন চিকিৎসা করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। আবার শুধু অপারেশন করলে চলবে না এরপরও চাই চোখের যত্ন নেয়া যেহেতু চোখে অস্ত্রোপচার করার পর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে তাই পরবর্তী সময়টুকু সাবধান থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ গ্লুকোমা চোখের নীরব ঘাতক

গণসচেতনায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

19 − fourteen =