ডেঙ্গু জ্বর পরবর্তী শারীরিক অক্ষমতার চিকিৎসা।

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

ডেঙ্গু জ্বর পরবর্তী শারীরিক অক্ষমতার চিকিৎসা।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস মশা কামড়ানোর তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো দেখা যায়। এই মশা সাধারণত ভোরবেলা ও সন্ধার পূর্বে কামড়ায়। এই জ্বরের উপসর্গ গুলো হচ্ছে- হঠাৎ ১০৪* -১০৫*  ডিগ্রি জ্বর, তীব্র মাথা ব্যথা, চোখ বা চোখের পিছনে ব্যথা করা, বমি ভাব বা বমি হওয়া, খাওয়ায় অরুচি হওয়া, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়া, মাংসপেশী ও গিরায় ব্যথা হওয়া,শরীরে চামড়ার নিচে র‍্যাশ হওয়া, গলা ব্যথা হওয়া ,ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, ব্রাশ করতে গেলে মুখ থেকে, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার পরিমান কমে যাওয়া। কোমরে ব্যথা হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হওয়া। এই জ্বরে শরীরে এত তীব্র ব্যথা হয় যেন মনে হয় হাড় ভেজ্ঞে  যাচ্ছে। অনেক সময় এই জ্বরকে ব্রেক বোন ফিভার বলে।  এমনকি  ডেঙ্গু জ্বরে হৃৎপিন্ড, কিডনি ও ব্রেইন আক্রান্ত হচ্ছে । ডেঙ্গু  রোগীদের চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও করা সম্ভব  আবার রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার  প্রয়োজন হয় । ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো  অনুচক্রিকা  বা প্লাটিলেট কমে যাওয়া,  প্লাটিলেট কমে গেলে রোগীদেরকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পরে। প্লাটিলেট বেশি কমে গেলে রোগীদেরকে শরীরে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আবার রোগীদের প্রেশার এত কমে য়ায় যে  শকেও  চলে  যেতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর ভাল হয়ে যায়, কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর ভাল হয়ে গেলেও তার পরবর্তিতে কিছু জটিলতা দেখা দেয় ।

ডেঙ্গু পরবর্তী জটিলতাঃ

চুল পড়ে যাওয়াঃ  শরীর দুর্বল থাকার কারণে, ক্ষুধামন্দা, পুষ্টির ঘাটতি থাকার কারনে  চুল পড়ে যাওয়া শুরু করে।

দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধঃ  শরীরে পানির ঘাটতির জন্য এবং ঠিক মত খাবার না খাওয়ার জন্য শরীর দুর্বল হয়ে যায়।  সবসময় ক্লান্তিবোধ হয়।

দেহের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ  শরীর এতটাই দুর্বল থাকে যে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।

  • মাংসপেশিতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, গিরায় ব্যথা হওয়া
  • মাথা ব্যথা হওয়া ।
  • চোখ ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা ।
  • ক্ষুধামন্দা হওয়ার ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া ।
  • ফুসফুসে পানি জমতে পারে।, নিউমোনিয়া হতে পারে, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হতে পারে ।
  • পেটে পানি জমা, পিত্তথলির ওয়াল মোটা হয়ে যাওয়া ।
  • রাতে ঘুম না হওয়া, কাজে অমনোযোগী থাকা। ডিপ্রেশনে ভোগা ।
  • শরীরে র‍্যাশ হতে পারে ।
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
  • এমনকি ব্রেইন ইনফেকশন হতে পারে ফলে প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
  • স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।

দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করেঃ

  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন – মাছ, মাংস্‌, ডিম ও দুধ খেতে হবে।
  • তরল ও স্যুপ জাতীয় খাবার যা দ্রুত হজমে সহায়তা করে।
  • খাবার গুলো অবশ্যই আঁশযুক্ত, খনিজ ও মিনারেল সমৃদ্ধ হতে হবে ।
  • ফল ও ফলের জুস , প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের দীর্ঘমেয়াদি  শারীরিক দুর্বলতা কমাতে  সহায়তা করে।
  • এ সময়ে অবশ্যই ফাস্টফুড, ভাজা-পোড়া, জাংক ফুড ,অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাদার খাবার পরিহার করতে হবে।
  • প্রয়োজনে বিভিন্ন মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ,জিংক, গ্লুকোসামাইন কনড্রোটিন সালফেট , হায়ালুরোনিক এসিড এবং ভিটামিন ডি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিনে খাওয়া যেতে পারে।
  • মাংসপেশি, হাড় ও জোড়ার ব্যথা কমাতে প্রাথমিক ভাবে ১৫-২০ দিন বিশ্রাম নিতে হবে।
  • পরবর্তীতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে । এক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যায়াম ও ইলেক্ট্রোথেরাপি যেমন ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক রেডিয়েশন ,হাই ফ্রিকুয়েন্সি সাউন্ড, লেজার, ম্যাগনেটো থেরাপি সহ রোগীর অক্ষমতা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন ।
  • ঘুমের সম্যসার জন্য জেনারেল বডি রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ ও ফোকাল রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ খুবই উপকারী ।
  • বুক ও ফুস্ফুসের অক্ষমতা কমাতে চেষ্ট থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর । এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্যই হলো রোগীর বিভিন্ন ব্যাথা বেদনা, শারীরিক অক্ষমতা , প্যারালাইসিস প্রতিরোধ, মানসিক অবসাদ  প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সহ  রোগীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান
পেইন,প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ।
সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট (ডিপিআরসি)
১২/১ রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা। ফোনঃ09666774411

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

5 − 4 =