“অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং কিছু সাধারন প্রশ্ন”
হয়তো জোরে হাঁটতে গেলেন, পা মুড়ে মাটিতে বসে ঘর পরিষ্কার করতে গেলেন, অমনি হাঁটুটা যন্ত্রণায় অবশ হয়ে গেল। কিংবা হয়তো সিঁড়ি দিয়ে কয়েক বার ওঠানামা করেছেন, কোমর থেকে হাঁটুতে বিদ্যুতের মতো ব্যথার প্রবাহ শুরু হল, মনে হল হাঁটু ‘লক’ হয়ে গিয়েছে। আর এক পা-ও ফেলতে পারবেন না। কখনও কখনও ব্যথা এমন বাড়ল যে জায়গাটা ফুলে গরম হয়ে গেল। আপনি হয়তো ‘অস্টিওআর্থাইটিস’- নামক রোগে ভুগছেন। এটাও এক ধরনের বাত, যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। তবে পুরোপুরি সারানো না গেলেও কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভাল থাকা যায়।
প্রশ্ন: অস্টিওআর্থাইটিস (হাড়ের বাত) কি?
উ: অস্থি সন্ধিস্থলে গড়ে ওঠা ধীরে ধীরে প্রগতিশীল একটি রোগ হল “অস্টিওআর্থাইটিস” যার ফলে অস্থি সন্ধিস্থলগুলি বেদনাদায়ক ও শক্ত হয়ে যায়, এবং এই রোগে সাধারণত মাঝবয়সী থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরাই বেশি আক্রান্ত হন। বাইরে থেকে পড়া চাপ এবং জৈবরাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে ভারবহনকারী অস্থি সন্ধিস্থলগুলি আক্রান্ত হলে তরুণাস্থিতে ভাঙন দেখা যায়। এটি কখনও কখনও অন্য ধরনের আর্থারাইটিসের সাথেও লক্ষ্য করা যায়। শরীরের যে কোনো অস্থি সন্ধিস্থলকে অস্টিওআর্থারাইটিস আক্রান্ত করতে পারে, তবে, সাধারণত হাতের, হাঁটু্র, নিতম্বের ছোট অস্থি সন্ধিস্থলগু্লি বেশি আক্রান্ত হয়।
প্রশ্ন: অস্টিওআর্থাইটিস হয় কেন?
উ: উবু হয়ে ঘর মোছা, ঝাঁড়ু দেওয়ার অভ্যাস থাকলে বা মাটিতে বসে রান্না, খাওয়াদাওয়া বেশি করলে মধ্যবয়সের পর অনেকের হাঁটু, কোমর এবং পায়ের হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। হাড়ের মাঝখানে যে তরল থাকে সেটা শুকিয়ে যায়। ফলে হাড়ের ঘর্ষণে এই ক্ষয় হয়। তার থেকে শুরু হয় ব্যাথা-বেদনা।
প্রশ্ন: মাঝবয়সী মহিলারা কেন এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন?
উ: পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই মহিলাদের মধ্যে অস্টিআর্থারাইটিস বেশি। কারণ তাঁরাই সাধারণত পা মুড়ে বসে রান্না, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর মোছার মতো কাজ করেন। মেনোপজের জন্য হাড়ের জয়েন্টের স্থিতিস্থাপকতা কমে। ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে থাকে বলে হাড়ে ক্যালসিয়াম-ভিটামিন-ডি ও কমতে থাকে। ফলে হাড়ের ক্ষয় বাড়ে।
প্রশ্ন: এর জন্য অল্পবয়স থেকেই মেয়েরা আগাম সতর্কতা হিসাবে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করবেন?
উ: খেলে কোনও লাভ হবে না। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ওই ভাবে পূরণ হয় না। তার থেকে পরিমিত পুষ্টিকর, সুষম খাবার খেতে হবে। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খুব উপকারি। প্রতিদিন সাদা দই খাওয়া যায় তা হলে এই বাত অনেকটা ঠেকানো যায়। সাথে শাকসব্জি, ফল, ডাল খেতে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু অনেকে বলেন, ডাল খাওয়া বারণ, এতে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে?
উ: অস্টিওআর্থাইটিসে ডাল খেতে কোনও বাধা নেই। বাদাম-ছোলা সবই খাওয়া যায়। শুধু চর্বিজাতীয় খাবার কমাতে হবে। কারণ এতে ওজন বাড়ে।
প্রশ্ন: ওজন বাড়লে কি অস্টিওআর্থাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে?
উ: অবশ্যই। ওজন বাড়লে শরীরের ভার এসে পড়ে কোমর এবং বিশেষ ভাবে হাঁটুর উপর। এটা হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি আর কী করলে এই বাত নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে?
উ: হাঁটু-কোমরের ব্যায়ামে কোনও ফাঁকি দেওয়া চলবে না। সেই সঙ্গে মাটিতে পা মুড়ে বসে কাজ না-করা, সিঁড়ি দিয়ে বেশি ওঠানামা না-করা, দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে রান্না না-করা, অতিরিক্ত না-হাটা।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন অস্টিওআর্থাইটিসে হাঁটু ফুলে গেলে গরম শেঁক দিতে হবে। ঠিক?
উ: জায়গাটা যদি ফুলে গরম হয়ে যায় তা হলে বরফ শেঁক দিতে হবে। আর গরম না-হয়ে শুধু ব্যথা হলে ব্যথা কমানোর মলম লাগিয়ে তার উপর গরম শেঁক দেওয়া যাবে।
প্রশ্ন: অস্টিওআর্থাইটিস কি জিনগত রোগ? পরিবারের কারও থাকলে হতে পারে?
উ: পুরোপুরি জেনেটিক নয়, তবে পরিবারের কারও থাকলে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সেও অনেকের হয়ে যায়। তাই নিকটাত্মীয়ের থাকলে প্রথম থেকে ব্যায়াম শুরু করা উচিত।
ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান
পেইন,প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ।
সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট (ডিপিআরসি)
১২/১ রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা। ফোনঃ09666774411