যদি গর্ভধারণ করতে চেষ্টা করেও সফল না হন, আমাদের আজকের এটি আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা নিয়মিত অনেক চেষ্টা করেও গর্ভধারণে সফল হতে পারছেন না। তবে কিছু টিপস ও কিছু যথোপযুক্ত সময় আছে যেসময়গুলোত আপনি সঠিক পদক্ষেপ নিলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুব বেশি।
যথেষ্ট চেষ্টা হয়তো আপনি করেননি
আসলে সবকিছুরই একটি সুনির্দিষ্ট একটা সময় বা কাল থাকে যেসময় ফল পাওয়াটা হয়তো খুবই সহজ থাকে কিন্তু সময় চলে গেলে বা দেরি হয়ে গেলে তখন বিস্ময়ের সঙ্গে অনুধাবন করেন যে, গর্ভধারণ করতে সময় লাগছে বা ব্যর্থ হচ্ছেন। ফিজিশিয়ান অ্যানেট ব্রাউয়ার বলেন, এমনকি ২৫ বছর বয়স্ক দম্পতিদেরও তাদের জীবনের সর্বোচ্চ উর্বরতার সময়ে প্রতিমাসে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা ২০ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। ছয় মাস শেষে এসব দম্পতিদের ৬০-৮০ শতাংশ এবং ১২ মাস শেষে ৮৫-৯০ শতাংশ দম্পতি প্রেগন্যান্সি অর্জন করে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ দম্পতি পরবর্তী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে কনসিভ করার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু ১২ মাস ভালো সহবাসের পর তাদের একজন প্রজননসংক্রান্ত এন্ডোক্রিনোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন
ধূমপান করেন
এক কথায় বলতে গেলে, ধুমপান যৌন চাহিদা হ্রাস করে পাশাপাশি শুক্রাণু নষ্টের জনেও দায়ী। মারিজুয়ানা শুক্রাণুর তৎপরতা এবং যৌনাকাঙ্ক্ষা হ্রাস করতে পারে, যে কারণে যৌনসহবাস কমে যায় এবং মারিজুয়ানার সঙ্গে অ্যালকোহলের ব্যবহার আরো মারাত্মক সমস্যার দিকে চালিত করে।
ডায়েটে পুষ্টির অভাব
প্রেগন্যান্ট এর সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য একটি সহজ পরিবর্তন যা খাবার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে এবং তা হলো আপনার প্লেটের খাবারে পরিবর্তন নিয়ে আসা। এটি কেবলমাত্র সন্তান নিতে ইচ্ছুক নারীদের জন্যই সত্য নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইউরোলজির বিশেষজ্ঞ ফিলিপ ওয়ের্থম্যান বলেন, আমাদের শরীরে র্যাডিকেলের সঙ্গে ফাইট করার জন্য অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সুপরিচিত। ফ্রি র্যাডিকেল ক্যানসার ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি পুরুষের বন্ধ্যাত্বও বৃদ্ধি করতে পারে। ডা. ওয়ের্থম্যান সয়া গ্রহণ হ্রাস করতেও পরামর্শ দিয়েছেন, কারণ যেসব পুরুষেরা প্রচুর পরিমাণে সয়া খায়, তারা সয়া না খাওয়া পুরুষদের তুলনায় লো স্পার্ম কাউন্টের দিকে বেশি চালিত হয়।
সঠিক টাইমিং না হওয়া
একজন নারীর কনসিভের জন্য একটি ফার্টাইল উইন্ডো রয়েছে যে সময়টাতে সে উর্বর থাকে যা গর্ভধারণের জন্য খুবই উপযুক্ত সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফার্টাইল উইন্ডো হচ্ছে ওভিউলেশনের আগ থেকে ওভিউলেশনের দিন পর্যন্ত ছয় দিন সময়। কনসিভ করার জন্য সর্বাধিক সম্ভাবনাময় সময় হচ্ছে, ওভিউলেশনের পূর্ব থেকে ওভিউলেশনের দিন পর্যন্ত তিন দিন সময়। যদি আপনার নিয়মিত পিরিয়ড হয়, তাহলে ওভিউলেশন কিট ব্যবহার করে নির্ণয় করার চেষ্টা করুন যে প্রতি চক্রের কোন দিনগুলোতে আপনার ওভিউলেট হয়, যদি আপনি একবার বুঝতে পারেন যে প্রতিমাসের কোন সময়ে ওভিউলেট হয়, তাহলে ওভিউলেশন পর্যন্ত কয়েকদিন টাইমিং ইন্টারকোর্স বা সহবাস করুন।
টাইমিংয়ের ওপর বেশি নির্ভর করা
যখন কনসিভের চেষ্টা করবেন, তখন টাইমিং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই সঙ্গে গর্ভধারণের জন্য স্বাভাবিক পন্থা অবলম্বনের সর্বোত্তম চেষ্টা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকান ডাক্তার ডেভিড ডিয়াজের মতে, টাইমিং সেক্সুয়াল কন্টাক্ট অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপের কারণ হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত বৈবাহিক বিবাদ সৃষ্টি করতে পারে যখন যৌনসহবাসটা সুখানুভবের পরিবর্তে রুটিনমাফিক কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তান উৎপাদনে রোমান্সে মাতুন এবং জন্মনিরোধক পরিহার করুন।
মানসিক চাপ
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কনসিভ প্রচেষ্টার বিভিন্ন অংশকে বাধাগ্রস্থ করে। বিশেষ করে এটি হাইপোথ্যালামাসের রেগুলেটরি রেসপন্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ওভিউলেশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক হরমোনকে প্রভাবিত করে। যেসব দম্পতি উচ্চমাত্রার স্ট্রেস দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাদের যৌনকামনা হ্রাস পায়, যার ফলে তাদের যৌনসহবাস কম হয় এবং প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তাই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমান।
মিলনে অনিহা
যদি মাসে নির্দিষ্ট কয়েকটা দিন সহবাস করেন, তাহলে কনসিভ নাও হতে পারে। পুরুষের শুক্রাণু কোনো নারীর মধ্যে পাঁচদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, যার মানে হচ্ছে নারীটির প্রয়োজনীয়ভাবে ওভিউলেট না হলেও তিনি প্রেগন্যান্ট হতে পারেন। ডা. ডিয়াজ বলেন, অনেকেই ধারণা করে যে, নারীর চক্রের সর্বোত্তম উর্বর দিন আসা পর্যন্ত পুরুষের শুক্রাণু জমা করে রাখা উচিত, কিন্তু বাস্তবে এর সম্পূর্ণ বিপরীতটাই সত্য হতে পারে। তিনি যোগ করেন, যৌনসহবাসের ফ্রিকোয়েন্সি সপ্তাহে তিন থেকে চার বার হচ্ছে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা বাড়ানোর সাধারণ উপায়।
অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে কনসিভ ব্যর্থতা অন্তর্ভুক্ত। অতিরক্ত ওজনের স্থূলকায় যেসব দম্পতিরা কনসিভ করতে চান তাদের অনিয়মিত পিরিয়ড, বিরল ওভিউলেশন বা ওভিউলেশন ঘাটতি, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, প্রি-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, যকৃতে চর্বি জমা এবং জরায়ুসংক্রান্ত স্থানে হাইপারপ্লেসিয়া থাকতে পারে। ওজন কমানোটা জরুরি যদি আপনি গর্ভধারণ করতে চান। আর হ্যাঁ অবশ্যই নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করুন, এতে ওজন কমবে, শরীর সুস্থ থাকবে পাশাপাশি আপনার মিলনের চাহিদাও বাড়বে।