যৌন নিপীড়ন থেকে শিশুদের বাঁচাতে হলে

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

যৌন নিপীড়ন থেকে শিশুদের বাঁচাতে হলে

শিশুদের যৌনহেনস্থা ও যৌন নিপীড়ন বড়ই করুণ ও দুর্বাগ্যজনক ঘটনা। দুঃখের ও উদ্বেগের কথা হল শিশুরা হামেশাই এই ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও তা অভিভাবক ও বাবা-মায়েদের নজর এড়িয়ে যায়, যদি না রক্তপাত বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতি পাঁচটি শিশুকন্যার মধ্যে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।

ফুলের মতো নিষ্পাপ ছেলেমেয়রা অনেক সময়ই নিপীড়নকারীর উদ্দেশ্য বিকৃত কামনা ও রুচির কথা বুঝতে পারে না। পরিবারের চেনাপরিচিত লোকজন, কাজের লোক, ড্রাইভার বা পাড়াপড়শিদের দ্বারা ছেলেমেয়ারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

কারা শিশুদের যৌন নির্যাতন করবে তা বলা শক্ত। অবশ্য অনেক পুরুষ আছেন যারা ট্রেনে-বাসে, ভিড় ট্রেনে বা ভিড়ের জায়গায় নানা ছলে মেয়েদের শরীর স্পর্শ করে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিয়ে মর্দন করার চেষ্টা করে। এ এক ধরনের কাম বা যৌনলালসা নিবৃত্ত করার প্রচেষ্টা। এদের প্যারাফিলিক বলা যেতে পারে। এই প্রকৃতির মানুষেরা সুযোগ পেলে শিশুদের যৌনাঙ্গ দেকা, হাত দেওয়া, মর্দন করার চেষ্টা করতেই পারে। শিশুরা যেহেতু মানসিক পরিণতির দিক থেকে কম, তাদের চপলতা ও সরলতা বেশি, তারা বাধা দিতে পারে না বা পুরুষদের লালসা, অসভ্য আচরণ বুঝতে পারে না তাই মিশুরাই বেশি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

শিশুদের যৌন নিপীড়ন করার ইচ্ছা ‘সেক্সুয়াল ও রিয়েনটেশনের’ অস্বাভাবিকতা বলা যায়। কিছু পুরুষ থাকে তাদের যৌন ইচ্ছার মধ্যে শিশুদের প্রতি আকর্ষণ তীব্র হয়। শিশুদের গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে, আঙুল দিয়ে তাদের কাম চরিতার্থ হয়। একটু বড় বয়সের শিশুদের সঙ্গে যৌনমিলন পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়। এদের পিডোফিলিক বলা হয়। সেই অস্বাভাবিক কাম নিবারণের ইচ্ছাকে পিডোফিলিয়া বলা হয়। খুব কম বয়সের তিন-চার বছর মেয়েদের প্রতি যৌন আকর্ষণকে ইনফ্যান্টোফিলিয়া বলা যায়।

শিশু যৌন নির্যাতকেরা অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে থাকে। অ্যালকোহল বা অন্য নেশা যেমন ক্যানাবিশ অর্থাৎ গাঁজা, ইত্যাদির নেশা করে থাকে। যৌন নির্যাতকদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিশৃঙ্খল দেখা যায়। বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি বা অ্যান্টি সোস্যাল পার্সোনালিটি সম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেক সময় শিশু নির্যাতক হয়।

কার মনের মধ্যে শিশুদের যৌন নির্যাতনের ইচ্ছে আছে তা বাইরে থেকে বোঝা দুষ্কর। অনেকেই সুযোগ বুঝে এই ধরনের নিপীড়ন করে থাকে।
কীভাবে ছেলেমেয়েদের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করা যায়।

ছেলেমেয়েদের যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার মূল দায়িত্ব শিশুর বাবা-মা ও অভিভাবকদের। যদিও শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন সমাজসচেতন সব মানুষেরই শিশুদের রক্ষা করার দায়িত্ব থেকে যায়। শিশু দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়। সুতরাং স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও শিশুকে যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব থেকে যায়। আমাদের দেশে প্রিভেনশন ও চাইল্ড অ্যাবিউজ অ্যাক্ট-এর মতো আইন আছে যা শিশুদের যৌন হেসন্থা ও যৌন নিপীড়ন নিবৃত্ত করার ও যৌন নিপীড়কদের শাস্তি দেবার জন্য তৈরি হয়েছে। শুধু আইনদিয়ে এই গভীর ও সংবেদনশীল সমস্যার সমাধান করা যায় না। অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজসেবিদের এগিয়ে আসতে হবে। শিশুকে ভালো স্পর্শ বা খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে বলতে হবে। এমনিতে যৌনাঙ্গে কারো হাত দেবার কথা নয়, কাউকে হাত দিতে দেবে না-এটা শেখাত হবে।

*অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কারো সঙ্গে পার্কে বা নির্জন কানো স্থানে শিশুকে একা ছাড়বেন না।

* বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার বা কাউকেই অন্ধ বিশ্বাস না করাই ভালো। শিশুর শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার জন্যে কোনো কম্প্রোমাইজ ঠিক নয়।

* শিশুদের মন বুঝুন। ও যেন সব কথা, মনের কথা আপনাকে খুলে বলতে পারে। অযথা শিশুকে ভয় দেখাবেন না। অতিরিক্ত শাসন ভালোর থেকে খারাপই বেশি করে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

* অবিশ্বাসী মন নয়, সতর্ক মন দিয়ে শিশুর যারা পরিচর্যা করে, দেখাশোনা করে তাদের আচার-আচরণ লক্ষ করতে হবে।

শিশুদের দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের থেকে রক্ষা করা শুধু বাবা-মায়ের, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই দায়িত্ব নয়, সমাজসচেতনা মানুষদেরও সতর্ক ও সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার। নিষ্পাপ শিশুরা প্রতিবাদ করতে জানে না বা পারে না, তারা দৈহিক ক্ষমতা দিক থেকে বয়স্কদের তুলনায় দুর্বল এবং অসহায়, তার জন্যই অনেক বিকৃতমনস্ক নিষ্টুর মানুষ তাদের নির্যাতন করে থাকে। এদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।

সবশেষে বলি, শিশুদের যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধ স্বাস্থ্য রক্ষারই অন্যতম নিদর্শন। আসুন আমরা এই সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধ করি।

আরও পড়ুনঃ শিশুদের একজিমা হলে যা করণীয়।

গণ সচেতনতায় ডিপিআরসি হসপিটাল লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

one × 3 =