কেন বেশি শীতে ভোগেন আপনি?
পৌষ-মাঘের শীতল হাওয়া যখন চারিদিকে বহমান, প্রকৃতি যেন আপনাকেও করে তোলে শীতল। এ সময়টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগেন তারাই যারা শীত সহ্য করতে পারেন না। শীতকাল হোক বা ঘোর বর্ষা কিছু মানুষের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সব সময় শীত শীত অনুভব করেন, কাঁপতে থাকেন।
এ লক্ষণগুলো যদি আপনি আপনার জীবনে লক্ষ্য করে থাকেন, তবে বুঝতে হবে আপনার শরীর কার্যত দুর্বল। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী কারণে আপনার শরীরে এমনটা হতে পারে:
১. শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি হলে সব সময় শীত অনুভব করতে পারেন। শরীরের প্রতিটা তন্ত্রে লাল রক্ত কণিকা পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন বি ১২। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ না গ্রহণ করলে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতির ফলে আপনার সব সময় ঠাণ্ডা বোধ হতে পারে।
২) শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন না পেলে সব সময় শীত অনুভব করতে পারেন। এরই সঙ্গে সারাক্ষণ ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ করবেন।
৩) সব সময় ঠাণ্ডা অনুভব করা আয়রনের ঘাটতির জন্যেও হতে পারে। আয়রন আমাদের শরীরের লাল রক্ত কণিকায় অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া প্রতিটি রক্ত কোষে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে আয়রন। তাই রক্তে বা শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে শীত ভাব অনুভব করতে পারেন। এরই সঙ্গে সারাক্ষণ ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ করবেন।
৪) আপনার হাত-পা সব সময় ঠাণ্ডা হয়ে থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে আপনার রক্ত সংবহনের সমস্যা। অত্যধিক ধূমপানের ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে রক্ত সংবহনও কমে যায়। আর এর জন্যই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনি দ্রুত ক্লান্ত বা অবসন্ন হয়ে পড়তে পারেন। এ কারণে শীত অনুভব করতে পারেন।
৫) অকার্যকর থাইরয়েড সব সময় ঠাণ্ডা অনুভব করার একটি সাধারণ কারণ এবং এর ফলে মধ্যবয়সী মহিলাদের অস্বাভাবিক অবসাদে ভুগতে দেখা যায়। ওষুধের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় থাইরয়েডের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
শীতে চুল পড়া কমাতে
শীত এসেছে মানেই হচ্ছে মাথার চুলের করুণ দশা। রুক্ষ হচ্ছে এমনি কী ঝরে যাচ্ছে। কারও কারও এমনিতেই চুল ঝরছে। চুল ঝরা রোধে মাথায় অনেক কিছু মাখার পরিবর্তে খাবারে বদল এনে দেখতে পারেন। মাত্র কয়েকটি খাবার বেশি খেয়ে এবং কম খেয়ে রক্ষা করতে পারেন আপনার চুল।
কম তেল- তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা শুরু করুন। তেল জাতীয় খাবার অতিরিক্ত ভাজাপোঁড়া আপনার শরীরের গঠনকে নষ্ট করে। আর শরীরে জমে যাওয়া চর্বি চুল ঝরে পরা বাড়ায়। তাই এড়িয়ে চলুন তেল জাতীয় খাবারগুলো।
বেশি বেশি গাজর- গাজরকে বলা হয় ‘সুপার ফুড’। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করা থেকে শুরু করে আমাদের চুল ও ত্বকের যত্নে গাজরের তুলনা নেই। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ। ভিটামিন এ চুলের গোঁড়ায় এক ধরণের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করে যা চুলকে উজ্জ্বল, চকচকে করে। বিটা ক্যারোটিন চুলের গোড়া মজবুত করে।
বেশি নদী ও সমুদ্রের মাছ- মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ চুল ঝরা রোধের সব চাইতে কার্যকর খাদ্য। যে সকল মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সে সকল মাছ রাখুন নিজের খাদ্য তালিকায়। সপ্তাহে মাত্র ৩-৪ দিন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খেয়ে দেখুন। চুল পড়া নিজে থেকেই অনেক কমে যাবে।
সবুজ শাক-সবজি-সবুজ শাক-সবজি, বিশেষ করে পাতা জাতীয় শাক সব্জি যেমন, পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি যা ভিটামিন, মিনারেলস (খনিজ) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সব চাইতে ভাল উৎস, সেগুলি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। এই সব সবুজ শাক-সব্জি চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সহায়তা করে।