শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ Acoustic Neuroma

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ Acoustic Neuroma

শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে শব্দ দূষণের আওতায় থাকা এবং বার্ধক্যজনিত অন্তঃকর্ণের ক্ষয়ক্ষতিকে দায়ী করা হয়। তবে শ্রবণশক্তি হ্রাসের এগুলোই একমাত্র কারণ নয়। এটি যদি বিশেষ করে একদিকের কানে ঘটে, তাহলে বলা যেতে পারে যে, এটি শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ তথা Acoustic Neuroma এর ফল।

শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) কে Vestibular Schwannoma -ও বলা হয়। এটি নির্দোষ টিউমার, গড়ে উঠে ভারসাম্য (Balance) ও শ্রুতি নার্ভ (Hearing Nerve)- এ। এ দুটো স্নায়ু (Nerve) একসঙ্গে পেঁচিয়ে স্নায়ু গঠন করে, যা আপনার অন্ত:কর্ণ (Inner ear) থেকে মস্তিষ্ক (Brain) পর্যন্ত প্রসারিত।

বহু বছর ধরেই চিকিৎসকরা মনে করতেন, শল্যচিকিৎসাগতভাবে এটি অপসারণ করাই সর্বোত্তম চিকিৎসা। তবে ক্রমাগতভাবে তারা এখন অনুধাবন করছেন যে, কোন চিকিৎসা না করাই পরিণামে ভালো ফল দেবে।

প্রাকৃতিক ইতিহাস: A natural history

শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) এর উদ্ভব Schwann কোষ থেকে। এই কোষ Vestibular cochlear স্নায়ুকে সুরক্ষা দেয়। কী কারণে এসব কোষ অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে টিউমার গড়ে তোলে তা কেউ জানেন না। তবে এটা সম্ভবত জীনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকতে পারে। শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) একটি অস্বাভাবিক সমস্যা এবং এটি সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে  দেখা দেয়। বিরল দুএকিট ক্ষেত্রে বংশগত সমস্যার কারণেও এর উদ্ভব ঘটতে পারে।

বেশির ভাগ শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) অত্যন্ত ধীরগতিতে বাড়তে থাকে, যদিও ব্যক্তিভেদে এর প্রবৃদ্ধি ভিন্ন এবং প্রতি বছর এটি সমান তালে বাড়ে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটির প্রবৃদ্ধি বন্দ হয়ে যায়। এমনকি দু’একটা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এ টিউমার মস্তিষ্কে আক্রমণ না করলেও বড় হয়ে মস্তিষ্ক ধাক্কা মারে। লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে- শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, কর্ণনিনাদ (Tinnitus) এবং হাঁটার সময় ভারসাম্যহীনতা, মাঝে মধ্যে মুখে অবশতা কিংবা ঝিন ঝিনে অনুভূতি হতে পারে। কখনো বা বৃহৎ টিউমার আপনার মস্তিষ্ক কান্ডে (Brain Stem) গুতো মেরে মস্তিষ্কের প্রধান কার্যক্রমগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

টিউমার হলে আপনার মস্তিস্ক এবং মেরুরজ্জু (Spinal Cord) এর মধ্যকার তরল পদার্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে মস্তিষ্কে জমতে পারে জলীয় পদার্থ (Fluid)। এরকম হলে সেটিকে একটি জীবন বিপন্নকর পরিস্থিতি বলে বিবেচনা করতে হবে।

এ ধরণের সমস্যা শনাক্তকরণও একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে বুড়িয়ে যাওয়া এবং শব্দ সংস্পর্শজনিত হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কাজেই এক কানে শ্রুতিস্বপ্লতা ধরা পড়লে শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) সন্দেহে করতে হবে এবং MRI করতে হবে, যাতে Vestibular cochlear স্নায়ুতে টিউমার থাকলে তা ধরা পড়তে পারে শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ Acoustic Neuroma।

চিকিৎসা:

শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ এর আকার, লক্ষণ এবং আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করবে চিকিৎসা কৌশল। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

পর্যবেক্ষণ: Monitoring

আপনার যদি ছোটখাটো শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ হয়ে থাকে যেটি বাড়ছে না কিংবা অতি ধীর বাড়ছে এবং এর লক্ষণও তেমন নেই তাহলে আপনার চিকিৎসক এটি পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি টিউমার রোগ নির্ণয়ের পর বাড়ে না। এমনকি কোনো কোনোটা সংকুচিত হয়।

পর্যবেক্ষণকালে নিয়মিত ইমেযিং (Imaging) এবং প্রতি ৬ থেকে ১২ মাস অন্তর হিয়ারিং টেস্ট (Hearing Test) করাতে হবে। পর্যবেক্ষণের প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে টিউমার প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমাগতমানভাবে শ্রুতি হারানো।

স্টেরিওট্যাকটিক রেডিও সার্জারি: Stereotactic radiosurgery

শাব্দিক স্নায়ুঅর্বুদ (Acoustic Neuroma) বাড়তে থাকলে কিংবা লক্ষণসমূহ চাঙ্গা হলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা টিউমারের মধ্যে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে উচ্চশক্তির এক ডোজ বিকিরণ (Radiation) প্রয়োগ করেন।

এতে টিউমারের প্রবৃদ্ধি থামানোর ক্ষেত্রে সাফল্যের হার শতকরা ৯০ভাগেরও বেশি।

ঝুঁকি সামান্য হলেও এ পদ্ধতিতে নিকটবর্তী ভারসাম্যা, শ্রুতি এবং মুখের স্নায়ু(Nerve) ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে লক্ষণের আরো অবনতি ঘটতে পারে এবং দেখা দিতে পারে নতুন সমস্যা।

ওপেন সার্জারী: Open Surgery

টিউমার বৃহৎ এবং দ্রুত বর্ধনশীল হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি অপসারণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে অন্তঃকর্ণ (Inner ear) কিংবা মস্তিষ্কের খুলিতে কর্তিত কোনো অংশের মধ্য দিয়ে টিউমার বের করে আনা হয়। স্নায়ু(Nerve)- এর ক্ষতি, লক্ষণসমুহের অবনতি ঘটা ইত্যাদি। সাধারণভাবে বলা যায়, টিউমার যত বড় হবে আপনার শ্রুতি, ভারসাম্য এবং মুখের স্নায়ু তত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অন্যান্য জটিলতার মধ্য রয়েছে সার্বক্ষণিক মাথাব্যথা।

গবেষণা

এ তিন ধরণের চিকিৎসার মধ্যে তুলণা করে দেখা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলা যায়, ক্ষুদ্র টিউমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এ তিন ধরনের পদক্ষেপেই বিস্ময়করভাবে তেমন কোন পার্থক্যই মেলেনি।

আরও পড়ুনঃ কন্ঠনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয়।

গণ সচেতনতায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

ten + 3 =