ফাইব্রোমায়ালজিয়া এক অদ্ভুত বাত রোগ

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ফাইব্রোমায়ালজিয়া এক অদ্ভুত বাত রোগ

সুমাইয়া (ছদ্মনাম) পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করছেন ৷ ৩-৪ মাস হলো বিয়ে করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে শরীরের জায়গায় জায়গায় ব্যথা হয়। বেশি পরিশ্রম করলে ব্যথা ও ক্লান্তি লাগে। রাত্রে যখন ঘুমাতে যায় ব্যথা বেড়ে যায়। তবে স্বাভাবিক হাঁটাচলা ফেরায় ব্যথা কমে আসে৷ সুমাইয়া বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে কোন ফল পাচ্ছিলেন না। পরে জানতে পারেন তার ফাইব্রোমায়াইজিয়া রোগ হয়েছে।
ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা, যার প্রধান উপসর্গ হচ্ছে মাংসপেশি, টেন্ডন এবং অস্থিসন্ধি গুলোতে প্রদাহ হওয়া। মধ্যবয়সী লোকজনের মধ্যে এই রোগের সূত্রপাত হয়। পুরুষের তুলনায় নারীরা সাতগুন বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়।

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারনঃ
১. বিষন্নতা এবং উদ্বেগ ও মনস্তাত্ত্বিক কারন।
২. পেশি ব্যথা।
৩. দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা। যেমনঃ টেনশনের মাথাব্যথা (প্রায়ই ঘাড়ের অস্বস্তির সাথে শুরু হয়।)
৪. ঘুমের সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে পা নাড়ানো (নিশাচর মায়োক্লোনাস)।
৫. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম।
৬. কোভিড-১৯ পরবর্তী জটিলতা।
৭. হরমোন পরিবর্তন।
৮. মানসিক চাপের ভিন্ন মাত্রা।
৯. জলবায়ু পরিবর্তন।
১০. বংশগতির প্রভাব।
১১. ট্রমাঃ শৈশবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
১২. বাইপোলার ডিজঅর্ডার থেকে কো- মরবিডিটি হিসেবে হতে পারে।
১৩. অতিরিক্ত পরিশ্রম।
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার লক্ষণঃ
১. মাংসপেশিতে যন্ত্রণা, জ্বালাভাব ও টান দেওয়ার মত অনুভূতি, খিচুনি অনুভব করা।
২. অস্থিসন্ধির চারপাশে আঙুল দিয়ে চাপ ফাইল ব্যথা অনুভব করা।
৩. অস্বাভাবিক ক্লান্তি।
৪. ঘুম না আসা।
৫. সব সময় চিন্তিত, অবসন্ন থাকা।
৬. পেট ব্যথা, পেট ফুলে থাকা।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া।
৮. মুখ, চোখ ও নাক শুষ্ক হয়ে থাকা।
৯. মাথা যন্ত্রণা, মাইগ্রেইনের উপসর্গ দেখা দেয়।
১০. ঠান্ডা, গরম, আলো ও শব্দে অনুভূতি বেশি হওয়া।
১১. হাত, পা, মুখের নানা জায়গা আসার হয়ে থাকা ও ঝিঁ ঝিঁ ভাব।
১২. মনে রাখা বা চিন্তা করায় সমস্যা তৈরি হওয়া।
১৩. কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
১৪. বিপাকে ও রেচনে সমস্যা দেখা দেওয়া।
১৫. প্রচন্ড মাসিকের ব্যথা।
১৬. পেটের চামড়ায় ব্যথা হওয়া।
১৭. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।
১৮. Fibrofog ব্যথার জন্য কাজে বা কথায় মনোযোগ দিতে না পারা।
১৯. চামড়াতে জ্বালাপোড়া করা।
২০. হাতের তালুও পায়ের তালু ঘেমে যাওয়া, শরীরে ঘাম হওয়া।
২১. বুকে ব্যথা হওয়া।
২২. শরীর ফুলে যাওয়া।
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ট্রিগার পয়েন্ট (মানে যে সকল জায়গায় চাপ দিলে ব্যথা লাগে) :
-মাথার পেছনের দিক
-কাঁধের উপর দিক
-বুকের উপরিভাগ
-নিতম্ভ
-হাঁটু
-কনুইয়ের বাইরের দিক।

চিকিৎসাঃ
১. ঔষধঃ নন-স্টেরয়েডাল প্রদাহনাশক, এন্টিডিপ্রেসেন্ট, এন্টি-সিজার ড্রাগ, প্রবায়োটিকস, ভিটামিন ও মিনারেলস ইত্যাদি। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহন করতে হবে।
২. ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা (ইলেক্ট্রোথেরাপি, স্ট্রেচিং ব্যায়াম, ট্রিগার পয়েন্ট মেনুপুলেশন, বায়োফিডব্যাক)
৩. উত্তপ্ত পুল চিকিৎসা, গরম পানিতে প্রশিক্ষণ
৪. বেদনা দায়ক এলাকায় তাপ প্রয়োজন
৫. জীবনধারা পরিবর্তনঃ
-স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া
– শারীরিক ও মানসিক চাপের সাথে মানিয়ে নিতে শেখা
– নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখা
– নিয়মিত ব্যায়াম করা
– হাঁটাচলা করা
-সাঁতার কাটা
ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় করনীয়ঃ
-নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস অনুশীলন।
-বেশি বেশি আমিষ গ্রহণ।
-বেশি করে শাকসবজি খেতে হবে।
-ঘনঘন পানি পান করা।
-লবণ থেকে সাবধান।
-নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা।

ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান
বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট
ডিপিআরসি (১২/১ রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা)
ফোনঃ ০১৯৯৭৭০২০০১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

twelve − 4 =