দাঁতের সুষম যত্নে আপনার করণীয়

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

সঠিক সময়, সঠিক চিকিৎসা সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় অর্থসঙ্কুলান ও ইচ্ছা এ সব কিছুর সমন্বয় এনে দিতে পারে সুষম সুস্থতা। বিশ্বের সব উন্নত দেশে ওপরের কথাগুলো যথোপযুক্ত প্রয়োগ হয় এবং এর সুফল ভোগ করে তারা খুব সহজে সমস্যার সমাধান করেন। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ তথা বংলাদেশের চিত্রে ভিন্নতা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। এর জন্য আমরা দায়ী করতে পারে আমাদের অনুন্নত আর্থসামাজিক অবস্থা, অপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা, অদক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রবল প্রচারণা এবং সেই সাথে বৈরী মানসিবকতাসহ আরো অনেক কারণ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দাঁতের চিকিৎসা করা বা কোনো দন্ত চিকিৎসাকের পরামর্শ নেয়ার আগ্রহ এতই কম যে, যখন একেবারে চরম অসহ্য অবস্থা বা আক্রান্ত দাঁতের শেষ অবস্থা আর বাঁচবেই না এ জাতীয় উক্তি করেন কেউ কেউ।

আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন

যা হোক, দাঁতের চিকিৎসা অন্য যেকোন চিকিৎসার চেয়ে কিছুটা ব্যয়বহুল বটে, তবে সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা  করলে এই খরচও ব্যথার কষ্ট অনেকাংশে কমানো সম্ভব। দাঁতের অতিপরিচিত কিছু সমস্যা এবং এর সমাধান কি হতে পারে সংক্ষেপে দাঁড় করালে দেখা যায়:

  • মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ও দাঁতের ওপর কঠিন কালো বা হলদেটে দাগ পড়া, যা সাধারণ তদাঁত ব্রাশে সমাধান না হওয়া।
  • দাঁতের যেকোন প্রান্তে ছিদ্র বা কোনো এক অংশ ভেঙ্গে যাওয়া, সাথে সাথে দুই দাঁতের ফাঁকে খাবার ঢুকে যাওয়া।
  • দাঁতের মাড়ি বরাবর ক্ষয় হওয়া এবং মাড়ি সরে গিয়ে দাঁতের আবৃত অংশ অনেকাংশে বের হয়ে ভীষণভাবে ঠান্ডা-গরম স্পর্শকাতর হওয়া।
  • মুখে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে আক্কেল দাঁত পুরোপুরি উঠতে না পারা অথবা বাঁকা হয়ে উঠে ইনফেকশন তথা মাড়ি বা গালের অনেকাংশে হঠাৎ করে ফুলে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া।
  • হঠাৎ করে মাড়ি ফুলে লাল হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কামড়ে জোর না পাওয়া এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সবগুলো দাঁত নড়ে যাওয়া।

একজন দন্ত চিকিৎসক হিসেবে আমার কাছে প্রতিনিয়ত উপরি উক্ত সমস্যাগুলো  নিয়ে রোগীর আগমন ঘটে; কিন্তু দুঃখের বিষয়  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই আগমন ঘটে একেবারে শেষ পর্যায়ে প্রচন্ড ব্যথা অথবা আরো নানাবিধ সমস্যা নিয়ে। ব্যাপারটা এমন-  অনেক সমস্যা, অনেক সময় ও অনেক খরচ ইত্যাদি। কিন্তু কখনোই তা কাম্য নয়। সমস্যাগুলোর সমাধান সত্যিই সহজ।

তার মধ্যে প্রথম হলো:

  • সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা, সাথে বছরে অন্তত একবার দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া (সঠিক সময়, সঠিক চিকিৎসা)।
  • বছরে অন্তত একবার স্কেলিং করা (দাঁত পরিষ্কার করা)। কারণ দাঁতের মাড়ি বরাবর যে কালো বা হলদেটে শ্কত আবরণ পড়ে তা সাধারণত টুথব্রাশে যায় না। চিকিৎসা বলতে স্কেলিংই একমাত্র সঠিক ও সহজ সমাধান।
  • একটি ভালোমানের ট্রথব্রাশ ও টুথপেস্ট এবং সাথে টুথপিকের পরিবর্তে ডেন্টাল ফ্লস (যা দিয়ে দাঁতের মধ্যবর্তী স্থানে ঢুকে পড়া খাবার পরিষ্কার করতে হবে) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বেছে নিতে হবে।
  • কিভাবে এবং কত সময় দাঁত ব্রাশ করতে হয়, চিকিৎসকের পরামর্শে তা জেনে নিলে ভালো হয় এবং সে অনুযায়ী অভ্যাস করা এবং বাড়ির সবাইকে এ ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করা।
  • মাড়ি সরে যাওয়া ও ক্ষয় হয়ে যাওয়া দাঁত যা খুবই স্পর্শকাতার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিলে সময় ও খরচ সবই সহনীয় হবে।
  • পরিবারের কোনো সদস্যের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপোরে ইতিহাস থাকলে প্রয়োজনীয় অনুযায়ী চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। অন্যথায় হঠাৎ করে কোনো জরুরি অবস্থার উদ্ভব হতে পারে, যা সত্যিই অসহনীয়।

মুখগহ্বরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে অথবা জিহ্বায় ক্ষত হতে দেখা গেলে অবিলম্বে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। ইত্যাদি আরো অন্য যেকোন মুখ বা মুখগহ্বরের সমস্যা দেখা দেয়া মাত্র অবহেলা না করে সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ছোট কোনো সমস্যা অসতর্কতার জন্য হঠাৎ কোনো সমস্যার উদ্ভব হতে পারে, যা  হয়তো আপনার সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

16 + eight =