গ্লুকোমা কী?
গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ, যাতে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়। এমনকি এতে এক সময় রোগী অন্ধত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়। তবে সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এই অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চচাপ এর জন্য দায়ী।
গ্লুকোমা সম্পর্কে জানা জরুরি কেন?
০১. আমাদের দেশে এবং পৃথিবীব্যাপী অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো চোখের গ্লুকোমা।
০২. অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ রোগী বুঝতে পারার আগেই চোখের স্নায়ু অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
০৩. এই রোগে দৃষ্টির পরিসীমা বা ব্যাপ্তি ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে আসে এবং কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তি অনেক দিন ঠিক থাকে বিধান রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে অনেক দেরি করে ফেলেন।
০৪. গ্লুকোমা চোখের অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব সৃষ্টি করে। তাই একবার দৃষ্টি যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
০৫. চোখের গ্লুকোমা রোগ হলে রোগীকে সারা জীবন চিকিৎসকের তত্তাবধানে থাকতে হয়। অনেকেই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকেন না বা ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করেন না। ফলে এই রোগ নীরবে ক্ষতিগ্রস্থ করে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।
কেন এই রোগ হয়?
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অদ্যাবধি চোখের উচ্চচাপই এই রোগের প্রধান করণ বলে ধরে নেয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এই রোগ হতে পারে। সাধারণ চোখের উচ্চচাপই ধীরে ধীরে চোখের স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং দৃষ্টিকে ব্যাহত করে। কিছু কিছু রোগের সাথে এই রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এই রোগ হতে পারে।
যেমন:
০১. পরিবারের অন্য কোন নিকটাত্নীয়ের (মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী, চাচা, মামা, খালা, ফুফু) এই রোগ থাকা।
০২. উর্ধ্ব বয়স (চল্লিশ বা তদূর্ধ্ব)
০৩. ডায়াবেটিস
০৪. মাইগ্রেন নামক মাথাব্যাথা
০৫. রাত্রিকালীন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন
০৬. স্টেরয়েড নামক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা
০৭. জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি
এগুলোর মধ্যে কেবল চোখের উচ্চ চাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ কী?
অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এই রোগের কোনো লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
যেমন:
০১. ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া।
০২. চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশ রঙধনুর মতো দেখা
০৩. ঘন ঘন মাথাব্যাথা হওয়া
০৪. দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোনো পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা।
০৫. মৃদু আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
০৬. ছোট শিশুদের অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
কাদের গ্লুকোমার জন্য চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি?
ক) যাদের পরিবারের নিকটাত্নীয়ের এই রোগ আছে।
খ) চল্লিশোর্ধ্বে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে যাদের ঘন ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
গ) চোখে যারা মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখেন বা ঘন ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন।
ঘ) যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে।
ঙ) যারা চোখে দূরে মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন।
গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসা:
গ্লুকোমা রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো এই রোগের চিকিৎসা সারা জীবন করে যেতে হবে। এই রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। তবে দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায় তার জন্য আমাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
এ রোগে প্রচলিত তিন ধরণের চিকিৎসা রয়েছে
ক) দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
খ) লেজার চিকিৎসা
গ) শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি
যেহেতু চোখের উচ্চচাপ এই রোগের প্রধান কারণ তাই ওষুধের দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওসুধ ব্যবহার করতে হবে। তদুপরি তিন মাস অন্তর অন্তর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এ রোগের নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। যেমন-
০১. দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
০২. চোখের চাপ পরীক্ষা
০৩. দৃষ্টির ব্যাপ্তি বা ভিজুয়াল ফিল্ড পরীক্ষা
০৪. চোখের নার্ভ পরীক্ষা
এই রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা ও তার পরামর্শ মেনে চলা।