গাঁটের ব্যথায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই উপশম

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

গাঁটের ব্যথায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই উপশম

বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের মধ্যে বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এবং শীতকালে শরীরের বিভিন্ন গাঁটে ব্যথা বা ফোলাভাব দেখা যায়।

সাধারণত গাঁটের ব্যথা বলতে সন্ধিবাত বা রিুউম্যাটিজমকেই বোঝানো হয়। সন্ধিবাত প্রধানত দু’প্রকার-তরুণ (অ্যাকিউট) ও পুরাতন (ক্রনিক)।

তরুণ সন্ধিবাত (অ্যাকিউট রিউম্যাটিজম)

প্রত্যেক সন্ধির মাঝখানে এবং প্রত্যেক গাঁটের প্রান্তভাগে এক ধরনের অস্থি-আবরণীয় পর্দা আছে, সেই পর্দা থেকে একপ্রকার তরল রস বের হয়ে গাঁটগুলোকে মসৃণ ও পিচ্ছিল রাখে এবং তার ফলে হাড়ে ঘষা লাগলেও হাড়ের কিছুই ক্ষতি হয় না। ওই পর্দাটাকে সাইনোভিয়াল মেমব্রেন বলে। তরুণ সন্ধিবাতে এই সাইনোভিয়াল মেমব্রেন ফুলে গিয়ে এবং সংক্রামিত হয়ে সমস্যা ডেকে আনে। রোগী জ্বরেও আক্রান্ত হয়ে থাকে।

লক্ষণ : তরুণ সন্ধিবাতে প্রথমে সাইনোভিয়াল মেমব্রেন-এর প্রদাহ এবং সাধারণ সংক্রমণের ফলে মেমব্রেনে রক্তাধিক্য ও পরে সন্ধির ভেতরে জল জমতে থাকে। সাধারণত জ্বরসহ প্রথমে হাঁটু আক্রান্ত হয় ও ক্রমশ কনুই, গোড়ালি, কবজি কাঁধে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে এবং এক সন্ধির প্রদাহ কমে অন্য সন্ধি আক্রান্ত হয়। এই লক্ষণটি রিউম্যাটিজমের একটি বিশেষ বিশেষত্ব। প্রদাহিত সন্ধি অল্প লাল বর্ণ, স্ফীত, উত্তপ্ত ও ব্যথাযুক্ত হয়। সন্ধির চারপাশ ফুলে যায়। এমনকী রোগী নড়াচড়া করতে পারে না। অনেকগুলো সন্ধি আক্রান্ত হলে যন্ত্রণা বেশি হয় এবং এই যন্ত্রণা বেশি হয় এবং এই যন্ত্রণা-ব্যথা রাতের দিকে বেশি বাড়ে। আক্রান্ত স্থান কনকন করে ও চিড়িক মারে। রোগী অনেক সময় এইসব সহ্য করতে নাপেরে কেঁদে ফেলে।

এই রোগ প্রায়ই আমরা দেখতে পাই যে বিভিন্ন গাঁট ছাড়াও পেরিকার্ডিয়াম, এন্ডোকার্ডিয়াম এবং প্লুরাও আক্রান্ত হয়ে থাকে।অল্পবয়সীদের এই রোগ হলে হৃৎপিন্ডের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সেজন্য চিকিৎসার সময় হৃৎপিন্ডটা প্রতিদিনই পরীক্ষা করা উচিত।

পেরিকার্ডিয়াম আক্রান্ত হলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, হৃৎপিন্ডের অনিয়মিত গতি, মুখের সপ্রতিভতা কমে যাওয়া ইত্যাদি কতকগুলো লক্ষণ দেখা যায়। স্টেথোস্কোপ দ্বারা হৃৎপিন্ড পরীক্ষা করলে প্রথমে হৃৎপিন্ডের ওপরে ফ্রিকশন সাউন্ড, কিন্তু জল বা কোনো ফ্লুইড জমলে এই ধরনের আর কোনা শব্দ পাওয়া যায় না। এখন হৃৎস্পন্ধন মৃদু হয় ও অ্যাসকুলেটেশনে ডুয়েল সাউন্ড পাওয়া যায় এবং এক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্ট অত্যন্ত বেশি হয়। এখানে হৃৎপিন্ডের আক্রান্ত হওয়াটা কোনো শুভ বার্তা বহন করে আনে না। রোগীর প্রবল জ্বর অর্থাৎ ১০০ থেকে ১০৪/১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা যায় এবং এখানে উল্লেখযোগ্য যে ঘাম হওয়া সত্ত্বেও রোগীর জ্বরের উপশম বা হ্রাস হয় না।

উৎপত্তির কারণ:

* অতিরিক্ত পরিমাণে ঠান্ডা লাগানো ।

* বৃষ্টিতে ভেজা।

* রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

* সেপটিক ফিভার ইত্যাদি ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

এই রোগকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হলে রোগীর কয়েকটি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

