গ্রীষ্মকালের বিভিন্ন রসাল ফলের মধ্যে লিচু অন্যতম। অত্যন্ত স্বপ্ল সময়ের জন্য এই ফলটি আমরা পাই। লিচু চাষীরা ভালো দামে লিচু বিক্রি করে দুই পয়সা পান। কিন্তু শহর-নগরের গরিব-দুঃখী ও ফলের স্বাদ গ্রহণে অক্ষম। কারণ লিচু দুর্মূল্য। গরিবের ধরাছোঁয়ার বাইরে। লিচু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। আমরা অনেকেই জানি না, লিচু আমাদের দেশী ফল নয়। সদূর চীন থেকে এক সময় লিচু আসে আমাদের দেশে।
লিচু চারা ও কলম দু’ভাবেই চাষ করা যায়। বিরাট বট গাছের মতো বড় গাছ হয়। তবে চারা বা কলম যেভাবেই রোপন করা হোক লিচু ধরতে বেশ সময় লাগে। তবে কলমের গাছে তাড়াতাড়ি ফল আসে। চারা রোপন করলে লিচু ধরতে ১০-১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশে মোটামোটি সব জায়গায় লিচুর চাষ হয়। তবে মাটির গুণে ভালো হয় রাজশাহী, দিনাজপুর ও বগুড়া তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গে। লিচু বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- মাদ্রাজি, বোম্বাই, চায়না, বেদানা, মঙ্গলবাড়ি ইত্যাদি জাতের লিচুর চাষ হয় উত্তরবঙ্গে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে আছে-
- শর্করা ১৩.০৬ গ্রাম
- ক্যালরি ৬৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১৬.৫৩ গ্রাম
- খাদ্য আঁশ ১.০৩ গ্রাম
- ফোলেট ১৪ মাইক্রোগ্রাম
- সোডিয়াম ১ গ্রাম
- পটাসিয়াম ১৭১ মি: গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৫ মি:গ্রাম
- লৌহ ০.৩১ মি:গ্রাম
- ফসফরাস ৩১ মি:গ্রাম
- ভিটামিন সি ৩১ মি:গ্রাম
লিচু অত্যন্ত আমিষসমৃদ্ধ ফল। তবে জলীয় অংশ সর্বাপেক্ষা অধিক। ভিটামিন সি রয়েছে প্রচুর। এ ছাড়া লিচুতে আছে খনিজ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, লোহা, ক্যালসিয়াম, চর্বি ইত্যাদি। লিচু একসাথে আট-দশটির বেশি খাওয়া উচিত নয়। বেশি খেলে বদহজম হতে পারে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই খেতে পারে। তবে উপকার পেতে হলে পরিমিত খেতে হবে। শিশুর হাড় গঠনে লিচু অবদান রাখবে। শরীরে লোহিতকণিকা গঠন করতে পারে লিচু।
রোগ নিরাময়ে প্রয়োগ ও ব্যবহার
সাধারণ দুর্বলতায়
অনেক দিন রোগ ভোগের পর কিংবা প্রসবের পর গর্ভধারণী মা দুর্বল বোধ করলে দিনের বেলায় ৮-১০টি লিচু সামান্য লবণ দিয়ে খেলে উপকার হয়।
গ্রীষ্মের ক্লান্তিতে
গ্রীষ্মে পরিশ্রম করে বা প্রচুর ঘাম নির্গত হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ৮-১০টি লিচুর শাঁস চটকে তাতে দেড় কাপ পানি দিয়ে এবং তাতে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে শরবত খেলে ক্লান্তি চলে যায়।
শিশুদের অপুষ্টিতে
শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগলে দৈনিক দুটি লিচু খেতে দিলে পুষ্টি পাবে। এমন দিনে দুবার খেতে দেবেন।
পিপাসায়
চারটি লিচুর শাঁস দেড় কাপ পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে চটকে শরবত খেলে তৃষ্ণা নিবারণ হয়।
হার্টের দুর্বলতায়
যাদের সামান্য পরিশ্রমে বুক ধড়ফড় করে, ক্লান্তি আসে এবং অবসাদে শুয়ে থাকতে হয়, তারা অন্য চিকিৎসার সাথে দৈনিক ৮-১০টি পাকা লিচু খেলে উপকার হবে। দুবার খেতে হবে।
লিভারের কার্য কমে গেলে
যাদের পেট পরিষ্কার হয় না। ক্ষুধা কমে যায়। মুখে অরুচি, তাদের লিভার-ক্রিয়া সঠিক হয় না বলে ধরে নেওয়া যায়। তারা দৈনিক লিচুর শরবত খেলে উপকার হবে। আজকাল লিচুর জুস পাওযা যায়। নির্ভরযোগ্য মনে হলে লিচুর জুস খাওয়া যেতে পারে।