দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর ভূমিকা

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর ভূমিকা

দাম্পত্য জীবন সুখি করতে প্রতিটি সংসারে পুরুষের ভূমিকাই প্রধান। কিন্তু দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুরুষ অনেক সময়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সেই মুহূর্তেও পুরুষ মানুষকে কিছু কঠিন বিষয় মেনে চলতেই হয়। না হলে দাম্পত্য জীবন এবং সংসারের সুখ চলে যায়। আমাদের এটা জানা উচিত, যে কোন ব্যক্তির আত্মনির্মাণের জন্যে সুখী ও অনুকূল পারিবারিক পটভূমি সবচেয়ে বেশি সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। অনুকূল পারিবারিক পরিমণ্ডল ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। পরিবার গড়ে ওঠে একজন নারী ও একজন পুরুষের পারিবারিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। এই সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হবে, যত মমতা ও শ্রদ্ধামাখা হবে, পারিবারিক আচার আচরণ যত প্রো-অ্যাকটিভ, সুশৃঙ্খল ও সুপরিকল্পিত হবে, ততই পারিবারিক পরিমণ্ডল মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি সুখী পরিবার ও অনুকূল পারিবারিক পরিমণ্ডলের ভিত্তি হচ্ছে ভালবাসা ও মমতা, শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা ও আত্মিক একাত্মতা। অনুকূল পারিবারিক পরিমণ্ডলে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক পরস্পরের পরিপূরক।

দাম্পত্য জীবন এবং পুরুষের ভূমিকা

স্বামী যদি অসহোযিগতা করে, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে শুধু রমণীর গুণে দাম্পত্য জীবন সুখী হতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক আবার তোমরাও স্ত্রীদের পোশাক।’ (সূরা বাকারা: ১৮৭)। এ আয়াতে স্পষ্ট ভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে সুখময় সংসার গঠনে উভয়ের ভূমিকা ও দায়িত্ব সমান। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘স্বামীর যেমন স্ত্রীর থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি স্ত্রীরও অধিকার আছে স্বামী থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার।’ (সূরা বাকারা: ২২৮)। এ আয়াতে সদাচারণের আদেশ উভয়কে সমান ভাবে করা হয়েছে। উপরন্তু সূরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে বিশেষ ভাবে শুধু স্বামীকে আদেশ করা হয়েছে, ‘তোমার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, সংসারের মিল-মহব্বত, সুখ-শান্তি ধরে রাখার পেছনে স্বামীর আচরণের ভূমিকাটাই মূখ্য।নিম্নে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো- যেগুলোর অনুশীলনের ফলে একজন মানুষ দায়িত্বশীল ও সফল স্বামীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

Please Subscribe Us!