* প্রদাহযুক্ত আক্রান্ত স্থানের ডিজিটাল এক্স-রে।

* রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা যেমন আর.এ.ফ্যাক্টর, ইউরিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম লেভেল, ইউরিয়া।

তরুণ সন্ধিবাতের সাথে হৃৎপিন্ড বা ফুসফুস যদি আক্রান্ত হয় তাহলে বিশেষ সাবধানতার সাথে রোগীর চিকিৎসা করা ও রোগ সেরে যাবার পরেও যাতে রোগ সেরে যাবার পরেও যাতে রোগ পুনরাক্রমণ না  করে সে বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত। আক্রান্ত সন্ধির প্রদাহ ও ব্যথা-যন্ত্রণা কমানোর জন্য স্টেরয়েড=ফ্রি হোমিও মলম বাহ্যিক প্রয়োগ হিসেবে লক্ষণ অনুসারে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পুরাতন সন্ধিবাত

ক্রনিক রিউম্যাটিজম

পুরাতন সন্ধিবাতকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ক্রনিক মাসকুলার রিউম্যাটিজম এবং ক্রনিক আর্টিকুলার রিউম্যাটিজম।

ক্রনিক মাসকুলার রিউম্যাটিজম:

এই ক্ষেত্রে রোগীর সন্ধিস্থান আক্রান্ত হয় না, পেশি আক্রান্ত হয়। এি কারণেই একে পেশিবাত বলে। এর ব্যথার ধরন অনেকটা নার্ভের ব্যতার মতো। পেশিবাত সাধারণত পুরোনো বাতের রোগীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। নীচে কয়েকটা রোগের নাম উল্লেখ করা হল যেগুলো মাসকুলার রিউম্যাটিজমের অন্তর্ভুক্ত।

* স্টিফ নেক:

ঘাড়ের পেশি আক্রান্ত হলে তাকে স্ফি নেক বলে  এবং এক্ষেত্রে ঘাড়ের স্টারনোক্লাইডোমাসটয়েড  পেশি আক্রান্ত হয় এবং রোগী পেশিতে ব্যথা, ফোলা ও টানবোধ অনুভব করে এবং রোগীর ঘাড় ঘোড়ানো সম্ভব হয় না।

* প্লুরোডাইনিয়া:

এই ক্ষেত্রে বুকের পাঁজরার পেশি আক্রান্ত হয়ে রোগীর পাশ ফেরা এমনকী শ্বাস-প্রশ্বাসে ও হাঁচি-কাশিতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। এই পীড়া অনেক ময় প্লুরিসির ব্যথা বলে ভুলও হতে পারে। তাই রোগ ডায়গনোসিস খুব সাবধানে করা উচিত।

*লামবেগো:

এই রোগ হঠাৎ শুরু হয় বেং কোমরের পেশি এক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়। কোনো ব্যক্তি কোনো জিনিস মাটি থেকে তোলার জন্য হঠাৎ কোমরে অসহ্য ব্যথা শুরু হয় এবং রোগী সোজা হয়ে দাঁড়তে পারে না, এমনকী বিছানা থেকে নাম-ওঠাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়।

ক্রনিক আর্টিকুলার রিউম্যাটিজম:

এই বাত অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা থেকেই শুরু হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে বাবামায়ের বাত রোগ থাকলে বংশগতির ফলে সন্তানেরও হতে দেখা যায়। শরীরের অন্য কোনো জয়েন্ট অপেক্ষা হাঁটু এই পীড়ায় অধিক আক্রান্ত হয়। রোগী প্রায় খোঁড়ার মতো হয়ে যায় এবং জয়েন্টগুলোতে এত বেশি ব্যথা থাকে যে পা নড়াচড়া পর্যন্ত করতে  পারে না। নড়চাড়া করলেই ব্যথার বৃদ্ধি ঘটে। সবক্ষেত্রে ফোলা বেশি থাকে না, কিন্তু আক্রান্ত সন্ধির চারপাশের পেশি শুকিয়ে যায় এবং হাত দিয়ে পরীক্ষা করলে কিংবা সন্ধিস্থান নাড়ালে ভেতরে একপ্রাকার মড়মড় শব্দ হয় এবং অনেক সময় আক্রান্তস্থান খুব শক্ত হয়ে যায়। এই শক্তভাব চিকিৎসায় যদি না সারে তাহলে সন্ধির মুভমেন্ট একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে, চলাফেরা করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছুক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি বা স্ট্যাটিক এক্সারসাইজ রোগীর সহায়ক হতে দেখা যায়। এই রোগে প্রথম থেকেই যদি গুরুত্ব সহকারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা যায় তাহলে রোগীকে নিয়ন্ত্রণের ও আরোগ্যের পথে আনা সম্ভব নতুবা এই রোগ বেশি পুরনো বা জটিল আকার নিলে বহুক্ষেত্রেই আরোগ্য অসম্ভব হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ ড্রাইনিডেলিং ফিজিওথেরাপির আধুনিক চিকিৎসা।

গণ সচেতনতায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

two × 3 =