ভিটামিন A এর অভাবজনিত রোগ ও যেসকল খাবারগুলোতে পাবেন

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ভিটামিন আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যা আমাদের দৈহিক গঠন ও আমাদের বেচেঁ থাকার জন্য কাজ করে থাকে। আমরা সাধারণত প্রতিদিন যেসব খাবার খেয়ে থাকি তার মধ্যেই থাকে প্রাকৃতিক ভিটামিনের মজুত। কিন্তু সেসব ভিটামিন এতটাই স্পর্শকাতর হয় যে সঠিক প্রক্রিয়ায় যদি রান্না না করা হয়, তাহলে সেসব খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন প্রতিদিনের খাবারে মজুত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট প্রসেস করতে সাহায্য করে। ভিটামিন আমাদের শরীরের কোষ এবং টিস্যু বাড়াতে সাহায্য তো করেই, তাছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের রক্ষণাবেক্ষণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতেও সাহায্য করে। অকাল বার্ধ্যকের হাত থেকে আমাদের শরীরকে যেমন রক্ষা করে তেমনি ভিটামিন অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার এবং অক্সিডেটিভ ড্যামেজের (দূষণ এবং স্ট্রেস থেকে তৈরি হয়) সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। জেনে নিন ভিটামিন A এর ফলে কী কী হতে পারে এবং  কোন কোনে খাবরে ভিটামিন A পেতে পারি:

ভিটামিন A এর অভাবজনিত রোগ:

  • শুকনো চোখ
  • রাতকানা
  • জেরপথালমিয়া
  • কেরাটোম্যালাসিয়া

  • সহযোগী রোগের কারণে মৃত্যু ।
  • অতিরিক্ত চুল পড়া ও পেকে যাওয়া
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
  • বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভধারণ সমস্যা
  • শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত

যেসকল খাবারে  ভিটামিন A পাবেন:

বিভিন্ন প্রকার শাক:

  • পুঁই শাক
  • লাউ শাক
  • লাল শাক
  • থানকুনি পাতা
  • ডাটা শাক
  • পালং শাক
  • মিষ্টি আলু শাক
  • ধনিয়া পাতা
  • কালো কচু শাক
  • হেলেঞ্চা শাক
  • পাট শাক
  • সজিনা পাতা
  • মূলা শাক
  • সরিষা শাক
  • মিষ্টি কুমড়া শাক
  • কলমি শাক
  • পুদিনা শাক

বিভিন্ন সবজি:

  • মিষ্টি কুমড়া
  • গাজর
  • মিষ্টি আলু
  • সজিনা
  • টমেটো
  • লাল মরিচ
  • ব্রোকলি

প্রাণীজ খাবার:

  • খাসির কলিজা
  • তৈলাক্ত মাছ
  • হাঁসের ডিম
  • মুরগীর ডিম
  • মুরগীর মাংস

বিভিন্ন প্রকার ফল:

  • পাকা আম
  • পাকা কাঁঠাল
  • পাকা পেঁপে

অন্যান্য:

  • কিসমিস
  • পনির ও মাখন
  • বিভিন্ন দুধ ও দই জাতীয় খাবার

শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান যখন:

  • হামের পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে
  • মারাত্মক অপুষ্টি দেখা দিলে
  • শিশু একটানা দুই সপ্তাহ ডায়রিয়ায় ভুগলে

ভিটামিন A এর উপকারিতাঃ

চোখ: ভিটামিন A  চোখের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন A রেটিনাল্ডিহাইড এ রুপান্তরিত হয় যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এটি রাতের বেলা আলো এবং অন্ধকারের মাঝে দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ভিটামিন A রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার: ক্যান্সারের মত এই মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন A প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। ভিটামিন A শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট হিসেবে পরিচিত। এটা স্বাস্থের সমস্যা দূর করে যেমন, অ্যান্থেরোস্ক্লেরোসিস, দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধক পালমুনারী রোগ এবং ক্যান্সার।

হাঁড় এবং দাঁত: হাঁড় এবং দাঁতের জন্য ভিটামিন A খুবই উপকারী। ভিটামিন A রেটিনয়েক অ্যাসিড এ রুপান্তরিত করে যা হাঁড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী। এটা জরাজীর্ন টিস্যু কে নতুন টিস্যু দিয়ে স্থানান্তর করে সুস্বাস্থ্যকর হাঁড় এবং দাঁত নিশ্চিত করার জন্য।

ত্বক: ত্বকের জন্য ভিটামিন A  অনেক বড় ভূমিকা রাখে। ভিটামিন A একটি যুদ্ধহীন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রেডিকেল। ভিটামিন A প্রকৃত আদ্রতা ধারনক্ষমতা পরিচালনা করে, যা ত্বককে প্রচলিত শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে, কেরাটিনাইজেশন থেকে রক্ষা করে (এমন একটি প্রক্রিয়া যা এপিডার্মিসকে শক্ত করে যা চুল এবং নখকে গঠন করে) । এটা ব্রন এবং কুঁচন থেকে রক্ষা করে।

গর্ভাবস্থাঃ গর্ভবতী মা এবং গর্ভের বাচ্চার জন্য ভিটামিন A খুবই উপকারী। ভিটামিন A একটি ফ্যাট এবং আপনার বাচ্চার গর্ভাবস্থায় বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয়। এটা অবশ্য হৃদযন্ত্র, বৃক্ক, ফুসফুস, এবং সংবহন, শ্বসন, এবং কেন্দ্রীয় নার্ভাস সিস্টেম কে গঠন করে। এটা যকৃতে সঞ্চিত থাকে এবং সংক্রমন প্রতিরোধ গঠন করে এবং ফ্যাট বিপাকে অংশ নেয়। ভিটামিন A বাচ্চা জন্মদানকারী মহিলার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত কারন এটা পোস্টপার্টাম টিস্যু পূনর্গঠন এবং সংক্রামন কে বাধা দেয়। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে,  আপনি অনেক বেশী ভিটামিন নিলে, আপনার গর্ভের বাচ্চার অনেক ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়াও মানুষের শরীরের মিউকাস মেমব্রেন, শ্বসন, ইউরিনারী এলাকা, চোখের আস্তরন, এবং ইন্টেস্টিনাল এলাকার মত “প্রবেশদ্বার” কে জোরদার করতে ভিটামিন A এর ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

অতিরিক্ত ভিটামিন A এর ক্ষতিকর দিক:

প্রতিটি ভিটামিন যেমন আমাদের জন্য ভালো তেমনি অতিরিক্ত ভিটামিন শরীরের জন্য আবার অনেক ক্ষতিও করে থাকে। কিছু গবেষনা অনুযায়ী, অনেক বছর ধরে গড়ে ১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন A আপনার ক্ষতি করতে পারে। হাঁড় কে বয়স্ককালে ভঙ্গুর করে ফেলতে পারে। বয়স্ক লোক, বিশেষ করে মহিলা যা ইতিমদ্ধেই অস্টিওপোরোসিস এর বিপদাশংক যুক্ত । এক্ষেত্রে আপনার হাঁড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। যদি আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন D না পেয়ে থাকেন, আপনার ভিটামিন A এর ক্ষতিকর প্রভাব এ পরতে পারেন।

তাই প্রতিদিনের খাবারে নিয়মিত পরিমিত ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবার রাখুন যাতে করে প্রতিদিনই ভিটামিন A এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।

মেডিকেলবিডি/আরএম/ ২৬ মে, ২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

two × five =