প্যারালাইসিস এর কারণ, লক্ষণ ও আধুনিক চিকিৎসা

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন






প্যারালাইসিস এর কারণ, লক্ষণ ও আধুনিক চিকিৎসা


প্যারালাইসিস এমন শারীরিক অসুখ, যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহের কোনো অংশ বা সম্পূর্ণ দেহ অবশ হয়ে যায়। ফলে সেই শরীরের আক্রান্ত অংশের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এতে করে সেই অংশ অবশ হয় এবং নড়াচড়ায় অক্ষম হয়ে যায়। ঠিক কোন কোন কারণে এই রোগ হয়ে থাকে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে আসছে শ্যামলীর ঢাকা পেইন ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (ডিপিআরসি)। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডিপিআরসির বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান। তার পরামর্শ হুবহু তুলে ধরা হলো:

প্যারালাইসিস কথাটা শুনলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আসলে যেকোনো সুস্থ মানুষও হঠাৎ প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ বা সারা বিশ্বে প্যারালাইসিসের অন্যতম কারণ আমরা দেখেছি স্ট্রোক। আর এই স্ট্রোক হচ্ছে মস্তিষ্কের একটা রোগ যা থেকে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও যদি কয়েকদিন যাবত কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা বা মাংসপেশির ব্যথা থাকে, কিন্তু যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট করা না হয় তাহলে ধীরে ধীরে একদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে।

প্যারালাইজড একসঙ্গে সব হাত-পা হবে এমনটা নয়। যেকোনো একটা হাত, একটা পা বা মুখে হতে পারে। আমরা প্রায় সময়ই বেলস পালসি বা মুখ বেঁকে যাওয়া দেখে থাকি।

এছাড়া একটা বাচ্চার জন্মের পরেও প্যারালাইসিস গ্রস্থ বা জন্মগত সমস্যা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে। আবার একজন সুস্থ ৫০ থেকে ৬০ বছরের মানুষও হঠাৎ করে প্যারালাইজড হতে পারে। এটাকেই আমরা বলছি স্ট্রোক।

তাছাড়া বিভিন্ন রোগ যেমন মোটর নিউরন ডিজিজ ও নার্ভের ডিজঅর্ডার অর্থাৎ স্নায়বিক ব্যাধি থেকে হওয়া প্যারালাইসিস কিন্তু একদিন হয় না এটি ধীরে হতে থাকে।

এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাল ব্যাকটেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু জ্বর এবং করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা প্রচুর প্যারালাইজড রোগী দেখতে পাচ্ছি।

প্যারালাইসিস হঠাৎ করেও হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য রোগ থেকেও প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। আবার বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব থেকেও প্যারালাইসিস হতে পারে।

প্যারালাইসিস হলে করণীয়

হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়লে যদি কেউ হাত পা নাড়াতে না পাড়ে তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। তাহলে যদি মুখ থেকে লালা পড়ে সেটা আর তার শ্বাসনালিতে যাবে না। এরপর যদি দেখা যায় এটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, রোগী অজ্ঞান থাকে তাহলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

এসব ক্ষেত্রে রোগীদের প্রেসার, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তাই সচেতনতা খুবই জরুরি। প্যারালাইসিস হয়ে গেলে প্রস্রাব-পায়খানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেজন্য ট্রেনিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর হাইজিন, খাবার-দাবার, সবকিছু মেইনটেন করতে হবে।

অনেক সময় এসব রোগীর ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে আবার রিকারেন্ট স্ট্রোক হয়। তাই এসব সম্পর্কে শিক্ষা ও জনসচেতনতা দরকার।

প্যারালাইসিস হয়ে গেলে অ্যাডভান্স চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। আমরা বাসায় রোগীদের ফেলে রাখব না।

আমরা চেষ্টা করব পুনর্বাসন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা নেওয়ার। এক্ষেত্রে আমরা ইলেক্ট্রো থেরাপি দিই, হসপিটালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিই এবং বিভিন্ন এক্সারসাইজ করাই। রিহ্যাবিলিটেশন টিমওয়ার্কের মাধ্যমে প্যারালাইসিস রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

DPRC paralysis treatment

বাত ব্যথা ও প্যারালাইসিসের সর্বাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসায়

বাত-ব্যথা একটি অপ্রীতিকর অনুভূতি এবং মানসিক অভিজ্ঞতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যথাকে একটি রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। একটা সময় ছিল, যখন মানুষ সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার অভাবে বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতো কিংবা পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করত। তবে, বিজ্ঞানের সবকটি শাখার উন্নতির ধারাবাহিকতায় থেমে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানও।

প্যারালাইসিস এর কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখাটি উন্নয়নের অবদানে বাত-ব্যথা প্যরালাইসিস আক্রান্ত রোগীদের কমেছে মৃত্যু হার, মানুষ ফিরে পাচ্ছে স্বাভাবিক জীবন, ফিরে পাচ্ছে তার মুখের হাসি। দূর হয়েছে অভিশাপ নামের ভ্রান্ত ধারণা। সেই শাখাটির নাম:

“ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা”

স্বাস্থ্যের ৪ টি অঙ্গ:

  1. প্রতিরোধ
  2. প্রতিকার
  3. আরোগ্য
  4. পুনর্বাসন

রোগীদের অভিজ্ঞতা

কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার জাহানারা বেগম ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রেন স্ট্রোক করে বাম পাশে প্যারালাইসিস হন। কুমিল্লায় থেরাপি নেওয়ার পরও উন্নতি হয়নি। এরপর ডিপিআরসিতে এসে সঠিক চিকিৎসায় উন্নতি হয়। বিস্তারিত ভিডিও:

সঞ্জয় চৌধুরী, ফেনী জেলার রোগী, ২০২৩ সালের জুনে GBS আক্রান্ত হন। প্রথমে প্লাজমা থেরাপি ও পরে বাসায় ছয় মাস ফিজিওথেরাপি নিয়েও ব্যালেন্স পেতেন না। ডিপিআরসিতে চিকিৎসার পর উন্নতি হয়। বিস্তারিত ভিডিও:

জরিনা বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া — স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস রোগী হিসেবে ডিপিআরসিতে চিকিৎসা নিয়ে উন্নতি লাভ করেছেন। আরও রোগীর ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

জরিনা বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রোগী স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিসের কারণে আমাদের এখানে এসে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ট্রিটমেন্টের বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারবেন নিচের ভিডিও থেকে:

SPAOA রোগে প্রায় প্যারালাইসিস এবং পঙ্গু রোগী হাসপাতালে কেমন চিকিৎসা নেন, সে বিষয়ে জানতে এই ভিডিও দেখতে পারেন:

ডিপিআরসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বাত ব্যথা প্যারালাইসিস ও রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ্ প্রধান বলেন, ‘এখন অনেকেই বিদেশ থেকে এসে ডিপিআরসিতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ রোগী বিনা অপারেশনে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে—আমরা এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। যারা এখনও বিদেশে চিকিৎসার কথা ভাবছেন তাদের বলব, বিদেশ যাওয়ার আগে অন্তত একবার ডিপিআরসিতে আসুন।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

2 × two =