যখন তখন স্ত্রীর ভুল ধরা – যখন তখন নারীরা তাদের ভুল ধরা পছন্দ করেন না। তাই ঐ কাজ থেকে আপনাকে বিরত থাকতেই হবে। আর এতে তিনি খুশিই থাকবেন। তিনিও আপনার ভুল সহজে ধরবেন না। এতে দাম্পত্য জীবন মধুর হবে। নিজের পরিশ্রমের ফিরিস্তি – কাথায় কথায় নিজের পরিশ্রমের ফিরিস্তি দেবেন না। তাহলে আপনার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারেন। প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কি কাজ করি না? ঘর সামলানো কি কাজের মধ্যে পড়ে না? আর এতেই তার মাথা গরম হয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত হবে। সুতরাং সাবধান। কথা শুনতে মনোযোগ না হারানো -স্ত্রী আপনাকে মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু বলছেন, এমন সময় আপনি মনোযোগ হারাবেন না। ধৈর্য ধরে তার কথাগুলো শুনুন এবং বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করুন। তিনি খুশি হবেন। দাম্পত্য জীবন সুখি করতে এটা খুবই প্রয়জনীয়। আর্থিক বিষয়ে সতর্ক থাকুন – দাম্পত্য জীবনে সমস্যার অন্যতম কারণ অর্থ। সমস্যাটি আরও প্রকট হয় যখন স্বামী হয় পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এবং স্ত্রী থাকে আর্থিক ব্যাপারে পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। এসব ক্ষেত্রে স্বামীর উপার্জন এবং স্ত্রীর প্রত্যাশার মধ্যে ভারসাম্য না থাকলেই সমস্যা দেখা দেয়। অর্থনৈতিক বিষয়ে ঝামেলা এড়াতে স্ত্রীর প্রয়োজনটাও মাথায় রাখবেন। জীবন সঙ্গীনীর জন্য সুন্দর একটা নাম নির্বাচন করুন – আপনার জীবন সঙ্গীনীকে ডাকার জন্য খুব সুন্দর একটা নাম নির্বাচন করুন। কখনও তাকে কোনো বাজে নামে বা মন্দ শব্দে ডাকবেন না। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের এমন নামে ডাকতেন যে নামে ডাকা তারা পছন্দ করত। তাই তার জন্য তার মনের মতো একটি সুন্দর নাম নির্ধারণ করুন। যে নামের ডাকে খুশিতে তার মন ভরে যাবে। স্ত্রীর গুণের মূল্যায়ন করুন – অনেক পরিবারে স্ত্রী সারাদিন খাটুনির পরেও স্বামীর মন পায় না। এমনকি এত কিছু করার পরেও সামান্য দোষ করা মাত্রই স্বামী তা কঠিন ভাবে ধরে। স্ত্রীর সঙ্গে এমনটি কখনও করবেন না। এটা চরম ভুল ও জুলুম। স্ত্রীর গুণ ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করুন। শুধুমাত্র তার গুণগুলোর প্রতি আপনার মনোযোগ ও দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। দাম্পত্য জীবন সুখি করতে এটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসুন – সে যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে দেখে মুচকি হাসুন। বেশির ভাগ সাক্ষাতের সময়, বিদায়ের সময় আলিঙ্গন করুন। হাদিসের ভাষ্যমতে মুসলমানকে দেখে মুচকি হাসি দেওয়াও একটি দান। আপনার স্ত্রীও তো একজন মুসলমান। ভেবে দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি সবসময় আপনাকে হাসি-খুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে! সেই হাদিসের কথা মনে রাখুন, নবী করিম (স) যখন নামাজের জন্য যেতেন তখন স্ত্রীকে চুমু দিয়ে যেতেন। স্ত্রীর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন – আপনার জন্য, আপনার সংসারের জন্য সে যে কাজগুলো করছে বা করেছে সেগুলোর জন্য খোলা মনে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। ঘনঘন তার কাজের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। মুক্ত মনে তার শ্রম ও মননের স্বীকৃতি দিন। তার কাজের ভুল ধরার চেষ্টা করবেন না, তার সমালোচনা করার চেষ্টা করবেন না। জীবন সঙ্গীনীকে খুশি করুন – জীবন সঙ্গীনীকে বলুন, সে যেন এমন দশটি কাজের কথা আপনাকে বলে যেগুলো আপনি তার জন্য করলে তার ভালো লাগবে- সে খুশি হবে। তার থেকে জেনে নিয়ে তাকে খুশি করার জন্য আপনি সেগুলো করুন। অনেক সময় সে সরাসরি না বললে আপনার পক্ষে বুঝা কষ্টকর হবে যে, আপনি কী করলে সে খুশি হবে। তাই সবসময় নিজে থেকে অনুমান করার চেষ্টা করবেন না। বরং মাঝে মধ্যে সরাসরি সঙ্গীনী থেকে জেনে নেবেন। জীবন সঙ্গীনীর আগ্রহ গুলোকে ছোট মনে করবেন না, তাকে সুখী করার চেষ্টা করুন। অনেক স্বামী নিজের স্ত্রীর আগ্রহের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না, একে কোনো বিষয়ই মনে করে না। এমনটি ভুলেও কখনও করবেন না।

স্ত্রীর সঙ্গে মজা করুন – নিজের জীবন সঙ্গীনীর সঙ্গে ফুর্তি করুন, মজা করুন। তার মন ভালো করে দিন। দেখুন, নবী করিম (স) হজরত আয়েশা (রা.) এর সঙ্গে মরুভূমিতে দৌঁড় খেলেছেন। সম্পর্ক লালন করুন – জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পারিবারিক জীবনেও আপনি যদি সাফল্য চান, আপনাকে পরিবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। পরিবারে সময় দিলে সেটা আপনার ভবিষ্যত্‍ জীবনের জন্য ভালো হবে। অফিসের চাপ, ঝামেলা বা টেনশনকে অফিসে রেখে শুধু পরিবারকেই সময় দিন তবেই দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। নায়িকা বা অন্য কোনো নারীর সঙ্গে তুলনা না করা – অন্যকোনো নারীর সঙ্গে তুলনা করলে নারী অখুশি হন। তাই যে কোনো কারণেই আপনি কারো সঙ্গেই আপনার স্ত্রীর তুলনা করবেন না। এতে তার স্বকীয়তা বজায় থাকবে। বিরক্তি প্রকাশ না করা – স্ত্রীর যে কোনো কাজে সামনাসামনি বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। পুরুষ বিরক্ত হলে নারীরা দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে পড়েন। এতে ঝগড়ার সূত্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

Please Subscribe Us!

