নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

পোস্ট টি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় এবং মহিলাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এটি একটি মরণব্যাধি। সাধারণত ৪০ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মহিলাদের মধ্যে এটির প্রকোপ বেশি। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন ছয় হাজার ৬০০। এটি একটি বিশাল সংখ্যা । জরায়ুর এই অংশে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তনের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। এই পরিবর্তনের জন্য যে কারণগুলোকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অল্প বয়সে বিয়ে করা, অল্প বয়সে সন্তান নেয়া।

এ রোগের অন্য আর একটি কারণ হলো এ ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণ, সংক্ষেপে এইচপিভি। প্রথম দিকে এই ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। পরবর্তীকালে কয়েকটি উপসর্গ সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, মোনোপজের পরও রক্তপাত, এই রোগের অস্তিত্ব জানান দেয়। তাই এইসব লক্ষণ দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এই রোগের ডায়াগনসিস নিশ্চিত হওয়ার জন্য জরায়ুর মুখের ক্ষত জায়গা থেকে মাংস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। সেই সাথে চিকিৎসার ধরণ ঠিক করার জন্য রোগীকে পরীক্ষা করে এই ক্যান্সারকে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করা হয়।

আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন তথ্য জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে সাথেই থাকুন

জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের ধাপ নির্ণয় করে তারপর দেয়া হয়। চিকিৎসাগুলো হলো সার্জারি, রেডিওথেরাপি বা ক্যামোথেরাপি। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্টেজে সার্জারি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। কিন্তু পরবর্তী স্টেজে রেডিওথেরাপি প্রথম পছন্দ। ক্যান্সার যখন আরো বেশি অ্যাডভান্সড হয়ে যায়, অর্থ্যাৎ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সে অবস্থায় উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। সার্জারি বা রেডিওথেরাপি যে চিকিৎসাই দেয়া হোক না কেন, নিয়মিত ফলোআপ জরুরি তিন মাস অন্তর প্রথম বছর, ছয় মাস অন্তর দ্বিতীয় বছর এবং এরপর এক বছর অন্তর অন্তর ফলোআপ করাতে হবে। একটু সচেনতা থাকলেই এই রোগ এবং এর কারণে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আশার কথা হলো এ রোগটির একটি পূর্বাবস্থা থাকে, মেডিক্যালের ভাষায় যাতে বলা হয় সিআইএন। এই সিআইএন থেকে আগ্রাসী পর্যায়ে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ২০-২৫ বছর। অর্থ্যাৎ জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের এই পূর্বাবস্থা কে আগেই নির্র্ণয় করা সম্ভব, যদি মহিলারা একটু সচেতন হন এবং ডাক্তারের পরামর্শের জন্য আসেন এবং এর চিকিৎসাও সম্ভব। এই পরীক্ষাগুলো হচ্ছে- ভায়া এখানে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে জরায়ুর মুখের পরীক্ষা করা হয়। এটি স্বল্প খরচে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের সব উজেলা হাসপাতালে হচ্ছে। প্যাপস স্মেয়ার এখানে জরায়ুর মুখের রস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

তাছাড়া অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে একটি উন্নতমানের অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জরায়ুর মুখ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা যেতে পারে তাকে কলপোস্পপি বলা হয়। উপরি উক্ত পরূীক্ষার মাধ্যমে যদি কোনো মহিলার ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা পাওয়া যায় তবে সেটার চিকিৎসা দেয়া হয়। ওপরের সবগুলো পরীক্ষাই হলো স্ক্রিনিং টেস্ট। সব মহিলাকে এসব পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। ৩০ বছর থেকে প্রতি তিন বছর পরপর সব মহিলার করা উচিত।

তবে বর্তমানে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়েছে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস যেহেতু ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের কারণ এবং এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিনেশন ৭০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই এই ভ্যাক্সিন জরায়ুর মুখের ক্যান্সার উল্লেখ্যযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে। ১০ বছরের পর থেকেই এই ভ্যাক্সিন নেয়া যায়। এর তিনটি ডোজ আছে। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ দেয়া হয়। তবে একবার ক্যান্সার হয়ে গেলে ভ্যাক্সিনের আর কোনো ভূমিকা থাকে না। জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

10 − 6 =