উম্মে সাইকা নীলা– স্পেশাল শিশুদের স্পেশাল ডাক্তার

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

উম্মে সাইকা নীলা– স্পেশাল শিশুদের স্পেশাল ডাক্তার

মায়ের হাত ধরে শান্ত হয়ে বসে অধীর আগ্রহ আর শিশুসুলভ কৌতূহল নিয়ে তন্ময় হয়ে শুনছে নিরাজ (নাম পরিবর্তিত) মায়ের সাথে তার প্রিয় ‘নীলা ম্যাডাম’ এর কথোপকথন। নিস্পাপ চোখ দুটিতে অদ্ভুত সুন্দর একটা দ্যূতি। মায়ের চোখে মুখে এক অপার্থিব আনন্দ, এক নতুন আশা – কখনো মুক্তোদানা হয়ে ঝরে পড়ছে আনন্দাশ্রু। স্পেশাল চাইল্ডদের বিষয়ে মেডিকেলবিডি’র এই আয়োজন।

নিরাজের মা জানালেন, নিরাজের বয়স ৫ বছর ৭ মাস। তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় কিন্তু স্কুল ও বাসায় তার দৈনন্দিন আচরণগত নানা সমস্যায় তারা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন, ডাক্তার দেখান, যে যেখানে বলেন সেখানেই ছুটে যান। তাদের একমাত্র সন্তানকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে হেন চেষ্টা নাই যা তাঁরা করেন নাই, অতঃপর এক চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা নিরাজকে আইএনডিআর’এ নিয়ে আসেন।

শিশু বিকাশ নিয়ে কাজ করা অকুপেশনাল থেরাপিস্ট উম্মে সাইকা নীলা জানালেন, “নিরাজ মূলতঃ এডিএইচডি অর্থাৎ অ্যাটেনশন ডিফিসিট হাইপার অ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার এবং এসপিডি বা সেন্সরী প্রসেসিং ডিসঅর্ডারে ভুগছিলো, আচরণগত এই সমস্যার বিশেষত্ব হচ্ছে অমনোযোগ, বেহিসেবি দস্যিপনা ও অস্থিরতা। কোনো কিছু ঠিকঠাক শোনে না, কোনো নির্দেশ ভালোভাবে পালন করে না। কোনো কিছুতে ধৈর্য ও মনোযোগ রাখতে পারে না। একটা কাজ শেষ না করেই আরেকটি শুরু করে দেয়। নিরাজের’ও এমনি নানা সমস্যা ছিলো যেগুলো তার স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো”। তিনি আরো জানালেন, “এছাড়াও নিরাজ সবার সাথে কথা বলতো না, অহেতুক কান্না করতো, মাকে ছাড়া কোন কাজ করতো না। রঙ চিনতো না, আকৃতিগত অর্থাৎ ছোট বড় এবং ওপর নীচ এসব সাধারণ জ্ঞান ছিলো না, সে লিখতে পারতো না, কোন ছবি রঙ করতে পারতো না, অস্বাভাবিকভাবে কথা বলতো, একটা দুটো শব্দ বলতো – পুরো বাক্য বলতে পারতো না। নিজে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারতো না, অন্যকে লাথি মারতো, থুতু নিয়ে খেলতো, চুল টানতো, স্কুল ড্রেস পড়তো না, ১ জনের অতিরিক্ত বাচ্চার সাথে খেলতো না, গাড়ী নিয়ে না খেলে শুধু গাড়ীর চাকা ঘুরাতো, ০৫ মিনিটও কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারতোনা”।

উম্মে সাইকা নীলা জানালেন, “আমাদের কাছে আসার পর আমরা প্রতিটি শিশুকে যথেষ্ট সময় নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে অ্যাসেসমেন্ট ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সর্বপ্রথমেই আমরা তার সমস্যাগুলো নির্ণয় করে নেই। অতঃপর তার প্রয়োজন অনুযায়ী  বিভিন্য বিশেষজ্ঞের বিশেষজ্ঞের সহায়তায় প্রত্যেকের জন্য একটা স্পেশালাইজড এবং ইন্ডিভিজুয়ালাইজড থেরাপি এন্ড ম্যানেজমেন্ট প্লান তৈরি করে নেওয়া হয়, অতঃপর সে অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট থেরাপি সেশন স্থির করে সামগ্রিক পরিকল্পনাটি ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। আর বাস্তবায়নের প্রতিটি পদেক্ষেপেই রয়েছেন আমাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত থেরাপিউটিক প্রফেশনালগণ”।

আসলে শুধু প্রথাগত অকুপেশনাল থেরাপি, সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন, লিসেনিং থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির মাধ্যমেই নয়, বরং সেই সাথে উচ্চ-প্রযুক্তির নিউরোফিডব্যাক ব্রেইন ট্রেইনিং, নিউরো মড্যুলেশন থেরাপি, ট্রান্স-ক্রেনিয়াল ফোটো-বায়ো-মড্যুলেশন, ট্রান্স-ক্রেনিয়াল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল তথা আন্তরিকতা ও নিবিড় পরিচর্য্যাই ইন্সটিউট অব নিউরো ডেভলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (আইএনডিআর) এর সফলতার চাবিকাঠি।

আরও পড়ুনঃ কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেলে কি সমস্যা হতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

20 − four =