
ধবল বা শ্বেতী-একটি অজেয় রোগের নাম
সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্কের নাম শ্বেতি বা (Leucoderma)। বেশির ভাগ ডার্মাটোলজিস্ট যেখানে ব্যর্থ তার নাম শ্বেতি। অন্যতম সামাজিক সমস্যার নাম শ্বেতি। কঠিনতম মানসিক সমস্যার নাম শেতি।
শরীরের চামড়া সাদা হয়ে যাওয়াকে আমরা শ্বেতি বলি। সর্বপ্রথম এতে লক্ষণস্বরুপ একটা ছোট সাদা বিন্দুর মতো দাগ পড়ে, তার পর ধীরে ধীরে তা বিস্তার লাভ করে। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় অধিক স্থান জুড়ে বিস্তার লাভ কর এবং সাদা হয়ে যায়।Pigment হয় ত্বকের উপাদান। এ Pigment এর তারতম্যের জন্যই মানুষ সাদা- কালো হয়। এ Pigment এর অভাবব হেতু চর্ম দুধের মতো সাদা হলে তাকে আমরা ধবল বা শ্বেতি বলতে পারি।
ব্যথা, ফোলাসহ অন্য কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত না হলেও এটা মানসিক ও সামাজিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান কারণ হিসেবে কোনো একক সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারেনি। শ্বেতির কারণ সমন্ধে মতভেদ বিস্তর। তবে পর্যালোচনা থেকে যে কারণগুলো বেরিয়ে এসেছে সেগুলো হলো- বংশগত, চর্মের সৃষ্টির মূলে রয়েছে Melanin জাতীয় Pigment (Pigment এর একটা Layer থাকে) যে অংশে শরীরে যে Melanin বিস্তার রোধ হয়ে যায় ও Pigment নষ্ট হয়ে যায় সে অংশে এ রোগ হয়। সমস্ত শরীরে যদি এর ওশমের অবস্থা হয় তাহলে তাকে (Albinos) বলে।
অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী এটাকে লিভারের দোষ সম্পর্কিত চর্মরোগ বলে অ্যাখায়িত করেছেন। সন্তানদের দেহে এ রোগ সৃষ্টি হয়। আবার কারো কারো মতে জিনগত সমস্যার কারণে এ রোগ হতে পারে।
কালো চামড়ার মানুষেরা বেশি তাপ সহ্য করতে পারে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সেহেতু শ্বেতি রোগীরা বেশি তাপ সহ্য করতে পারে না। অনেক সময় অতি সামান্য অংশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্থানের লোমও সাদা হয়ে যায়। আক্রমণ বেশি হয়। কুষ্ঠ রোগ হলেও চামড়ার রঙ সাদা হয়ে যেতে পারে, তবে কুষ্টের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ কুষ্ঠ আক্রান্ত ও ধ্বংসাত্নক। সাদা হয়ে যাওয়া ও তাপ সহ্য করা- এ দুই উপসর্গ ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা সাধারণত দেখা যায় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর তেমন কোনো ফলপ্রসূ চিকিৎসা নেই। তবে শতকরা ২০-২৫ ভাগ রোগী চিকিৎসা নিয়ে ভালো হওয়ার তথ্য রয়েছে। যেসব রোগী রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা নেয়, শুধু তারাই এই সুফল পেতে পারে। আর পুরো ভালো না করতে পারলেও যে অবস্থায় আছে সেখানেই ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব।
»এলোপ্যাথিক চিকিৎসা মতে- অতি বেগুনি রশ্মির আলো প্রতিদিন সকালে ২ ঘন্টা করে নিতে হবে (যা আমরা সূর্যের আলো থেকে পাই)
»রাতে রুমে বেগুনি রঙের বাতির কাছে যতটা সম্ভব থাকতে হবে।
»Methoxsalen জাতীয় ওষুধ যেমন- Tab-Meladinine 10mg. প্রতিদিন একটা করে সকাল ও বিকেলে এক মাস সেব্য।
»সাথে Meladinine ও সকালে ও বিকেলে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।
»ভিটামিনের অভাবে থাকলে Multi Vitamin Tab- Multivat Plus সকালে ও রাতে একটা করে সেবন করা যেতে পারে।
»মানসিক দুশ্চিন্তা থাকলে Fluxetin জাতীয় ট্যাবলেট Modipran 20mg সকালের নাশতার পর একটা করে এক মাস সেবন করতে পারেন।
»আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন একবার লাউ ফুল ঘষে নিতে পারেন। কচি পদ্মপাতায় গরম ভাত খেলে উপকার পেতে পারেন। শ্বেত জয়ন্তির মূলের ছাল বেটে গরুর দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার সেবন এবং আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার পেতে পারেন।
»শ্বেতি আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঘি, দুধ, ছানা, মাখন প্রভৃতি স্নেহজাতীয় খাবার উপকারী। স্নায়ুর পুষ্টিসাধনের জন্য ফলের রস চলতে পারে, তবে ভিটামিন সি অতি মাত্রায় না খাওয়াই ভালো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করবেন। নেশাজাতীয় খাবার ও অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করবেন।
medicalbd সাস্থের সকল খবর।
