গর্ভধারণ যে কোন নারীর জীবনে পরম আকাঙ্খিত মুহূর্ত। এই সময়ে তারা গুরুজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর উপদেশ মানতে গিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। এসব ভুল উপদেশ অনেক সময় মা ও বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে গর্ভপাত। এজন্যে পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংঙ্কার কে দায়ী করেন, যেমন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। সাধারণভাবে এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী নয়। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথম বার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যেতে পারে।
ভিটামিন ঔষধ খেতে অনেকে অনিহা প্রকাশ করে, তাদের ধারণা এতে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি ভুল ধারণা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূণ্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। অনেক মায়েরা এসময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন এবং এটা গর্ভের বাচ্চার জন্যে ঝুঁকি পূর্ণ মনে করেন। কিন্তু কিছু কিছু পূর্ণ অবস্থা(যেমন: প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড বরসন IUGR) ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন। এই অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যেকোন মধ্যম মানের ব্যয়াম (যেমন: হাটা, সাতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন। এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া, ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
অনেক মায়েরা তাদের পেটিকোট বা সালোয়ার বাঁধন পেটের উপর শক্ত করে বেঁধে রাখেন যাতে বাচ্চা উপর দিকে উঠে না যায়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ভিত্তিহীন ধারণা, এই সময়ে মায়েদেরকে ঢিলা-ঢালা পোশাক পরার উপদেশ দেয়া হয়। পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস না খাওয়াই ভাল। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এগুলো জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে। এই সময়ে আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাত্তরাইজড মিল্ক, হট ডগ খেলেও লিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সংক্রণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে। বড়ির পোষা বিড়াল থেকেও অনেক সময় এই জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে।
যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রি এক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উচিত হবে না। সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দু:শ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তী কালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
ডাঃ নুসরাত জাহান, সহযোগী আধ্যাপক (অবস-গাইনি),
চেম্বার: ডিপিআরসি হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব,
(১২/১, রিং-রোড, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭)
সিরিয়ালের জন্য ফোনঃ- +8801997702001, +8801997702002,
09666774411, 029101369, 0258154875