
হাঁপানি
হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট রোগ , অ্যাজমা রোগ সম্বন্ধে রোগীর সম্যক জ্ঞানার্জন করতে হবে
অ্যাজমা রোগ সম্বন্ধে রোগীর সম্যক জ্ঞানার্জন করতে হবে। যে কারণে অ্যাজমা বাড়ে, সেগুলো পরিহার করার জন্য রোগীর সর্তক থাকতে হবে। কিভাবে ওষুধ ব্যবহার করা যায় তা জেনে নিতে হবে
অনেকের ক্ষেত্রে প্রায় সারা বছরই অ্যাজমা ওষুধ ব্যবহার করবার প্রয়োজন দেখা দয়ে। যদি বুদ্ধমিত্তা এবং দক্ষতার সাথে এই রোগরে চিকিৎসা করা যায় তবে দেখা যাবে একজন হাঁপানি রােগীও একজন সাধারণ মানুষের মতােই জীবনযাপন করতে পারেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তির যে যন্ত্রণা এবং খরচাদি লাঘব করা সম্ভব।
এ সময়ের ত্বকের রোগ ও প্রতিকার
বাড়িতে বা ঘরে বসে হাঁপানি রোগীদের চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
গাইডেড সেলফ ম্যানজেমন্টে প্লাণ অর্থাৎ নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরী করা এবং সে অনুযায়ী বাস্তাবায়ন করা।
অন্যটি উইথ আউট সলেফ ম্যানজেমন্টে প্লাণ অথ্যাৎ নিজের পরিকল্পনা ব্যতিরেকে অন্য কোনো ব্যবস্থা নয়িমতান্ত্রকিভাবে চালিয়ে যাওয়া।
স্বপ্ল মূল্যে পিক ফ্লো মিটার পাওয়া যাচ্ছে। এটাকে বিছানার পাশইে স্পাইরমট্রেকি সাথে তুলনা করা হয়। এই সামান্য একটি যন্ত্ররে সাহায্যে পিক ফ্লোটি চার্ট, যা রোগীকে তৈরী করতে বলা হয়। এটাকে হাঁপানি রোগীদের জন্য প্রতিদিনের রোজনামচা সকাল/বিকেল লিখে রাখতে বলা হয়।
এই পিক ফ্লো মিটারের সাহায্যে পিক ফ্লো জোন অর্থ্যাৎ তিনটি জোনে ভাগ করা হয়। যাকে বলা হয় পিক ফ্লো জোন সিস্টেম। ট্রাফিক সিগন্যালের বাতি যেমন সবুজ, হলুদ এবং লাল ভাগে ভাগ করা হয়েছে তদ্রুপ এই তিনটি জোনকে অ্যাজমা রোগীদের বিশদভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সবুজ জোন নিরাপদ জোন- এই জোনে রোগীদের থাকা অর্থ হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণেই আছে। রোগী যে ওষুধগুলো পাচ্ছেন সেগুলোই চালিয়ে যাবেন।
গ্রিন বা হলুদ জোনে কোন কোন ওষুধ কিভাবে কতখানি, কত সময় পরপর ব্যবহার করতে হবে তা বুঝিয়ে দেয়া হয়। সবুজ থেকে হলুদ এ গেলে কোনো ওষুধ পরিমাণে বেশি ব্যবহার করবেন বিশদভাবে উল্লেখ থাকে।
রেড অর্থ্যাৎ লাল জোন অর্থ বিপজ্জনক জোন। এমনটি ঘটলে রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসক, ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতে বলা হয়্
বর্তমানে অ্যাজমা রোগের চিকিৎসার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে- হঠাৎ করেই যদি শ্বাসকষ্ট দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়- তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে কারণ সে সময় অক্সিজেন, নেবুলাইজেমন এবং কোর্টিকো স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়ার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়্ জরুরি রোগীর জরুরি চিকিৎসারই প্রয়োজন দেখা দেয়।
হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রেণের লক্ষ্য
১. উপসর্গ মুক্ত থাকা
২. ঘন ঘন যেন হাঁপানি দ্রুত বৃদ্ধি না পায় সেটার দিকে নজর রাখা।
৩. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা যাতে করে অনেকটাই সুস্থ সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেদিকে নজর রাখা।
৪. হাঁপানি রোগের ওষুধের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে সেটা যাতে দেখা না দেয় তার দিকে নজর রাখা।
৫. কোনো অবস্তাতেই রোগটিকে বাড়তে দেয়া যাবে না-সে বিষয়টির দিকে নজর রাখা।
৬. সর্বোপরি হাঁপানির হাত থেকে কষ্ট ও মৃত্যু রোধ করা।
এগুলোই অ্যাজমা চিকিৎসার লক্ষণ।
হাঁপানি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
আলো হাওয়া যুক্ত দূষণমুক্ত খোলামেলা পরিবেশে থাকতে হবে। বিছানা-বালিশ প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ধুলোবালুতে কাজ করা যাবে না। যদি করতেই হয় সেক্ষেত্রে অব্যশই মাস্ক পরতে হবে। ধোঁয়াযুক্ত বা খুব কড়া গন্ধওয়ালা কোনো পরিবেশে থাকা যাবে না। যে বাড়িতে হাঁপানি রোগী থাকে সে বাড়িতে ধূমপায়ী থাকা যাবে না এবং রোগীকেও অধূমপায়ী হতে হবে। পরিমিত পরিশ্রম করতে হবে।
হালকা খাওয়া-দাওয়া করা উত্তম। যেসব খাবরে অ্যালার্জি হয় তা বর্জন করতে হবে।কটনজাতীয় পোশাক পরতে হবে। পশমি, সিথেটিক পোশাক না ব্যবহার করা। পশমওয়ালা প্রাণী পোষা যাবে না।
সর্তক জীবনযাপন ও চিকিৎসার মাধ্যমে শতকরা আশি ভাগ হাঁপানি রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
হাঁপানি রোগী মারা যায় কেন ?
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে না থাক অবস্থায় নিজে নিজেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া।
ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট কমছে না অথচ মুখে কোনো ওষুধ না খেয়ে শুধু ইনহেলার ব্যবহারে শ্বাসকস্ট কমবে, এই আশায় বসে থাকা।
হঠাৎ আক্রান্ত অ্যাজমা বা মারাত্বক জটিল হাঁপানি চিকিৎসার জন্য অনভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
অনেকদিনের পুরনো অ্যাজমা থেকে রেসপিরেটরি ফেইলিউর (শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটার সাথে কখনো কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য হওয়া) বা হার্ট ফেইলিউর (শরীরে পানি আসা)
হওয়া।
উপসংহার:
অ্যাজমা রোগ সম্বন্ধে রোগীকে সম্যক জ্ঞানার্জন করতে হবে। যে কারণে অ্যাজমা বাড়ে, সেগুলো পরিহার করার জন্য রোগীকে সতর্ক থাকতে হবে। অ্যাজমার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করা যায় তা জেনে নিতে হবে। তাছাড়া জানতে হবে কোন ওষুধের কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অ্যাজমার অবস্থা বোঝার জন্য পিক ফ্লো বাসায় নিয়মিত মাপতে হবে। চিকিৎসকের নিকট থেকে বুঝে নিতে হবে আপনার রোগের অবস্থান কোথায় এবং অ্যাজমা নিয়ন্ত্রেণে রাখার জন্য আপনার চিকিৎসার পরিকল্পনা কী হবে। অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন অ্যাজমা রোগের আপনি নিজেই একজন প্রাথমিক চিকিৎসক। ডাক্তার আপনার পরামর্শদাতা মাত্র।