পরিবারে স্বামী হিসেবে করণীয়

স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই দাম্পত্য জীবন সুখের রাখতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।পরিবারে স্বামী হিসেবে করণীয় থাকে অনেক। এবার দেখে নিন পরিবারে স্বামী হিসেবে করণীয় কি। স্বামী হিসেবে নিজেকে পরিবারের প্রধান দায়িত্বশীল মনে করা।

  • পরিবারের দায়িত্ব পালনকে ইবাদত মনে করা।
  • স্ত্রীকে বান্ধবী, জীবন সঙ্গিনী ও ঘরের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা।
  • পারিবারিক প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা।
  • স্ত্রীর ভাল কাজ, অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা করা।
  • স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকা এবং ভালবাসা ও অনুরাগ, কথা ও আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা।
  • কর্মস্থলের বা বাইরের রাগ, ক্ষোভ ঘরের স্ত্রী-সন্তান বা গৃহকর্মীর উপর প্রকাশ না করা।
  • নিজের ভুল নিঃসঙ্কোচে স্ত্রীর নিকট স্বীকার করা। অন্যায় করলে মাফ চেয়ে নেয়া।
  • আয় অনুসারে স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণ, ছোটখাট উপহার দান ও হাতখরচা প্রদান করা এবং হাতখরচা ব্যয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস না করা।
  • স্ত্রীর অর্জিত অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ে স্ত্রীকে স্বাধীনতা প্রদান।
  • স্ত্রীর যুক্তি সঙ্গত আবদার পূরণ করা।
  • নিজেরে আয় সম্পর্কে প্রথম থেকেই স্ত্রীকে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া ও অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জন না করা।
  • পেশাগত বা পারিবারিক সংকট দেখা দিলে স্ত্রীর সাথে তা খোলামেলা আলোচনা করা।
  • আত্মীয়-স্বজনকে উপহার বা সাহায্য করার ব্যাপারে স্ত্রীকে অযৌক্তিক বাধা না দেয়া।
  • স্ত্রীর আত্মীয়দের নিয়ে তাকে কথা না শোনানো।
  • স্ত্রীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মত শ্রদ্ধা করা।
  • ঘরের খুঁটিনাটি ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। ঘরের কাজে সাধ্যমত সাহায্য করা।
  • স্ত্রীর ভুল ত্রুটি নিয়ে সন্তানদের সামনে ভর্ত্‍সনা না করা।
  • সপ্তাহে একদিন পুরোপুরি স্ত্রী পুত্র কন্যাদের নিয়ে কাটানো।
  • ঘরের প্রতিটি কাজ এমনি রান্নাবান্নায়ও পিকনিকের মতো অংশ নেয়া।
  • স্ত্রীর যে কোন ভুল ত্রুটিকে সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা।
  • অন্যের কাছে স্ত্রীর বদনাম না করা।
  • পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকা।
  • অর্থ অপচয় না করা। আবেগ প্রসূত কেনাকাটা না করা।
  • নিজের দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।
  • স্ত্রীর শারীরিক খোঁজখবর নিয়মিত জিজ্ঞেস করা। অসুস্থ হলে নিজে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।
  • স্ত্রীর যে কোন অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনা। কোন প্রস্তাব বা কথায় প্রথমেই না বলা থেকে বিরত থাকা।
  • বাইরে কাজ আছে বলে ক্লাব বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তাস খেলে বা ফালতু আড্ডায় সময় নষ্ট না করে পরিবারের আত্মিক ও মানসিক উন্নতির জন্যে সময় ব্যয় করা।

দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য

১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে উঠে না।

(ক) পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে আসে।

(খ) সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।

(গ)সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার অধীনরা অসন্তুষ্ট।”

২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।

ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”

Please Subscribe Us!

৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”

৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।

ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।”

৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ, এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা বলা নিরেট কুফরি।”

৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা না রাখা।

সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার, আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে বড়।

৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত করে।”

৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ না করা :

আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”

৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র না হওয়া।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট করে দেবেন।”

১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে ঢুকতে না দেয়া।

বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”

১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।” নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব।

স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”

Please Subscribe Us!

বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে। আর এসব বিষয়ের প্রতি খুব নজর রাখবে।

  • অল্পতে তুষ্টি থাকবে।
  • তার তার অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
  • তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
  • তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয় গন্ধ শরীরে রাখবে না।
  • তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
  • মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে বিসন্নতার সৃষ্টি হয়।
  • তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

nineteen + 9 =